নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শনিবার অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের প্রায় ৫০ লক্ষ সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারীদের দাবি ছিল, সপ্তম বেতন কমিশনের পর নতুন কমিশন গঠন করে বেতন, ভাতা এবং পেনশনের কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা হোক। অবশেষে সেই দাবি পূরণ করল কেন্দ্র। সরকার জানিয়েছে, এই কমিশন এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে এবং কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের বেতন, ভাতা, পেনশন ও পরিষেবা শর্তাবলী নিয়ে সমগ্র পর্যালোচনা করবে।
সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, ৮ম বেতন কমিশন একটি অস্থায়ী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে, যেখানে একজন চেয়ারপার্সন, একজন পার্ট-টাইম সদস্য এবং একজন সদস্য-সচিব থাকবেন। কমিশনকে ১৮ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে তারা অন্তর্বর্তী রিপোর্টও দিতে পারবেন, যাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করা যায়।
কেনিয়ায় মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা, ১২ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ভারসাম্যের ওপর গুরুত্ব
সরকার স্পষ্ট করেছে যে, কমিশন তার সুপারিশ তৈরি করার সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজকোষীয় শৃঙ্খলা, উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থের প্রাপ্যতা এবং পেনশন ব্যবস্থার ভার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বিবেচনা করবে। এছাড়াও, এই রিপোর্টের প্রভাব রাজ্য সরকারের আর্থিক কাঠামোর উপর কীভাবে পড়বে, তা-ও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।
প্রতিটি কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন সাধারণত প্রতি দশ বছর অন্তর গঠন করা হয়। এখন পর্যন্ত সাতটি কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। শেষ অর্থাৎ সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। সেই ধারা অনুসারে, ৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হতে পারে ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে।
কর্মচারীদের জন্য কী পরিবর্তন আসতে পারে
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী বেসিক পে, মহার্ঘ ভাতা (DA), বাড়িভাড়া ভাতা (HRA) এবং পেনশন কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বেতনবৃদ্ধি ও পেনশন উন্নয়নের বিষয়টি কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মানে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের প্রভাব
এই সিদ্ধান্ত শুধু কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্যই নয়, বরং দেশের প্রায় সব রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের ওপরও প্রভাব ফেলবে। কারণ বেশিরভাগ রাজ্যই কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ কিছুটা পরিবর্তন করে নিজেদের কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করে থাকে।
একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, “এই সিদ্ধান্তটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক দিক থেকে নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সরকারের প্রতি কর্মচারী মহলের আস্থা পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।”
লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে প্রভাব
এই ঘোষণার ফলে দেশের প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগী প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন। এছাড়াও, বেসরকারি ও সরকারি খাতের মধ্যে বেতন কাঠামোর ফারাক কিছুটা কমানোর দিকেও নজর দেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে, ৮ম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের অনুমোদন শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয় এটি কর্মচারীদের আর্থিক স্থিতি ও জীবনের মানোন্নয়নের দিকেও এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।


