বর্তমানে অনেকেই নানা কারণে ব্যক্তিগত ঋণ, হোম লোন বা ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধে পিছিয়ে পড়েন। এটি হতে পারে হঠাৎ কোনও আর্থিক সংকট, চাকরি হারানো বা সঠিকভাবে অর্থ পরিচালনার অভাবে। একাধিক কিস্তি বা বিল সময়মতো না পরিশোধ করলে তার প্রভাব সরাসরি পড়ে আপনার ক্রেডিট স্কোরে (Credit Score)। ফলে ভবিষ্যতে ব্যাংক বা আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় উচ্চ সুদের হার, অতিরিক্ত গ্যারান্টার বা নথিপত্রের দাবিও করা হয়।
তবে চিন্তার কিছু নেই। নিম্ন ক্রেডিট স্কোর মানেই আর্থিক জীবনের শেষ নয়। যেমন ভালো স্কোর গড়ে ওঠে নিয়মিত ভালো আর্থিক ব্যবহারের মাধ্যমে, তেমনই খারাপ স্কোরও ধীরে ধীরে শুধরানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপ, সময় মতো ব্যবস্থা এবং কিছুটা ধৈর্য।
কিস্তি মিস করলে কী হয়?
যখনই আপনি কোনও EMI বা ঋণের টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, তখন সংশ্লিষ্ট ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সেই তথ্য জানিয়ে দেয় ক্রেডিট ব্যুরোগুলিকে (যেমন CIBIL, Experian, Equifax ইত্যাদি)। এর ফলে আপনার স্কোর কমে যায় এবং ভবিষ্যতে আপনি ঋণ চাইলে ব্যাংক বা NBFC গুলি আপনাকে ‘রিস্কি’ গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করে।
এমনকি, যদি ঋণ মঞ্জুরও হয়, তা হয় অনেক বেশি সুদের হারে অথবা অতিরিক্ত শর্তসাপেক্ষে। এই ঋণ সংক্রান্ত রেকর্ড আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যায়, যা আপনাকে ভবিষ্যতে সমস্যায় ফেলতে পারে।
তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা যা আপনি নিতে পারেন:
১. বকেয়া টাকা পরিষ্কার করুন
প্রথমেই যেটা করতে হবে, তা হল আপনার সমস্ত বকেয়া বিল বা কিস্তির টাকা মেটানো। যদি পুরো টাকা একসঙ্গে মেটানো সম্ভব না হয়, তবে ঋণদাতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ‘সেটেলমেন্ট’ করুন। যদিও ‘settled’ স্ট্যাটাস স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে পুরোপুরি অনাদায়ী থাকা থেকে তা অনেক ভালো।
২. ঋণ পুনর্গঠন করুন
যদি আগে থেকেই বুঝতে পারেন যে কিস্তি দেওয়া কঠিন হবে, তাহলে ঋণদাতার সঙ্গে কথা বলে আপনার ঋণের মেয়াদ বাড়াতে বা EMI কমাতে বলুন। এই প্রক্রিয়াকে বলে loan restructuring। এতে প্রাথমিকভাবে স্কোর কমতে পারে, তবে সময়মতো কিস্তি দিলে স্কোর ধীরে ধীরে আবার বাড়বে।
ধাপে ধাপে স্কোর পুনর্গঠনের কৌশল:
১. সময়মতো সব বিল ও EMI পরিশোধ করুন
এই একটি অভ্যাসই আপনার স্কোরকে ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে দিতে পারে। ভুলে না যাওয়ার জন্য অটো-পেমেন্ট চালু করুন বা স্মার্টফোনে রিমাইন্ডার সেট করে রাখুন।
২. ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সংযম রাখুন
আপনার কার্ডের মোট লিমিটের ৩০% এর বেশি ব্যয় না করাই ভালো। এতে প্রমাণ হয় আপনি দায়িত্বপূর্ণভাবে ঋণ ব্যবহার করছেন। যেমন, যদি আপনার ক্রেডিট লিমিট ₹৫০,০০০ হয়, চেষ্টা করুন ₹১৫,০০০-এর বেশি ব্যয় না করতে।
৩. সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড বা ছোট ঋণ ব্যবহার করুন
যদি আপনার স্কোর খুব কম থাকে, তাহলে secured credit card ব্যবহার শুরু করুন। এটি সাধারণত একটি ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ইস্যু করা হয়। সময়মতো টাকা মিটিয়ে দিন, দেখবেন স্কোর বাড়ছে।
৪. একসঙ্গে একাধিক ঋণের আবেদন করবেন না
বারবার ঋণের আবেদন করলে প্রতিবার আপনার credit inquiry হয়, যা স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে আপনার আর্থিক চাহিদা অতিরিক্ত বলে মনে হয়।
৫. নিয়মিত ক্রেডিট রিপোর্ট পরীক্ষা করুন
অনেক সময় দেখা যায়, কোনও পুরনো ঋণ ‘paid’ হয়েও ‘active’ হিসেবে রিপোর্টে থেকে যায়, বা ভুলবশত অন্য কারও ঋণের তথ্য আপনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। তাই প্রতি ৩-৬ মাস অন্তর নিজের ক্রেডিট রিপোর্ট একবার করে পরীক্ষা করা জরুরি।
আপনি CIBIL, Experian, Equifax অথবা CRIF-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে একবারে বিনামূল্যে রিপোর্ট দেখতে পারেন। যদি ভুল তথ্য পান, তাহলে অনলাইনেই dispute রেজিস্টার করতে পারেন।
নিম্ন ক্রেডিট স্কোরের কারণে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। ভুল হতেই পারে, কিন্তু ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। ধৈর্য ও নিয়মিত আর্থিক সচেতনতা আপনাকে আবারও একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর উপহার দিতে পারে।
পরামর্শ: যাদের স্কোর 650-এর নিচে নেমে গেছে, তারা চাইলে একটি ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার বা ক্রেডিট কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন।