Life Insurance Premium: জীবন অনিশ্চিত—এই সত্য আমরা অস্বীকার করতে পারি না। একাধিক আর্থিক দায়বদ্ধতা সামাল দিতে গিয়ে আমাদের প্রিয়জনদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের অনিশ্চয়তার মুখে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জীবন বিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুরক্ষা বলয়। তবে অনেকেই উচ্চ প্রিমিয়ামের ভয়ে জীবন বিমা নিতে পিছিয়ে যান। অথচ কিছু সহজ কৌশল মেনে চললে বড় ধরনের কভারেজ পাওয়া যায় অনেক কম খরচে।
চলুন দেখে নিই জীবন বিমার খরচ কমানোর ৭টি কার্যকরী উপায়—
১. অল্প বয়সে বিমা করুন, বেছে নিন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা
অল্প বয়সে বিমা করালে প্রিমিয়ামও থাকে অনেক কম। কারণ বিমা কোম্পানিগুলো অল্পবয়সী গ্রাহকদের ঝুঁকির পরিমাণ কম বলে ধরে নেয়। তদুপরি, দীর্ঘ মেয়াদি পলিসি বেছে নিলে মোট খরচটা বহু বছরের মধ্যে ছড়িয়ে যায়, ফলে বার্ষিক প্রিমিয়ামও হয় তুলনামূলকভাবে কম। ৩০ বছরের টার্ম প্ল্যান অনেক সময় ১৫ বছরের প্ল্যানের তুলনায় প্রতি বছরে কম খরচে কভারেজ দেয়।
২. জটিল বিমা পলিসির বদলে টার্ম ইনসিওরেন্স বেছে নিন
টার্ম ইনসিওরেন্স একেবারে খাঁটি সুরক্ষা পরিকল্পনা, যেখানে কোনও সঞ্চয় বা বিনিয়োগের উপাদান থাকে না। তাই এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা। অন্যদিকে, এন্ডাউমেন্ট বা মানি-ব্যাক পলিসিতে সঞ্চয় জুড়ে দেওয়ায় খরচও বেড়ে যায়। পরিবারকে আর্থিক সুরক্ষা দেওয়াই যদি আপনার মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তবে সরল টার্ম প্ল্যানই সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায়।
৩. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন
আপনার স্বাস্থ্য যত ভালো থাকবে, বিমা কোম্পানিগুলো ততই কম প্রিমিয়াম ধার্য করবে। ধূমপান পরিহার, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং স্ট্রেসমুক্ত জীবন যাপন করলে আপনি কম প্রিমিয়ামে ভালো কভারেজ পেতে পারেন। বিমা নেওয়ার আগে মেডিক্যাল চেকআপ করিয়ে নিলে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পরিষ্কার হবে এবং প্রিমিয়াম কম হতে পারে।
৪. বার্ষিক প্রিমিয়াম দিন, অপ্রয়োজনীয় রাইডার এড়িয়ে চলুন
প্রিমিয়াম বার্ষিক ভিত্তিতে দিলে প্রসেসিং ফি বাঁচে, ফলে মোট খরচ কমে যায়। অনেকেই নানা রকম রাইডার (যেমন: ক্রিটিক্যাল ইলনেস কভার) যুক্ত করেন, যা প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেয়। শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় রাইডারই নিন, নয়তো একটি মৌলিক টার্ম প্ল্যানই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিকল্প।
৫. অনলাইনে তুলনা করুন ও নিয়মিত পলিসি পর্যালোচনা করুন
বিভিন্ন বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম এবং সুবিধা এক নয়। তাই অনলাইনে বিভিন্ন কোম্পানির অফার তুলনা করে সবচেয়ে উপযোগী পলিসি বেছে নেওয়া জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নতুন কোম্পানি কম প্রিমিয়ামে ভালো কভারেজ দিচ্ছে। যদিও IRDAI টার্ম প্ল্যান পোর্ট করার বিষয়ে স্পষ্ট নিয়ম দেয়নি, তবুও কিছু কোম্পানি এটি সমর্থন করে। এছাড়া, আপনার আর্থিক অবস্থা বদলালে—যেমন ঋণ শোধ হওয়া বা সঞ্চয় বেড়ে যাওয়া—পলিসি রিভিউ করে কভারেজ আপডেট করলে খরচ কমে যেতে পারে।
৬. অফিস বা গ্রুপ ইনসিওরেন্স প্ল্যানের সুবিধা নিন
বিভিন্ন কোম্পানি কর্মীদের জন্য গ্রুপ ইনসিওরেন্স প্ল্যান দেয়, যা অনেক কম খরচে ভালো কভারেজ দেয়। এই ধরনের পলিসি ব্যক্তিগত বিমার পরিপূরক হিসাবে কাজ করতে পারে। আপনি যদি একটি সাধারণ টার্ম প্ল্যান নেন এবং সঙ্গে অফিসের গ্রুপ কভারেজ রাখেন, তাহলে মোট প্রিমিয়াম কম রেখে ভালো কভার পেতে পারেন।
৭. ক্রেডিট স্কোর ভালো রাখুন, পলিসি ল্যাপ্স এড়িয়ে চলুন
বেশ কিছু বিমা কোম্পানি আপনার ক্রেডিট স্কোরকেও প্রিমিয়াম নির্ধারণের সময় বিবেচনা করে থাকে। একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর আপনার আর্থিক দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দেয়, যার ফলে আপনি কম প্রিমিয়ামে পলিসি পেতে পারেন। পাশাপাশি, পলিসি ল্যাপ্স হলে তা পুনরায় চালু করার খরচ অনেক বেড়ে যায়, কারণ তখন আপনার বয়স বেড়ে যায় ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ে।
জীবন বিমার প্রিমিয়াম কমাতে গেলে পরিকল্পনা ও সচেতনতার বিকল্প নেই। উপরের টিপসগুলো মেনে চললে আপনি ও আপনার পরিবার সাশ্রয়ী মূল্যে পেতে পারেন দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা। নিয়মিত আপনার প্রয়োজন ও আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী পলিসি রিভিউ করুন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।