অবসর পরিকল্পনায় এই ৭টি অভ্যাস মারাত্মক ভুল! জানুন বিস্তারিত

অবসর পরিকল্পনা (Retirement Planning) একসময় ছিল খুবই সরল। ৯০-এর দশকে এর মূল মন্ত্র ছিল—নিয়মিত সঞ্চয় করুন, টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে রাখুন, বাড়ি বানান আর অবসর ভাতা…

retirement planning india

অবসর পরিকল্পনা (Retirement Planning) একসময় ছিল খুবই সরল। ৯০-এর দশকে এর মূল মন্ত্র ছিল—নিয়মিত সঞ্চয় করুন, টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে রাখুন, বাড়ি বানান আর অবসর ভাতা বা সন্তানের সহায়তার উপর নির্ভর করুন। বহু পরিবার এই ফর্মুলাই মেনে চলত। কিন্তু আজকের দিনে এসে দেখা যাচ্ছে, সেই “সোনার নিয়মগুলো” অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে।
আজকের বাস্তবতায় মূল সমস্যা হলো—

  • দ্রুত বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতি
  • দীর্ঘায়ু জীবন
  • স্বাস্থ্যসেবার অস্বাভাবিক ব্যয়
  • ফিক্সড ইনকামের রিটার্ন কমে যাওয়া

এগুলো পুরনো চিন্তাধারাকে অকার্যকর করে তুলছে। তাই অবসর পরিকল্পনায় নতুন কৌশল গ্রহণ না করলে আর্থিক ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে না।
চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই সাতটি পুরনো নিয়ম, যেগুলো আজ আর কাজ করছে না, এবং এর বদলে কী করা উচিত—

   

১. ৯০-এর দশকে ব্যাংকের এফডি সুদের হার ছিল ১২-১৪%। শুধু সুদেই সংসার চলত। কিন্তু আজ সুদ নেমে এসেছে ৬-৭%-এ, যা অনেক সময় মুদ্রাস্ফীতির চেয়েও কম।
কি করবেন? এফডিকে কেবল স্থিতিশীলতার হাতিয়ার ভাবুন, প্রধান আয়ের উৎস নয়। ইকুইটি, মিউচুয়াল ফান্ড, ডেট ফান্ডের মধ্যে বৈচিত্র্য আনুন এবং মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার মতো রিটার্নের উপর জোর দিন।

২. আগে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে আজীবন পেনশন পাওয়া যেত। কিন্তু আজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পেনশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
কি করবেন? নিজের অবসরভাতা নিজেই তৈরি করুন। ইপিএফ, এনপিএস, মিউচুয়াল ফান্ডে নিয়মিত বিনিয়োগ করুন। ধরে নিন বাইরের কোনও ভরসা থাকবে না, সম্পূর্ণ স্বনির্ভর পরিকল্পনা তৈরি করুন।

৩. আগে রিয়েল এস্টেট থেকে ভাড়া পাওয়া যেত ভালো হারে। কিন্তু আজ ভাড়ার হার তুলনামূলক কম, উপরন্তু রক্ষণাবেক্ষণ, ট্যাক্স এবং খালি থাকার ঝুঁকি বড় সমস্যা। বাড়ি দ্রুত নগদে পরিণত করাও কঠিন।
কি করবেন? বাড়ি হোক সম্পদের একটি অংশ, কিন্তু মূল আয়ের উৎস নয়। মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, অ্যানুইটির মতো লিকুইড সম্পদ রাখুন যাতে জরুরি সময়ে সহজে ব্যবহার করতে পারেন।

৪. ৯০-এর দশকে যৌথ পরিবার ছিল, সন্তানরা বাবা-মাকে দেখাশোনা করত। এখন অধিকাংশ সন্তান কাজের প্রয়োজনে অন্য শহর বা দেশে চলে যায়, এবং তাদেরও অনেক আর্থিক চাপ থাকে।
কি করবেন? সন্তানদের সাহায্যকে বোনাস ভাবুন, ভরসা নয়। নিজস্ব অবসর তহবিল গড়ে তুলুন, স্বাস্থ্যবিমা নিন এবং আর্থিক স্বাধীনতা বজায় রাখুন।

৫. আগে সরকারি হাসপাতাল ও কম খরচের চিকিৎসায় চলে যেত। কিন্তু এখন স্বাস্থ্য খরচ প্রতি বছর ১২-১৪% হারে বাড়ছে। একবার বড় রোগ হলেই গোটা সঞ্চয় শেষ হয়ে যেতে পারে।
কি করবেন? কম বয়সেই হেলথ ইন্স্যুরেন্স কিনুন, আলাদা হেলথ ইমার্জেন্সি ফান্ড রাখুন। প্রতি বছর কভারেজ রিভিউ করুন এবং চিকিৎসা ব্যয়ের বাস্তবতা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করুন।

Advertisements

৬. ৯০-এর দশকে গড় আয়ু ছিল ৬০-৬২ বছর। তাই ১০-১২ বছরের অবসর পরিকল্পনাই যথেষ্ট মনে হতো। এখন অনেকেই ৮০-৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন।
কি করবেন? অন্তত ২৫-৩০ বছরের অবসর আয় ধরে পরিকল্পনা করুন। দীর্ঘমেয়াদি ইকুইটি বিনিয়োগ, এনপিএস, স্থায়ী ঋণপত্র সব মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও তৈরি করুন।

৭. আগে ৬০ মানেই অবসর। কিন্তু এখন অনেকেই পার্ট-টাইম কাজ করেন, ফ্রিল্যান্স করেন, বা প্যাশন অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যান। তাই কেবল বয়সের ভিত্তিতে অবসর ধরা ঠিক নয়।

কি করবেন? আপনার জীবনধারা ও চাহিদা অনুযায়ী অবসর পরিকল্পনা করুন। কখন কাজ ছাড়বেন, কত টাকা লাগবে, কেমন জীবন চান—এসব ভেবে সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও উইথড্রয়াল প্ল্যান করুন।

৯০-এর দশকের অবসর পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল একেবারে আলাদা সময়ে—উচ্চ এফডি হার, কম খরচ, কম আয়ুষ্কালের প্রেক্ষাপটে। আজকের বাস্তবতায় সেই নিয়ম মানা মানে নিঃশব্দে নিজের ভবিষ্যৎ বিপদে ফেলা।

পুরনো অভ্যাস ঝেড়ে ফেলুন, নতুন বাস্তবতা মেনে পরিকল্পনা করুন। তাহলেই আপনার অবসর হবে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং নিশ্চিন্ত।