মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকি কমাতে চান? মেনে চলুন এই ৬টি নিরাপদ বিনিয়োগ কৌশল

আর্থিক সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী তহবিল গঠনের লক্ষ্যে মিউচুয়াল ফান্ডে (Mutual Fund) বিনিয়োগ আজকের দিনে সাধারণ ও জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই…

Mutual Fund Direct Vs Regular Plan: What's Better And How To Choose

আর্থিক সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী তহবিল গঠনের লক্ষ্যে মিউচুয়াল ফান্ডে (Mutual Fund) বিনিয়োগ আজকের দিনে সাধারণ ও জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই আকর্ষণীয় বিনিয়োগ মাধ্যমটি ঝুঁকিমুক্ত নয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজারের ওঠানামা—এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একাধিক ঝুঁকি। তবে যথাযথ সচেতনতা ও কৌশলের মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলি সামলানো সম্ভব। নিচে আলোচনা করা হলো মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগে প্রধান ঝুঁকিসমূহ এবং সেগুলি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়—

১. বাজার ঝুঁকি (Market Risk):
মিউচুয়াল ফান্ড মূলত স্টক মার্কেট বা বন্ড মার্কেটের সঙ্গে জড়িত, যা নানা প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং সুদের হারের পরিবর্তন—সবই বাজারকে প্রভাবিত করে।
যদি বাজারে স্থিতিশীলতা থাকে, তবে মিউচুয়াল ফান্ড থেকেও লাভজনক রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু যদি বাজারে বড় ধরণের পতন ঘটে, তাহলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখেও পড়তে হতে পারে। এই ঝুঁকি এড়াতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ এবং বাজার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

   

২. ঘনত্ব ঝুঁকি (Concentration Risk):
যদি কেউ একটি নির্দিষ্ট সেক্টরে বা শিল্পে সমস্ত বিনিয়োগ কেন্দ্রীভূত করেন, তাহলে সেই সেক্টরের সমস্যা বা পতনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। একে ঘনত্ব ঝুঁকি বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি কেবলমাত্র আইটি সেক্টরের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করেন এবং সেই সেক্টরে হঠাৎ মন্দা আসে, তবে বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। এর সমাধান হচ্ছে বিনিয়োগের বৈচিত্র্য (Diversification)—যা বিভিন্ন সেক্টরে ও বিভিন্ন প্রোডাক্টে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেয়।

৩. সুদের হারের ঝুঁকি (Interest Rate Risk):
এই ঝুঁকি মূলত ঋণভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যখন বাজারে সুদের হার বেড়ে যায়, তখন বন্ডের দাম কমে যায়, ফলে বিনিয়োগকারীকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
এই ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হিসেবে অনেক বিশেষজ্ঞ ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন, যেগুলিতে তুলনামূলকভাবে সুদের হারের ওঠানামার প্রভাব কম পড়ে।

৪. মুদ্রাস্ফীতি ঝুঁকি (Inflation Risk):
মুদ্রাস্ফীতি যদি বিনিয়োগের রিটার্নের চেয়ে বেশি হয়, তবে প্রকৃত (real) রিটার্ন নেতিবাচক হয়ে যায়। মানে, আপনি যেটুকু রিটার্ন পেলেন, তার প্রকৃত মূল্য কমে গেল। তাই এমন ফান্ড বেছে নেওয়া জরুরি, যেগুলি দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় বেশি রিটার্ন দিতে সক্ষম।

৫. তরলতার ঝুঁকি (Liquidity Risk):
সব মিউচুয়াল ফান্ড সমানভাবে তরল নয়। কিছু ফান্ড এমন কিছু সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করে যেগুলি সহজে বিক্রি করা যায় না। ফলে যদি হঠাৎ টাকা তোলার প্রয়োজন হয়, তখন সেগুলি বিক্রি করে টাকা তোলা কঠিন হয়ে যায়।
এই ঝুঁকি এড়াতে বিনিয়োগের আগে ফান্ডের পোর্টফোলিও বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত যে তাদের সম্পদ কতটা তরল বা বিক্রয়যোগ্য।

Advertisements

৬. ক্রেডিট ঝুঁকি (Credit Risk):
এই ঝুঁকি ঋণভিত্তিক (debt) মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখানে ফান্ড ম্যানেজার বিভিন্ন কোম্পানির ইস্যু করা বন্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ করেন। যদি কোনও কোম্পানি তাদের সুদ বা মূল টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীর ক্ষতি হয়।
এই ঝুঁকি কমাতে বিনিয়োগকারীকে উচ্চ ক্রেডিট রেটিংপ্রাপ্ত সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা ফান্ড বেছে নেওয়া উচিত।

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মিউচুয়াল ফান্ড কেন বেছে নেবেন?
ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ অনেকের জন্য লাভজনক হতে পারে কারণ:
এটি দীর্ঘমেয়াদে বাজারকে পরাজিত করতে সক্ষম।
একজন অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজার সম্পদ পরিচালনা করেন।
ছোট অঙ্ক থেকে বিনিয়োগ শুরু করা যায়।
কর সাশ্রয়ের সুযোগ (ELSS এর মাধ্যমে) পাওয়া যায়।

ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল:
বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও গঠন করুন—একাধিক সেক্টর ও ইনভেস্টমেন্ট ক্লাসে বিনিয়োগ করুন।
স্মার্ট অ্যাসেট অ্যালোকেশন করুন—বয়স, লক্ষ্য ও ঝুঁকির ক্ষমতা অনুযায়ী সম্পদ বণ্টন করুন।
বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজারের পরামর্শ নিন।
নিয়মিত রিভিউ ও রিব্যালান্স করুন—বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী ফান্ড পরিবর্তন করুন।

মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকলেও তা একেবারে এড়ানো যায় না। কিন্তু জ্ঞানের সঙ্গে বিনিয়োগ করলে ও সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং কাঙ্ক্ষিত লাভ অর্জন সম্ভব। তাই আতঙ্কিত না হয়ে, পরিকল্পনামাফিক বিনিয়োগ করুন এবং ধৈর্য ধরে আপনার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।