শিশুর ভবিষ্যতের সুরক্ষায় ৬টি লাভজনক বিনিয়োগ পরিকল্পনা

শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা শুধুই ভালো স্কুলে ভর্তি বা বিদেশে পড়াশোনার খরচের কথা ভাবা নয়—এটি একটি সুপরিকল্পিত আর্থিক কৌশল যা আজ থেকেই শুরু করা উচিত।…

6 Profitable Investment Plans to Secure Your Child’s Future

শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা শুধুই ভালো স্কুলে ভর্তি বা বিদেশে পড়াশোনার খরচের কথা ভাবা নয়—এটি একটি সুপরিকল্পিত আর্থিক কৌশল যা আজ থেকেই শুরু করা উচিত। বর্তমান সময়ে শিক্ষার খরচ, কোচিং, এক্সট্রা কারিকুলার ক্লাস এবং বিদেশে পড়াশোনা—সব কিছুরই খরচ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এ ধরনের বড় খরচ সামলাতে হলে আগে থেকেই সঞ্চয় (Investment Plans) শুরু করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

কেন এখনই শুরু করা জরুরি?
বিনিয়োগ বা সঞ্চয় যত আগে শুরু করা যায়, ভবিষ্যতের চাপ ততটাই কম হয়। কম বয়সে যদি দীর্ঘমেয়াদে কিছু টাকা নিয়মিত সঞ্চয় করা যায়, তাহলে সেটি সময়ের সঙ্গে সুদে-আসলে বেড়ে একটি বড় অঙ্কে পরিণত হয়। আর হঠাৎ কোনো জরুরি পরিস্থিতিতেও আপনি হিমশিম খাবেন না।
বিনিয়োগের আগে কী কী ভাবা জরুরি?

   

সঠিক বিনিয়োগ কৌশল তৈরির আগে নিচের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা জরুরি—
১. স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
আপনি কোন উদ্দেশ্যে সঞ্চয় করছেন—বাচ্চার স্কুল/কলেজ, বিদেশে পাঠানো, ভবিষ্যতে ব্যবসা শুরু করার সাহায্য, কিংবা ঘর কেনার জন্য—সেটা স্পষ্টভাবে ঠিক করে নিন। লক্ষ্য অনুযায়ীই বিনিয়োগের ধরন বেছে নিতে হবে।

২. সময়সীমা নির্ধারণ করুন:
আপনার বাচ্চার বয়স এখন কত এবং কবে টাকার দরকার হবে—তা নির্ধারণ করে বুঝুন আপনি দীর্ঘমেয়াদি না স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগে যাবেন। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ঝুঁকি নেওয়া যায়, কিন্তু স্বল্পমেয়াদি হলে নিরাপদ অপশন বেছে নেওয়াই ভালো।

৩. ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা যাচাই করুন:
সবাই সমান ঝুঁকি নিতে পারেন না। কেউ চায় স্থির রিটার্ন, আবার কেউ উচ্চ রিটার্নের জন্য ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আপনার আর্থিক অবস্থা ও মানসিক প্রস্তুতি অনুযায়ী ঝুঁকির মাত্রা বেছে নিন।

৪. টাকার লভ্যতা যাচাই করুন:
আপনার বিনিয়োগে টাকা কত সহজে তুলে নিতে পারবেন—সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু স্কিমে নির্দিষ্ট সময়ের আগে টাকা তোলা যায় না। আবার কিছু স্কিমে জরুরিতে সহজেই টাকা পাওয়া যায়।

ভারতের কিছু নির্ভরযোগ্য শিশু ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিকল্পনা:

১. পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF):
এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি, নিরাপদ এবং ট্যাক্স-বেনিফিট সহ সঞ্চয় পদ্ধতি। এটি ১৫ বছরের জন্য চালানো যায় এবং সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে জমা হয়। কোনো ঝুঁকি নেই বললেই চলে, তাই অনেকেই শিশুর ভবিষ্যতের জন্য এটি বেছে নেন।

Advertisements

২. সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (SSY):
মেয়েশিশুর জন্য ভারত সরকারের একটি বিশেষ স্কিম। ২১ বছর পর্যন্ত মেয়াদী এই স্কিমে সুদের হার বেশ ভালো এবং করছাড় সুবিধাও মেলে। মেয়ের পড়াশোনা ও বিয়ের খরচে এটি অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে।

৩. চাইল্ড সেভিংস প্ল্যান (বীমা কোম্পানিগুলোর):
এগুলি শিশুর পড়াশোনা, বিয়ে ইত্যাদি নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণের জন্য বানানো হয়। এই প্ল্যানে জীবনবীমা কভারও থাকে। অর্থাৎ আপনার অনুপস্থিতিতেও শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে।

৪. মিউচুয়াল ফান্ড (SIP সহ):
সিপি (SIP) বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের মাধ্যমে আপনি মাসে মাসে ছোট অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে বড় ফান্ড গড়ে তুলতে পারেন। আপনি চাইলে ইকুইটি ফান্ড (বেশি রিটার্ন, বেশি ঝুঁকি), ডেট ফান্ড (কম ঝুঁকি), বা হাইব্রিড ফান্ড (উভয়ের সংমিশ্রণ) বেছে নিতে পারেন।

৫. ইউনিট লিঙ্কড ইনস্যুরেন্স প্ল্যান (ULIP):
ULIP-এ একদিকে বীমার কভার থাকে, অন্যদিকে অর্থের কিছু অংশ বাজারে বিনিয়োগ করা হয়। আপনি চাইলে ইকুইটি বা ডেট ফান্ডে বিনিয়োগের অপশনও বেছে নিতে পারেন। এটি করছাড়ও দেয়।

৬. ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC):
এই স্কিমটি পাঁচ বছরের জন্য নির্দিষ্ট হারে সুদ দেয় এবং একদম ঝুঁকিমুক্ত। যারা গ্যারান্টি চায়, তাদের জন্য এটি ভালো অপশন।

শিশুর ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ শুধু একটি আর্থিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি দায়িত্বপূর্ণ অভিভাবকত্বের প্রতিফলন। আজ একটু চিন্তা-ভাবনা করে বিনিয়োগ করলে, আগামী দিনে আপনি সন্তানের স্বপ্নপূরণে সাহায্য করতে পারবেন কোনো চাপ ছাড়াই। আপনার লক্ষ্য, সময়সীমা ও ঝুঁকির মানসিকতা অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন এবং নিয়মিত বিনিয়োগে অটল থাকুন। ভবিষ্যৎ তখনই নিরাপদ হবে, যদি আপনি আজই পদক্ষেপ নেন।