পিপিএফ স্কিমে লক-ইন আসলে ১৫ বছর নয়! জানুন আসল সত্য

ভারত সরকারের পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) প্রকল্প বহু দশক ধরে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা পান নিরাপদ, উচ্চ…

Senior Citizen Savings Scheme

ভারত সরকারের পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) প্রকল্প বহু দশক ধরে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা পান নিরাপদ, উচ্চ সুদ ও করছাড়ের সুবিধাযুক্ত দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের সুযোগ। যারা বিনিয়োগে বেশি হস্তক্ষেপ করতে চান না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিন্ত রিটার্ন খুঁজছেন, তাঁদের জন্য পিপিএফ অন্যতম সেরা বিকল্প হিসেবে ধরা হয়।

Advertisements

আর্থিক মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প চালু করেছিল দেশবাসীকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অলস টাকা জমিয়ে না রেখে তা সঠিকভাবে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য। বর্তমানে পিপিএফ অ্যাকাউন্টে বার্ষিক ৭.১% হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে, যা বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হারে গণনা হয়। তবে এই সুদের হার প্রতি ত্রৈমাসিকে পুনর্মূল্যায়ন করা হয় এবং ঘোষণার আগে পর্যন্ত পরিবর্তিত হয় না।

   

পিপিএফ সম্পর্কে পাঁচটি কম পরিচিত তথ্য:
১. লক-ইন আসলে ১৫ বছর নয়:
পিপিএফ স্কিমের ন্যূনতম মেয়াদ ১৫ বছর। তবে অ্যাকাউন্টধারী চাইলে এই মেয়াদ ৫ বছরের ব্লকে বাড়াতে পারেন। এমনকি যতদিন ইচ্ছা ততদিন পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, যতক্ষণ না তিনি সম্পূর্ণ অর্থ তুলে নেন।

২. সাত বছর পর আংশিক অর্থ তোলার সুযোগ:
যদিও লক-ইন পিরিয়ড ১৫ বছর, তবু বিনিয়োগের ৭ম বছর থেকে আংশিক অর্থ তোলার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ ৭ বছর পার হলে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের সঞ্চিত অর্থের একটি অংশ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. পিপিএফের বিপরীতে ঋণ নেওয়া যায়:
প্রথম ৬ বছরের মধ্যে পুরো অর্থ তোলার সুযোগ নেই, তবে এর বিপরীতে ঋণ নেওয়া সম্ভব। পিপিএফ ব্যালেন্সের সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। তবে এই ঋণ শুধুমাত্র দুই বছর আগের ব্যালেন্সের ভিত্তিতে মঞ্জুর হয় এবং সর্বোচ্চ ৩৬ মাসের মধ্যে শোধ করতে হয়। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে এই সুবিধা ব্যবহার করেন।

৪. ঋণখেলাপির ক্ষেত্রেও টাকা নিরাপদ:
গুজরাট হাইকোর্টের এক নির্দেশ অনুযায়ী, পিপিএফ অ্যাকাউন্টে জমা অর্থ কোনও ঋণ বা আর্থিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে আটকানো যাবে না। অর্থাৎ ঋণখেলাপি হলেও অ্যাকাউন্টধারীর পিপিএফ টাকার উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।

৫. বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড়:
পিপিএফে বছরে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এবং সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। এই বিনিয়োগে সুদ মেলে এবং করছাড়ও পাওয়া যায়। তবে চাইলে ১.৫ লক্ষ টাকার বেশি বিনিয়োগ করা সম্ভব, কিন্তু অতিরিক্ত টাকার উপর কোনও সুদ বা করছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয় না।

পিপিএফ একদিকে যেমন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিকল্প, অন্যদিকে এটি দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ গঠনের একটি কার্যকর উপায়। করছাড়, সুদের নিশ্চয়তা এবং সরকার-সমর্থিত প্রকল্প হওয়ায় এটি ভারতের মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আস্থার প্রতীক হয়ে আছে। যারা ঝুঁকি ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা খুঁজছেন, তাঁদের জন্য পিপিএফ আজও সবচেয়ে জনপ্রিয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম।