পার্সোনাল লোন নেওয়ার আগে সাবধান! এড়িয়ে চলুন এই ৫টি বড় ভুল

জরুরি মুহূর্তে আর্থিক সংকট সামলাতে অনেকেই ব্যক্তিগত ঋণের (Personal Loan) দিকে ঝোঁকেন। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দ্রুত অর্থ মেলে, জামানত প্রয়োজন হয় না, আর…

Simple Personal Loan Calculator

জরুরি মুহূর্তে আর্থিক সংকট সামলাতে অনেকেই ব্যক্তিগত ঋণের (Personal Loan) দিকে ঝোঁকেন। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দ্রুত অর্থ মেলে, জামানত প্রয়োজন হয় না, আর প্রক্রিয়াটিও তুলনামূলক সহজ। কিন্তু সহজলভ্য হলেও ব্যক্তিগত ঋণের সঙ্গে থাকে নানা গোপন খরচ, দীর্ঘ মেয়াদী সুদভার এবং পরিকল্পনাহীন পরিশোধের ঝুঁকি। এগুলিকে উপেক্ষা করলে ঋণগ্রহীতা আর্থিক ফাঁদে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্যক্তিগত ঋণের ৫টি সাধারণ ফাঁদ এবং কীভাবে সেগুলি এড়ানো সম্ভব।

১. গোপন চার্জ বাড়িয়ে দেয় ঋণের খরচ
অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা কেবল সুদের হারটিকেই মাথায় রাখেন, কিন্তু গোপন চার্জের দিকে নজর দেন না। ব্যক্তিগত ঋণের প্রসেসিং ফি সাধারণত ঋণের মোট অঙ্কের ০.৫% থেকে ৩% পর্যন্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই অঙ্কটি সরাসরি ঋণ থেকে কেটে নেওয়া হয়।

   

এর পাশাপাশি লেট পেমেন্ট ফি, আগাম ঋণ শোধের চার্জ (Prepayment/Foreclosure), স্ট্যাম্প ডিউটি ইত্যাদিও খরচ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঋণগ্রহীতা ভাবেন যে তিনি কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে মোট খরচ অনেকটাই বেশি হয়ে দাঁড়ায়। তাই যেকোনও ঋণ নেওয়ার আগে সমস্ত চার্জ ভালোভাবে যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

২. পরিবর্তনশীল সুদের হার এবং সামর্থ্যের চাপ
বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার প্রায় ১০.৯০% থেকে ২৪% পর্যন্ত হয়। সুদের হার নির্ভর করে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর ও প্রোফাইলের ওপর।

অল্প কিছু বাড়তি সুদও মাসিক কিস্তি (EMI) অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে। EMI বেড়ে গেলে অনেকেই দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ বেছে নেন, যাতে মাসিক চাপ কমে। কিন্তু এর ফলে মোট সুদের অঙ্ক বাড়তে থাকে এবং ঋণের সামগ্রিক খরচ অনেক গুণ বেশি হয়। তাই কেবল বর্তমান EMI নয়, পুরো মেয়াদের খরচও মাথায় রাখা প্রয়োজন।

৩. একাধিক ঋণ মানেই ঋণের ফাঁদ
অনেকে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তিগত ঋণ নেন বা ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সঙ্গে মিলিয়ে দেন। এর ফলে আর্থিক চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়। একাধিক ঋণের সুদ, কিস্তি ও চার্জ মেটাতে গিয়ে অনেকে সময়মতো পেমেন্ট করতে ব্যর্থ হন।

ফলস্বরূপ, ক্রেডিট স্কোর নষ্ট হয়, ঋণের ওপর সুদ জমতে থাকে এবং ঋণগ্রহীতা একেবারে দেনার জালে আটকে পড়েন। তাই নিজের সামর্থ্যের বাইরে একাধিক ঋণ নেওয়া কখনওই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

Advertisements

৪. দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ মানেই বাড়তি সুদভার
অনেকে মাসিক EMI কমানোর জন্য ঋণের মেয়াদ (Tenure) দীর্ঘ করেন। যেমন— ৩ বছরের বদলে ৫ বা ৭ বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে নেন। এতে মাসিক EMI কমে গেলেও পুরো ঋণ মেয়াদের মধ্যে অতিরিক্ত সুদ অনেক বেড়ে যায়।

তাই যতটা সম্ভব স্বল্প মেয়াদী ঋণ বেছে নেওয়া উচিত। স্বল্প মেয়াদে EMI বেশি হলেও মোট সুদ খরচ কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “মেয়াদ বেছে নেওয়ার আগে EMI ক্যালকুলেটরে হিসাব করে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি।”

৫. পরিশোধ কৌশল না মানলে বাড়ে খরচ
ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই শুধু ন্যূনতম কিস্তি মেটানোর দিকেই নজর দেন, কিন্তু আগাম পরিশোধ (Prepayment), আংশিক শোধ (Part-payment), বা রিফাইন্যান্সিং (Refinancing) কৌশল কাজে লাগান না।
ফলে তারা বাড়তি খরচ বহন করতে বাধ্য হন। যদি কারও আয় বাড়ে বা বোনাস পান, তবে আংশিক পরিশোধ করলে সুদের বোঝা অনেকটাই হালকা হয়। আবার কম সুদের ঋণে রিফাইন্যান্স করলে খরচও কমানো যায়।

ঋণের ফাঁদ থেকে বাঁচার স্মার্ট টিপস:
ঋণ নেওয়ার আগে সব ধরনের চার্জ ও শর্ত খুঁটিয়ে পড়ুন।
অনলাইনে EMI ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে সামর্থ্য যাচাই করুন।
একাধিক ঋণ বা একসঙ্গে অনেক ক্রেডিট কার্ডের আবেদন এড়িয়ে চলুন।
স্বল্প মেয়াদী ঋণ বেছে নিন, যদি আয় অনুযায়ী সম্ভব হয়।
আংশিক পরিশোধ বা রিফাইন্যান্সিং-এর মতো কৌশল প্রয়োগ করুন।

ব্যক্তিগত ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা জরুরি মুহূর্তে সত্যিকারের রক্ষাকবচ হতে পারে। কিন্তু গোপন চার্জ, দীর্ঘ মেয়াদী EMI, একাধিক ঋণ এবং পরিকল্পনাহীন পরিশোধ কৌশল ঋণকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল করে তোলে। তাই ঋণ নেওয়ার আগে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া, আর্থিক পরামর্শ নেওয়া এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে পরিশোধ করা—এগুলোই হতে পারে ঋণকে বুদ্ধিমানের মতো ব্যবহার করার মূল চাবিকাঠি।