বর্ষার মরশুম শুরু হতেই আবারও বাজারে সবজির দাম হঠাৎ করে আকাশছোঁয়া। প্রায় প্রতিটি বাজারেই প্রতিদিনের সবজির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শসা, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, পটল, কচু, বরবটি—সবজির তালিকায় একটিও এমন নেই যার কেজি প্রতি দাম ৫০ টাকার নিচে! কোথাও কোথাও তো ঝিঙে ও কচুর কেজি ৭০-৮০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে রীতিমতো নাকানি-চোবানি খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি।
এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পিছনে কারণ কী? খুচরো বিক্রেতাদের একাংশ বলছেন, “বর্ষার শুরুতেই লাগাতার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেতেই সবজি নষ্ট হয়েছে, জমিতে জল দাঁড়িয়েছিল। এতে ফলনের ক্ষতি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।” তাঁরা আরও বলেন, “জোগান কম থাকায় দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে।”
কিন্তু জেলার উদ্যান পালন দফতরের বক্তব্য একেবারে উল্টো। তাঁদের দাবি, বাঁকুড়া জেলার মতো বেশ কয়েকটি জেলায় প্রথমদিকে বৃষ্টি হলেও এক-দু’দিনেই জল নেমে যায় অধিকাংশ জমি থেকে। ফলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও বাস্তবে তেমন বড় ক্ষতি হয়নি। বরং সময়মতো চাষ শুরু হয়েছে অনেক জায়গায়। উদ্যান পালন আধিকারিকদের সঙ্গে একমত হয়েছেন কৃষকদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, “ফসলের ক্ষতি তেমন হয়নি। আবার এমনও না যে আমরা খুব বেশি লাভ করেছি। দাম বাড়লেও সেই টাকা আমাদের হাতে পৌঁছায় না। মাঝপথে অনেকেই লাভ তুলে নিচ্ছে।”
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—দাম বাড়ছে ঠিক কোথায়? সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন, এখানে মূল ভূমিকা নিচ্ছে আড়তদার ও মজুতদাররা। তাঁরা বলছেন, “ঝোপ বুঝে কোপ মারছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, আর সেই অজুহাতে দ্বিগুণ-তিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।”
জেলার বাজারে সবজির এমন অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির নজরদারির জন্য সরকার যে টাস্ক ফোর্স গড়ে তুলেছে, তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, “কোথায় টাস্ক ফোর্স? বাজারে তো তাদের দেখা মেলে না। যদি নিয়মিত নজরদারি চলত, তাহলে এমন হঠাৎ দরবৃদ্ধি সম্ভব ছিল না।”
টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকদের দাবি, “আমরা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করি। কোনো অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” যদিও বাস্তব বাজার চিত্র বলছে, সেই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। একদিন পরিদর্শনে গিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না, দরকার ধারাবাহিক নজরদারি ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনা ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে শুধুমাত্র বর্ষা নয়, যেকোনো অজুহাতেই ভবিষ্যতেও এমনই অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির মুখে পড়বে সাধারণ মানুষ।
এখনও সময় আছে, রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের উচিত মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। নইলে সবজি এখন আর থালার পাশে নয়, ক্রমশ পরিণত হবে শুধুই “বিশেষ দিনের খাওয়ার” অনুষঙ্গে!