Bangladesh 50: ছায়ামানুষ মি: ভট্টাচার্যের সেই গোপন বৈঠক, গেরিলাদের স্বাধীন বাংলা বেতার

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: একাত্তরের রাতের কলকাতা। রাস্তার হলদে ডুম আলোর নিচেটাই যা একটু স্পষ্ট। তারপর অন্ধকার। গলির ভিতরগুলো? একপক্ষ অন্যপক্ষকে তাড়া করছে। রাজনৈতিক লড়াইয়ে দুই বামপক্ষ,…

Swadhin Bangla Betar Kendra

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: একাত্তরের রাতের কলকাতা। রাস্তার হলদে ডুম আলোর নিচেটাই যা একটু স্পষ্ট। তারপর অন্ধকার। গলির ভিতরগুলো? একপক্ষ অন্যপক্ষকে তাড়া করছে। রাজনৈতিক লড়াইয়ে দুই বামপক্ষ, তাদের প্রতিপক্ষ প্রশাসন ও কংগ্রেস। মহানগরের এই রূপ যারা দেখেছেন তারাই জানেন।

তেমনই এক রাত। বালিগঞ্জ শুনশান। দশটা বাজার আগেই একটা দোতলা বাড়িতে দু’জন ঢুকে গেলেন। এই বাড়িতেই হয়েছিল ঐতিহাসিক একটি সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক রণাঙ্গনের ইতিহাসে বেতার সম্প্রচারের গৌরবময় পর্বের একটি।

৫০ বছর আগের সেই রাতে ফিরে যাওয়া যাক। বাড়িটায় সেদিনের গোপন বৈঠকে যারা ছিলেন তাদের দুজনের পরিচয় এখনও অস্পষ্ট। এদের একজন ছায়ামানুষ- মি: ভট্টাচার্য। সে রাতের পর ভট্টাচার্য মশাই আর দেখা দেননি।

Swadhin Bangla Betar Kendra

মুক্তিযুদ্ধের কথক বাংলাদেশের কিংবদন্তি সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল লিখেছেন, “একাত্তরের মে মাসের বাইশ তারিখ। মান্নান ভাই বললেন, ‘আজ রাত দশটায় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িটাতে একটা গোপন বৈঠক আছে। আপনি হাজির থাকবেন। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র চালু করার ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনা হবে।’ দোতলা বাড়ি। উপরের তলায় মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীবর্গ আর বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আস্তানা। তাই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। আমি আর মান্নান ভাই একটু আগেই গিয়ে হাজির হলাম। নিচের তলায় ড্রয়িং রুমে দু’জনে অধীর আগ্রহে বসে রইলাম। ঠিক রাত দশটায় সাদা পোশাকে দু’জন ভদ্রলোক এলেন। দু’জনেই ভারতীয় বাঙালি। একজন তো তেমন কোন কথাই বললেন না। অন্যজন নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে নাম বললেন, ভট্টাচার্য। অনেক কষ্টে কৌতূহল দমন করলাম। ওদের পুরো পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম না।”
সৌ: আমি বিজয় দেখেছি। এম আর আখতার মুকুল।

মি ভট্টাচার্য অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। সেটি তাঁর পেশাগত গোপনীয়তা বলেই ধরে নেওয়া যাক। কিন্তু তাঁর উপস্থিতিতে সেদিন বৈঠকে স্থির হয়েছিল ভারত সরকারের তরফে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় রেডিও বার্তা সম্প্রচার করা হবে। এই রেডিও সংবাদে থাকবে মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর কথা।

রণাঙ্গনে রেডিও পাকিস্তান বনাম আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই তরঙ্গ যুদ্ধ বিশ্ব বেতার সম্প্রচার ইতিহাসের অতি চমকপ্রদ অধ্যায়। যার ভূমিকাটুকু করতে সেই রাতে ভট্টাচার্য মশাইয়ের আগমন হয়েছিল।

‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ এমন এক রেডিও মাধ্যম যা গেরিলা যুদ্ধের অংশীদার হয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি এই রেডিওর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে বাংলাদেশ তৈরির পর এই রেডিও বার্তার আর প্রয়োজন হয়নি।

এম আর আখতার মুকুল লিখেছেন, “ভট্টাচার্য মশায় সরাসরি বললেন, ‘ একটা পঞ্চাশ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার বাংলাদেশের সীমান্তে বসানো হয়েছে। এই ট্রান্সমিটার চালু রাখার দায়িত্ব ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এর অবস্থানটা স্বাভাবিক কারণেই গোপনীয় থাকবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোলকাতায় প্রতিদিন বেতার অনুষ্ঠান রেকর্ড করতে হবে। রেকর্ডকৃত অনুষ্ঠান ট্রান্সমিটার ভবনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ভারতীয় কর্তৃপক্ষের।”

সেদিনের সেই গোপন আলোচনায় গেরিলা যুদ্ধের প্রচার মাধ্যম হিসেবে রেডিও হয়েছিল বিশেষ উপযোগী। সিদ্ধান্ত পাকা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রণাঙ্গনের প্রথম সম্প্রচার হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মে। সেদিন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন।