ভারতের কৃষি খাতে মাশরুম চাষের (Mushroom Farming) জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় উদ্যান বোর্ড (NHB) এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট মাশরুম উৎপাদনের ৭৫% অংশ কেবলমাত্র ১০টি রাজ্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই তালিকায় বিহার (১১.৩০%), ওড়িশা (১০.১৯%), মহারাষ্ট্র (৯.২৯%) এবং উত্তর প্রদেশ (৭.৯৭%) এর মতো রাজ্যগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম নেই, যা একটি কৃষিপ্রধান রাজ্য হিসেবে পরিচিত। এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের মাশরুম চাষে পিছিয়ে পড়ার কারণগুলো বিভিন্ন, তবে সঠিক উদ্যোগ নিলে এই অঞ্চলটি এই খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
কেন পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ?
পশ্চিমবঙ্গ একটি কৃষিপ্রধান রাজ্য হলেও, এখানে মাশরুম চাষ এখনও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়নি। রিসার্চ গেটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অঞ্চলে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তবে এটি ব্যবসায়িক স্তরে উন্নত হয়নি। কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রযুক্তির অভাব এবং কৃষকদের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি। বটন এবং ওয়েস্টার মাশরুমের চাষ বছরের বিভিন্ন সময়ে সম্ভব হলেও, পশ্চিমবঙ্গে এখনও পুরোনো পদ্ধতি প্রচলন করা হচ্ছে, যা উৎপাদন ক্ষমতাকে সীমিত করে।
অধিকাংশ কৃষক এখানে ধান, গম এবং আলু চাষে নির্ভরশীল, যা তাদের আয়ের প্রধান উৎস। মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কম্পোস্ট তৈরি, স্পন প্রস্তুতি এবং বিপণনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের অভাব এই খাতে পিছিয়ে পড়ার একটি বড় কারণ। এছাড়া, উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ক্যালোসাইব ইন্ডিকা (একটি জনপ্রিয় মাশরুম প্রজাতি) এখানে ব্যবসায়িকভাবে চাষ করা হয়নি, যা একটি সম্ভাব্য অবকাশ হারানোর ইঙ্গিত দেয়।
সম্ভাবনা ও সুযোগ
পশ্চিমবঙ্গের জন্য মাশরুম চাষে উন্নতি করার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যের আর্দ্র এবং মাঝারি তাপমাত্রা মাশরুম চাষের জন্য প্রাকৃতিকভাবে উপযোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করে, তবে এই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব। পশুধন প্রহরী নামক ব্লগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাশরুম চাষ কম বিনিয়োগে শুরু করা যায় এবং এটি গ্রামীণ নারীদের জন্য আয়ের একটি উৎস হতে পারে। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের রায়পুর, মির্জাপুর, মেহারপুর এবং নিমগড়িয়া গ্রামে ১০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, যা দক্ষতা বৃদ্ধির একটি উদাহরণ।
সরকারী উদ্যোগও এই খাতে সহায়ক হতে পারে। জাতীয় উদ্যান বোর্ড এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহায়তা ও সহজ ঋণ সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের ৯০% কৃষক ছোট ও মাঝারি ধরনের হওয়ায়, মাশরুম চাষ কৃষি বিকিরণের মাধ্যমে তাদের আয় বাড়াতে পারে। ভেদান্তু.কম-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কৃষি বিকিরণ আবহাওয়ার প্রভাব কমিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়, যা মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
মাশরুম চাষে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো প্রযুক্তির অভাব ও বাজারের সমস্যা। কম্পোস্ট তৈরি ও সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা জটিল, যা প্রশিক্ষণ ছাড়া কৃষকদের জন্য কঠিন। তবে, সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলে এই সমস্যা সমাধান হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্রে প্রযুক্তি ও সরকারি সহায়তার মাধ্যমে মাশরুম উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি মডেল হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে মাশরুম চাষে পিছিয়ে পড়া একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে রাজ্যটি এই খাতে নিজেকে পুনর্গঠন করতে পারে। মাশরুমের উচ্চ প্রোটিন এবং পুষ্টি মূল্য বিবেচনা করে, এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিপ্লব আনতে পারে। তাই, এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, যাতে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মাশরুম মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে পারে।