পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য সবজি বিক্রির ক্ষেত্রে মান্ডি বা কৃষি বাজার (Vegetable Mandis) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মান্ডিগুলি (Vegetable Mandis)কৃষকদের তাদের উৎপাদিত সবজি সরাসরি পাইকারি বিক্রেতা বা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার সুযোগ প্রদান করে, যা তাদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ২০২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মান্ডি তাদের অবস্থান, অ্যাক্সেসযোগ্যতা এবং প্রতিযোগিতামূলক দামের জন্য পরিচিত। এই প্রতিবেদনে আমরা পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ সবজি মান্ডি (Vegetable Mandis), তাদের অবস্থান এবং ২০২৫ সালের বাজার মূল্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ সবজি মান্ডি (Vegetable Mandis)
১. সিলডা কোলি মার্কেট, কলকাতা
সিলডা কোলি মার্কেট পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি সবজি বাজার। কলকাতার এই মান্ডিটি প্রতিদিন সকাল ৬:৩০ থেকে দুপুর ১:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে আলু, পেঁয়াজ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, শসা এবং অন্যান্য সবজির বড় আকারে লেনদেন হয়। ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই মান্ডিতে (Vegetable Mandis)আলুর দাম প্রতি কেজিতে ১২-১৫ টাকা, পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকা এবং টমেটো ২০-২৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। এই বাজারে প্রায় ৭টি পাইকারি কমিটি কাজ করে, যারা কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন নিশ্চিত করে।
২. বর্ধমান কৃষি উৎপাদ বাজার
পূর্ব বর্ধমানের এই মান্ডি সবজি বিক্রির জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বর্ধমানের বুলবুলিতলা বাজার এবং কালনার মান্ডি বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু, বেগুন, মটরশুঁটি, শিম এবং অন্যান্য সবজি নিয়ে আসেন। ২০২৫ সালে, এই মান্ডিতে আলুর দাম প্রতি কেজিতে ১২ টাকা এবং বেগুন ২০-২৫ টাকা। এই বাজারটি তার সুবিধাজনক অবস্থান এবং স্থানীয় কৃষকদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্যতার জন্য পরিচিত।

৩. খড়্গপুর মান্ডি, পশ্চিম মেদিনীপুর
খড়্গপুরের কাছারি বাজার এবং তালবাগিচা এলাকায় অবস্থিত মান্ডিগুলি পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, ধনেপাতা এবং পুদিনা পাতার বড় চাহিদা রয়েছে। ২০২৫ সালে, পুদিনা পাতার দাম প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা এবং পালং শাক ১৫-২০ টাকা। এই মান্ডিগুলি স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা এবং পাইকারি ক্রেতাদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র।
৪. তমলুক মান্ডি, পূর্ব মেদিনীপুর
তমলুকের সালগেছিয়া রেগুলেটেড মার্কেট কৃষকদের জন্য একটি প্রধান বাজার। এখানে ড্রামস্টিক, কুমড়ো এবং কলা সহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি হয়। ২০২৫ সালে, কুমড়োর দাম প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা এবং ড্রামস্টিক ৩০-৩৫ টাকা। এই মান্ডি তার সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা এবং কৃষকদের জন্য ন্যায্য দামের জন্য পরিচিত।
২০২৫ সালের সবজির গড় বাজার মূল্য
পশ্চিমবঙ্গের মান্ডিগুলিতে সবজির দাম দৈনিক ভিত্তিতে ওঠানামা করে, যা সরবরাহ, চাহিদা এবং পরিবহন ব্যয়ের উপর নির্ভর করে। নীচে কিছু প্রধান সবজির গড় মান্ডি মূল্য দেওয়া হল (২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী):
আলু: প্রতি কেজি ১২-১৫ টাকা
পেঁয়াজ: প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা
টমেটো: প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকা
ফুলকপি: প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা
বাঁধাকপি: প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা
বেগুন: প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকা
পালং শাক: প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা
এই দামগুলি মান্ডি থেকে খুচরা বাজারে পৌঁছানোর সময় ২০-৪০% বৃদ্ধি পেতে পারে, কারণ পরিবহন, স্টোরেজ এবং মধ্যস্থতাকারীদের কারণে খরচ বাড়ে।
কৃষকদের জন্য সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
পশ্চিমবঙ্গের মান্ডিগুলি কৃষি উৎপাদ বিপণন কমিটি (এপিএমসি) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। তবে, মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থিতি এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে কৃষকরা প্রায়ই তাদের উৎপাদনের পূর্ণ মূল্য পান না। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মান্ডিতে ফুলকপির দাম যেখানে প্রতি কেজি ৫ টাকা ছিল, সেখানে খুচরা বাজারে তা ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়, এবং কৃষকরা মাত্র ৩ টাকা পান।

কৃষকদের জন্য আরও ভালো দাম নিশ্চিত করতে সরকার এবং বেসরকারি প্ল্যাটফর্ম যেমন কিসানমান্ডি.কম কাজ করছে। এই প্ল্যাটফর্ম কৃষকদের সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও, কৃষকরা গ্রাম সহায়কদের মাধ্যমে গ্রেডিং, প্যাকিং এবং লজিস্টিক সহায়তা পেতে পারেন।
সরকারি উদ্যোগ
সরকার পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষি বিপণন বিভাগের অধীনে এপিএমসি মান্ডিগুলিকে আধুনিকীকরণ করছে এবং ই-নাম (ইলেকট্রনিক ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচার মার্কেট) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ করছে। এই প্ল্যাটফর্ম কৃষকদের তাদের পণ্যের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দাম পেতে সহায়তা করে।
পশ্চিমবঙ্গের মান্ডিগুলি কৃষকদের জন্য তাদের সবজি বিক্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। সিলডা কোলি মার্কেট, বর্ধমান, খড়্গপুর এবং তমলুকের মতো মান্ডিগুলি তাদের সুবিধাজনক অবস্থান এবং প্রতিযোগিতামূলক দামের জন্য পরিচিত। তবে, মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে কৃষকদের জন্য ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। সরকারি উদ্যোগ এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি মোকাবিলা করা হচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য আরও ভালো আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করছে। কৃষকদের উচিত স্থানীয় মান্ডির দৈনিক দাম এবং সরকারি স্কিম সম্পর্কে অবগত থাকা, যাতে তারা তাদের উৎপাদনের সর্বোত্তম মূল্য পেতে পারেন।