বাংলায় চাষের জন্য সবচেয়ে লাভজনক ৫টি আয়ুর্বেদিক উদ্ভিদ

Top 5 Most Profitable Ayurvedic Plants: আয়ুর্বেদ ভারতের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এই পদ্ধতির মূল ভিত্তি হল ঔষধি উদ্ভিদ, যা বিভিন্ন রোগের…

Top 5 Most Profitable Ayurvedic Plants to Grow in 2025 for High Returns

Top 5 Most Profitable Ayurvedic Plants: আয়ুর্বেদ ভারতের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এই পদ্ধতির মূল ভিত্তি হল ঔষধি উদ্ভিদ, যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, প্রাকৃতিক এবং জৈব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে আয়ুর্বেদিক উদ্ভিদের চাষ একটি লাভজনক কৃষি ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। ভারতের জলবায়ু এবং মাটির বৈচিত্র্য এই উদ্ভিদ চাষের জন্য উপযুক্ত। জাতীয় ঔষধি উদ্ভিদ বোর্ড (এনএমপিবি) এবং সরকারি ভর্তুকি এই খাতকে আরও উৎসাহিত করছে। ২০২৫ সালে কৃষকদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক পাঁচটি আয়ুর্বেদিক উদ্ভিদ নিয়ে এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হল। এই উদ্ভিদগুলো হল: অশ্বগন্ধা, তুলসী, ব্রাহ্মী, আমলকী এবং শতমূলী।

১. অশ্বগন্ধা (Ashwagandha)
অশ্বগন্ধা, যা ভারতীয় জিনসেং নামেও পরিচিত, একটি শক্তিশালী অ্যাডাপ্টোজেন। এটি স্ট্রেস কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদ শুষ্ক এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে ভালো জন্মে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং গুজরাট। অশ্বগন্ধার শিকড়ের চাহিদা আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং হারবাল সাপ্লিমেন্ট শিল্পে প্রচুর। ২০২৫ সালে এর বাজার মূল্য প্রতি কুইন্টাল ১৫,০০০-২০,০০০ টাকা হতে পারে। এটি চাষে বিনিয়োগ কম, এবং এক একর জমিতে ২.৫-৩ লক্ষ টাকা আয় সম্ভব। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে রপ্তানি বাজারে আরও বেশি লাভ পাওয়া যায়।

   

২. তুলসী (Tulsi)
তুলসী, বা পবিত্র বেসিল, ভারতে একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত। এটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, হজমজনিত সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। তুলসী যে কোনো জলবায়ুতে জন্মে এবং এর চাষে ন্যূনতম যত্ন প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা সহজেই এটি তাদের বাড়ির উঠোনে বা ছোট জমিতে চাষ করতে পারেন। তুলসীর পাতা, বীজ এবং তেলের চাহিদা আয়ুর্বেদিক ওষুধ, প্রসাধনী এবং খাদ্য শিল্পে রয়েছে। এক একর জমিতে তুলসী চাষে ১-১.৫ লক্ষ টাকা আয় সম্ভব। এর জন্য ভালো নিষ্কাশনযুক্ত মাটি এবং নিয়মিত সেচের প্রয়োজন।

৩. ব্রাহ্মী (Brahmi)
ব্রাহ্মী মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং উদ্বেগ কমাতে ব্যবহৃত হয়। এই উদ্ভিদ আর্দ্র, জলাভূমি অঞ্চলে ভালো জন্মে, যা পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর জন্য উপযুক্ত। ব্রাহ্মীর পাতা এবং কান্ড আয়ুর্বেদিক ওষুধ, হারবাল টনিক এবং প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়। এর চাষে প্রাথমিক বিনিয়োগ কম, এবং বাজারে এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান। এক একর জমিতে ব্রাহ্মী চাষে ১.৫-২ লক্ষ টাকা আয় সম্ভব। জৈব চাষের মাধ্যমে এর রপ্তানি সম্ভাবনা আরও বাড়ে।

৪. আমলকী (Amla)
আমলকী, বা ভারতীয় গুজবেরি, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি হজমশক্তি বাড়াতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়। আমলকী গাছ হালকা এবং মাঝারি ভারী মাটিতে জন্মে এবং এর চাষে রক্ষণাবেক্ষণ কম প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা আমলকী চাষে ভালো লাভ পেতে পারেন, কারণ এর ফল, রস এবং গুঁড়োর চাহিদা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েছে। এক একর জমিতে আমলকী চাষে ১.৫-২ লক্ষ টাকা আয় সম্ভব।

৫. শতমূলী (Shatavari)
শতমূলী একটি শক্তিশালী অ্যাডাপ্টোজেন, যা মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য, হরমোনের ভারসাম্য এবং সামগ্রিক শক্তি বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। এটি বালুকাময় দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে এবং পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর জন্য উপযুক্ত। শতমূলীর শিকড় আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং সাপ্লিমেন্টে ব্যবহৃত হয়। এর চাহিদা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সুস্থতা শিল্পে ক্রমবর্ধমান। এক একর জমিতে শতমূলী চাষে ২-২.৫ লক্ষ টাকা আয় সম্ভব।

Advertisements

পশ্চিমবঙ্গে আয়ুর্বেদিক উদ্ভিদ চাষের সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গের বৈচিত্র্যময় জলবায়ু এবং উর্বর মাটি এই উদ্ভিদগুলোর চাষের জন্য আদর্শ। তবে, কৃষকদের মুখোমুখি হতে হয় কিছু চ্যালেঞ্জ। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (এনএসএসও) তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ১% কৃষক এমএসপি সুবিধা পান, যা ঔষধি উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ক্রয় ব্যবস্থার অভাব এবং বাজার সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি এই খাতের প্রধান বাধা। তবে, জাতীয় ঔষধি উদ্ভিদ বোর্ড (এনএমপিবি) ৭৫% পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করে, যা কৃষকদের উৎসাহিত করছে।

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
১. বাজার সংযোগ: কৃষকদের সরাসরি আয়ুর্বেদিক কোম্পানি বা জৈব ব্র্যান্ডের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কৃষক উৎপাদক সংগঠন (এফপিও) গঠন বাজারে দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
২. সচেতনতা বৃদ্ধি: সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং বাজার তথ্য প্রদান করা উচিত।
৩. জৈব চাষ: জৈব চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত উদ্ভিদ আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ মূল্য পায়। এর জন্য জৈব সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার প্রয়োজন।
৪. অবকাঠামো উন্নয়ন: ক্রয় কেন্দ্র, স্টোরেজ এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি কৃষকদের লাভ বাড়াতে পারে।

সরকারি উদ্যোগ
ভারত সরকারের এনএমপিবি এবং মিশন ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অফ হর্টিকালচার (এমআইডিএইচ) কৃষকদের আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। ২০১৭-১৮ সালে ভারত ৩৩০.১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ঔষধি উদ্ভিদ রপ্তানি করেছে, যা ১৪.২২% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চাহিদা ২০২৫ সালে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২৫ সালে অশ্বগন্ধা, তুলসী, ব্রাহ্মী, আমলকী এবং শতমূলী চাষ পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য লাভজনক হতে পারে। এই উদ্ভিদগুলোর চাহিদা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান, এবং জৈব চাষের মাধ্যমে আরও বেশি আয় সম্ভব। তবে, সফলতার জন্য কৃষকদের বাজার সংযোগ, প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামোগত সহায়তা প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগ এবং জৈব চাষের প্রতি মনোযোগ এই খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে, যা পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই কৃষির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।