মিজোরামের ১,৩১,২৩৮ জন কৃষক প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (PM-KISAN) যোজনার ২০তম কিস্তির আওতায় ৩৮.০৬ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। এই তথ্য শনিবার (২ আগস্ট, ২০২৫) আইজলের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে এই যোজনার অধীনে দেশের ৯.৭ কোটি কৃষকের জন্য মোট ২০,৫০০ কোটি টাকা ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) মাধ্যমে বিতরণ করেছেন। এই কিস্তি ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের প্রথম কিস্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পিএম-কিষাণ যোজনা ভারতের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তা প্রকল্প, যা কৃষি ও সম্পর্কিত কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই প্রতিবেদনে আমরা মিজোরামের কৃষকদের জন্য এই কিস্তির তাৎপর্য, যোজনার বিশেষত্ব, এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
পিএম-কিষাণ যোজনা: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে চালু হয়েছিল। এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বছরে ৬,০০০ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়, যা তিনটি সমান কিস্তিতে (প্রতি চার মাসে ২,০০০ টাকা) ডিবিটি মাধ্যমে তাদের আধার-সংযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের কৃষি কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার, এবং অন্যান্য উপকরণ ক্রয়ে সহায়তা করা, পাশাপাশি তাদের গৃহস্থালি খরচ মেটাতে সহায়তা করা। মিজোরামের মতো পাহাড়ি ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই আর্থিক সহায়তা কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মিজোরামে ২০তম কিস্তির প্রভাব
মিজোরাম, যেখানে কৃষি অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ, সেখানে এই ২০তম কিস্তি ১,৩১,২৩৮ জন কৃষকের জন্য একটি বড় স্বস্তি এনেছে। এই কিস্তির মাধ্যমে প্রত্যেক কৃষক ২,০০০ টাকা পেয়েছেন, যা তাদের কৃষি কার্যক্রম এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিজোরামের কৃষকদের মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, যারা পাহাড়ি ভূমিতে ঝুম চাষ এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। এই আর্থিক সহায়তা তাদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ, ফসলের গুণমান উন্নত করা, এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়তা করছে।
২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের প্রথম কিস্তি হিসেবে এই তহবিল মিজোরামের গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই অর্থ কৃষকরা বীজ, সার, এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যবহার করতে পারেন, যা ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এছাড়া, এই তহবিল তাদের ঋণের বোঝা কমাতে এবং স্থানীয় মহাজনদের উপর নির্ভরতা হ্রাস করতে সহায়তা করবে। মিজোরামের কৃষক সম্প্রদায় এই আর্থিক সহায়তাকে একটি আর্থিক নিরাপত্তা জাল হিসেবে বিবেচনা করে, যা তাদের জীবনযাত্রায় আত্মবিশ্বাস এবং স্থিতিশীলতা এনেছে।
পিএম-কিষাণ যোজনার বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতা
পিএম-কিষাণ যোজনার অধীনে কৃষকদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য কৃষকদের অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং তাদের নামে চাষযোগ্য জমির মালিকানা থাকতে হবে। আধার-সংযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। যারা আয়কর দেন, সরকারি বা পাবলিক সেক্টরে চাকরি করেন, অথবা মাসিক ১০,০০০ টাকার বেশি পেনশন পান, তারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য যোগ্য নন।
ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়াটি তিনটি পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যায়: ওটিপি-ভিত্তিক, বায়োমেট্রিক-ভিত্তিক, এবং ফেস অথেনটিকেশন-ভিত্তিক। কৃষকরা পিএম-কিষাণ পোর্টাল (pmkisan.gov.in) বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ওটিপি-ভিত্তিক ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করতে পারেন। বায়োমেট্রিক ই-কেওয়াইসির জন্য নিকটস্থ কমন সার্ভিস সেন্টার (সিএসসি) বা স্টেট সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। ফেস অথেনটিকেশন পিএম-কিষাণ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে করা যায়। এই প্রক্রিয়াগুলো নিশ্চিত করে যে তহবিল সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছায় এবং কোনো মধ্যস্থতাকারীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বচ্ছভাবে বিতরণ হয়।
মিজোরামে যোজনার প্রভাব ও সাফল্য
মিজোরামে পিএম-কিষাণ যোজনা কৃষকদের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে। রাজ্যের পাহাড়ি ভূ-প্রকৃতি এবং সীমিত অর্থনৈতিক সংস্থানের কারণে কৃষকরা প্রায়ই আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রদত্ত ৬,০০০ টাকার বার্ষিক সহায়তা তাদের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়তা করছে। ২০১৯ সালে প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে, ১৯টি কিস্তির মাধ্যমে দেশব্যাপী ৩.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, এবং মিজোরামের কৃষকরাও এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পেয়েছেন।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৯তম কিস্তি বিতরণের সময় বিহারের ভাগলপুরে ৯.৮ কোটি কৃষকের জন্য ২২,০০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছিল। এই ধারাবাহিকতায় ২০তম কিস্তি মিজোরামের কৃষকদের জন্য আরও একটি মাইলফলক। এই তহবিল কৃষকদের আধুনিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহিত করছে এবং তাদের আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান করছে। মিজোরামের কৃষকদের মধ্যে নারী কৃষকরাও এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন, যা লিঙ্গ-ভিত্তিক সমতার দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
কৃষকদের জন্য পরামর্শ
২০তম কিস্তির সুবিধা পাওয়ার জন্য মিজোরামের কৃষকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, তাদের ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করতে হবে, যা পিএম-কিষাণ পোর্টাল বা সিএসসি কেন্দ্রের মাধ্যমে করা যায়। দ্বিতীয়ত, আধার কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল নম্বর সংযুক্ত থাকতে হবে। কৃষকরা পিএম-কিষাণ পোর্টালে “Farmers Corner” বিভাগে গিয়ে তাদের বেনিফিশিয়ারি স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন। এছাড়া, কোনো সমস্যার সমাধানের জন্য পিএম-কিষাণ হেল্পলাইন নম্বর ১৫৫২৬১ বা ০১১-২৪৩০০৬০৬-এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
পিএম-কিষাণ যোজনার ২০তম কিস্তি মিজোরামের ১.৩০ লক্ষের বেশি কৃষকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহায়তা হিসেবে কাজ করছে। ৩৮.০৬ কোটি টাকার এই তহবিল রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। এই প্রকল্পটি ভারতের কৃষি খাতকে সশক্ত করার জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ। মিজোরামের কৃষকদের উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা এবং ই-কেওয়াইসি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়মিত এই সুবিধা গ্রহণ করা। এই আর্থিক সহায়তা কৃষকদের কেবল আর্থিক সুরক্ষাই দেয় না, বরং তাদের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে।