অবশেষে দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষকের অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (PM Kisan) যোজনার ২০তম কিস্তি আগামী জুলাই মাসে মুক্তি পেতে চলেছে। এই কিস্তির অধীনে প্রত্যেক উপযুক্ত কৃষক ২,০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবেন। কেন্দ্র সরকার এই স্কিমের মাধ্যমে বছরে ৬,০০০ টাকা তিনটি সমান কিস্তিতে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি স্থানান্তর করে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৯তম কিস্তি বিতরণ করা হয়েছিল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি, জুন এবং অক্টোবর মাসে কিস্তি দেওয়া হয়। তবে এবারে জুন মাস পেরিয়ে গেলেও, সরকার এখনও কোনো অফিসিয়াল তারিখ ঘোষণা করেনি, যার ফলে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও সূত্রের খবর অনুযায়ী, জুলাই মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে এই কিস্তি দেওয়া হবে।
এরই মধ্যে কৃষকদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—যদি আপনার মোবাইল নম্বর বন্ধ বা পরিবর্তিত হয়ে যায়, তবে সেটি অবিলম্বে আপডেট করা প্রয়োজন। PM-Kisan যোজনার সমস্ত নোটিফিকেশন, যেমন কিস্তি জমার এসএমএস, স্ট্যাটাস আপডেট, অভিযোগের অবস্থা এবং আধার ভিত্তিক ওটিপি ভেরিফিকেশনের জন্য মোবাইল নম্বর অত্যন্ত জরুরি।
কীভাবে মোবাইল নম্বর আপডেট করবেন?
১. প্রথমে সরকারি ওয়েবসাইটে যান — https://pmkisan.gov.in
২. হোমপেজে একটু নিচে স্ক্রল করুন এবং ‘Update Mobile Number’ অপশনে ক্লিক করুন।
৩. আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর বা আধার নম্বর দিন।
৪. ক্যাপচা কোড পূরণ করে ‘Search’ বোতামে ক্লিক করুন।
৫. আপনার প্রোফাইল আসার পর নতুন মোবাইল নম্বর দিন এবং সাবমিট করুন।
৬. নতুন নম্বরে ওটিপি আসবে, সেটি দিয়ে ভেরিফাই করুন।
যদি অনলাইনে করতে সমস্যা হয়, তাহলে নিকটবর্তী CSC (Common Service Centre) বা কৃষি দফতরে গিয়ে আধার কার্ড, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং প্রয়োজনে মোবাইল নম্বরের প্রমাণপত্র জমা দিন।
ই-কে ওয়াইসি (e-KYC) কেন জরুরি?
PM-Kisan এর ওয়েবসাইটে স্পষ্ট লেখা আছে—“eKYC is MANDATORY for PMKISAN Registered Farmers.” অর্থাৎ, ই-কে ওয়াইসি না করলে কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে না।
তিনটি উপায়ে ই-কে ওয়াইসি করা যায়:
ওটিপি ভিত্তিক e-KYC: আধার কার্ডের সাথে মোবাইল নম্বর যুক্ত থাকলে ঘরে বসে অনলাইনে ওটিপি দিয়ে ভেরিফাই করা সম্ভব।
বায়োমেট্রিক e-KYC: CSC-তে গিয়ে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে ভেরিফাই করা যায়।
ফেসিয়াল অথেন্টিকেশন: বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষম কৃষকদের জন্য CSC-তে মুখের মাধ্যমে ভেরিফাই করার সুযোগ রয়েছে।
নামের ভুল সংশোধন
যদি PM-Kisan এর রেকর্ডে নাম আধার কার্ডের সঙ্গে মেলে না, তাহলে অনলাইনে ‘Updation of Self Registered Farmer’ অপশন থেকে সংশোধন করতে হবে। অথবা নিকটবর্তী CSC বা কৃষি দফতরে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করা যাবে।
কিস্তির স্ট্যাটাস চেক করবেন কীভাবে?
১. https://pmkisan.gov.in ওয়েবসাইটে যান।
২. ‘Know Your Status’ অপশনে ক্লিক করুন।
৩. রেজিস্ট্রেশন নম্বর বা আধার নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করুন।
PM-Kisan কী?
২০১৯ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের অন্তর্বর্তী বাজেটে ঘোষিত এই যোজনা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরাসরি বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) প্রকল্প। এর মাধ্যমে কৃষকরা বছরে ৬,০০০ টাকা তিনটি কিস্তিতে পান।
কারা উপযুক্ত?
ভারতের নাগরিক হতে হবে।
চাষের যোগ্য জমি থাকা আবশ্যক।
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক হতে হবে।
মাসে ১০,০০০ টাকার বেশি পেনশন পাওয়া যাবে না।
আয়করদাতা হওয়া চলবে না।
কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ভূমি থাকা যাবে না।
নতুন আবেদন করবেন কীভাবে?
১. https://pmkisan.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘New Farmer Registration’ অপশনে ক্লিক করুন।
২. আধার নম্বর এবং ক্যাপচা কোড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন শুরু করুন।
৩. প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করুন এবং সাবমিট করুন।
৪. প্রিন্ট আউট নিয়ে রাখুন।
যেকোনো সমস্যা হলে PM-Kisan হেল্পলাইন নম্বরে (155261 অথবা 011-24300606) কল করতে পারেন।
যদি মোবাইল নম্বর বা e-KYC এখনও সম্পূর্ণ না হয়, তবে দ্রুত তা সেরে ফেলুন। কারণ, জুলাই মাসের মধ্যে কিস্তি দেওয়া শুরু হলে, এই কাজগুলি না করা থাকলে টাকা পেতে দেরি হতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অতএব, সময় থাকতে থাকতেই নিজের তথ্য আপডেট করুন, e-KYC সম্পূর্ণ করুন এবং নিশ্চিত করুন, যাতে আপনি আগামী কিস্তির টাকা সময়মতো পেতে পারেন। দেশের কৃষকদের জন্য এই আর্থিক সহায়তা একটি বড় প্রাপ্তি, যা কৃষি কাজের খরচ মেটাতে এবং আর্থিক স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।