উন্নয়নের নতুন দিগন্ত! বাংলায় কী বাড়ছে জৈব কৃষির প্রবণতা?

কলকাতা: জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার উত্থানের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে জৈব চাষের (Organic Farming) প্রবণতা ২০২৫ সালে নতুন গতি লাভ করেছে। রাসায়নিক সার…

Organic Farming: Top Pesticide Alternatives for Organic Farmers in India: Safe Crop Protection Solutions for 2025

কলকাতা: জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার উত্থানের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে জৈব চাষের (Organic Farming) প্রবণতা ২০২৫ সালে নতুন গতি লাভ করেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহারে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও, রাজ্য সরকার এবং কৃষক সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে জৈব কৃষি এখন একটি টেকসই বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারত সরকারের জাতীয় জৈব উৎপাদন কর্মসূচি (এনপিওপি) এর অধীনে ২০২৪-২৫ অর্ধবর্ষে রাজ্যে জৈব চাষের আওতায় আচ্ছাদিত এলাকা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতা শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়, বরং কৃষকদের আয়বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদনকেও উৎসাহিত করছে।

Advertisements

Also Read | কৃষি-প্রযুক্তি স্টার্টআপ! কৃষকদের জন্য এআই এবং ড্রোন প্রযুক্তির বিপ্লব

পশ্চিমবঙ্গ ভারতে জৈব খাদ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হিসেবে স্বীকৃত। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে, রাজ্যে জৈব চাষের মাধ্যমে ধান, সবজি এবং তেলবীজের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলি জেলায় ৩২টি জৈব গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে কৃষকরা রাসায়নিকমুক্ত চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এই উদ্যোগে সরকারের স্বনির্ভর কৃষি প্রকল্প এবং প্যারাম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা (পিকেভিওয়াই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে, কৃষকরা জৈব সার তৈরি এবং জৈব কীটনাশকের ব্যবহার শিখছেন, যা মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করছে।

   
How to Start Organic Vegetable Farming in West Bengal 2025: Step-by-Step Government Guidelines
How to Start Organic Vegetable Farming in West Bengal 2025: Step-by-Step Government Guidelines

২০২৫ সালে জৈব কৃষির অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রবণতা হলো প্রযুক্তির একীকরণ। সুইচঅন ফাউন্ডেশনের মতো এনজিওর সহায়তায় বাঁকুড়া এবং নদীয়া জেলায় সোলার-চালিত জৈব চাষ শুরু হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সিমুরালি গ্রামের কৃষক মায়া খাঁ অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং (এডব্লিউডি) পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের ফলন ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছেন, যাতে জলসেচনের খরচ কমেছে এবং পরিবেশ রক্ষা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ৭০০টি জল পর্যায়কারী নির্মাণ করা হয়েছে, যা কৃষকদের জলসেচনের নতুন দক্ষতা শেখাচ্ছে। একইভাবে, জট্রাপুর গ্রামে সোলার পাওয়ারযুক্ত সেচ ব্যবস্থা জৈব সবজি চাষকে আরও লাভজনক করে তুলেছে। এছাড়া, মিলেট (শস্যবিশেষ) চাষের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা পুষ্টিকর এবং জল-সংরক্ষণকারী ফসল হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

Also Read | জিএসটি সংস্কারে কৃষি, দুগ্ধ ও সমবায় খাতে নতুন দিগন্ত

কিন্তু চ্যালেঞ্জও কম নয়। জৈব চাষের জন্য সার্টিফিকেশন খরচবহুল, বিশেষ করে ছোট কৃষকদের জন্য। পার্টিসিপেটরি গ্যারান্টি সিস্টেম (পিজিএস) এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, কিন্তু বাজারবিক্রয়ের অভাব এবং মূল্য স্থিতিশীলতার অভাব কৃষকদের হতাশ করে। ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় (জার্নাল অফ অ্যাডভান্সেস ইন বায়োলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি) উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজ্যে জৈব চাষের সম্ভাবনা বিপুল হলেও, নীতিগত সহায়তা এবং প্রশিক্ষণের অভাবে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত। সরকার এখন নতুন জৈব কৃষি নীতি প্রণয়নের কথা ভাবছে, যাতে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা এবং বাজার সংযোগ বাড়ানো যায়।

জৈব চাষের প্রভাব কেবল কৃষি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে। কলকাতা এবং অন্যান্য শহুরে এলাকায় জৈব খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে ৪০ শতাংশ, যা স্টার্টআপগুলোকে উৎসাহিত করছে। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জৈব উৎপাদকের দেশ হিসেবে ২৩ লক্ষ হেক্টর এলাকায় জৈব চাষ করে, এবং পশ্চিমবঙ্গ এতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০২৫ সালে, রাজ্যের জৈব চাষকারীরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের স্বপ্ন দেখছেন, যা রপ্তানি সুযোগ বাড়াবে।

Also Read | ‘কৃষি নয় ভারতের মেরুদন্ড শক্ত হবে শিল্পে’, দাবি প্ৰাক্তন কৃষিমন্ত্রীর

সামগ্রিকভাবে, পশ্চিমবঙ্গের জৈব কৃষির প্রবণতা ২০২৫ সালে টেকসই উন্নয়নের প্রতীক। সরকার, এনজিও এবং কৃষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় এটি একটি সফল মডেলে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও বিনিয়োগ দরকার। জৈব চাষ শুধু ফসল নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের বীজ। কৃষকরা এখন আশাবাদী, এবং রাজ্যের কৃষি অর্থনীতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে প্রস্তুত।

 

Organic Farming ,West Bengal , Sustainable Agriculture ,Natural Farming Initiatives , Organic Crop Production Bengal,