জৈব চাষ (Organic Farming) ভারতের ক্ষুদ্র পরিসরে চাষ করা কৃষকদের জন্য বহু বছর ধরে একটি সম্ভাবনাময় পথ। যা তাদের আয় দ্বিগুণ করার পাশাপাশি টেকসই কৃষি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতি কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমায় এবং উচ্চমূল্যের বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে জৈব চাষের (Organic Farming)আওতায় প্রায় ৪৪ লক্ষ হেক্টর জমি রয়েছে, এবং এর সম্প্রসারণ ক্ষুদ্র পরিসরে চাষ করা কৃষকদের আর্থিক স্বনির্ভরতার পথ প্রশস্ত করছে।জৈব চাষের প্রধান সুবিধা হলো উৎপাদন খরচ কমানো। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে কৃষকরা গোবর, কম্পোস্ট, জৈব সার, এবং প্রাকৃতিক কীটনাশক যেমন নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
এটি কৃষকদের (Organic Farming) ব্যয় ৩০-৪০% কমিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র পরিসরে চাষ কৃষকদের থেকে জানা গেছে ধান ও শাকসবজির জৈব চাষে স্যুইচ করার পর তাদের বার্ষিক খরচ ৫০,০০০ টাকা থেকে কমে ২০,০০০ টাকায় এসেছে, এবং তাঁর আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।জৈব পণ্যের বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা কৃষকদের আয় বাড়ানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
শহরাঞ্চলের স্বাস্থ্য-সচেতন গ্রাহকরা জৈব খাদ্যের জন্য ২০-৫০% বেশি মূল্য দিতে প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক বাজারেও জৈব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায়। ভারতের জৈব রপ্তানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১.২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ক্ষুদ্র কৃষকরা স্থানীয় কৃষক (Organic Farming)বাজার, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, এবং জৈব খুচরা চেইনের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি করে উচ্চ মুনাফা অর্জন করছেন।
জৈব চাষ (Organic Farming) মাটির উর্বরতা বজায় রাখে এবং ফসলের বৈচিত্র্য বাড়ায়, যা কৃষকদের ঝুঁকি কমায়। একাধিক ফসল চাষের মাধ্যমে কৃষকরা একটি ফসল ব্যর্থ হলেও অন্য ফসল থেকে আয় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কৃষক ধানের পাশাপাশি জৈব সবজি ও মশলা চাষ করে তাদের বার্ষিক আয় ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকায় উন্নীত করেছেন।
এছাড়া, জৈব চাষে (Organic Farming) জলের ব্যবহার কম হয়, যা খরাপ্রবণ এলাকার কৃষকদের জন্য উপকারী।সরকারি উদ্যোগও জৈব চাষের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পারম্পরিক কৃষি উন্নয়ন যোজনা (পিকেভিওয়াই) এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জৈব কৃষি নীতি কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ভর্তুকি, এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা প্রদান করে।
পশ্চিমবঙ্গে জৈব কৃষকদের জন্য ১০০টিরও বেশি ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশন (এফপিও) গঠিত হয়েছে, যা তাদের বাজার সংযোগ এবং ঋণ সুবিধা প্রদান করে।তবে, জৈব চাষে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জৈব চাষে ফলন কম হতে পারে, এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং বাজার পরিকাঠামোর অভাবও একটি বাধা। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সরকারি সহায়তার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।জৈব চাষ ক্ষুদ্র কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক(Organic Farming)। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার এক কৃষক বলেন, “জৈব চাষে আমার মাটি সুস্থ হয়েছে, ফসলের গুণমান বেড়েছে, এবং বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি।”
অষ্টম বেতন কমিশন ও অবসর পরিকল্পনা: কতটা অতিরিক্ত সঞ্চয় করতে পারবেন?
তাঁর মত হাজারো কৃষক জৈব চাষের (Organic Farming) মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করছেন।সামাজিক মাধ্যমে জৈব চাষ নিয়ে উৎসাহজনক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “জৈব চাষ কৃষকদের জন্য সোনার খনি। এটি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।”
বিশ্লেষকদের মতে, জৈব চাষের সম্প্রসারণ কৃষকদের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি ভারতকে বিশ্বের জৈব খাদ্য হাবে পরিণত করতে পারে। ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য সঠিক নীতি, প্রশিক্ষণ, এবং বাজার সংযোগ নিশ্চিত করতে পারলে জৈব চাষ তাদের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।