কৃষকদের কাছ থেকে সেচের জন্য জল ব্যবহারের চার্জ আদায় করা হবে — সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় কৃষক সমাজে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্র সরকার শনিবার একটি সরকারি বিবৃতি জারি করে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে যে, এই ধরনের খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন।
জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা পুনরুজ্জীবন দপ্তর, জল শক্তি মন্ত্রকের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘মিডিয়ার কিছু অংশে প্রকাশিত হয়েছে যে, ‘মর্ডানাইজেশন অফ কমান্ড এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট স্কিম’ (M-CADWM Scheme) প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের জল ব্যবহার বাবদ চার্জ দিতে হবে। এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং বিভ্রান্তিকর সংবাদ।’’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই প্রকল্পটি ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা’ (PMKSY)-এর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে এবং এর মূল উদ্দেশ্য irrigation efficiency বা সেচের দক্ষতা বৃদ্ধি, জল বিতরণের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা বজায় রাখা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা। এর মধ্যে pressurized pipeline network, IoT (Internet of Things) ডিভাইস এবং SCADA (Supervisory Control and Data Acquisition) সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা আরও সঠিক এবং স্বচ্ছ জল বণ্টনের প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।
মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, ‘‘এই পাইলট প্রকল্পে কোথাও কৃষকদের ওপর জল ব্যবহারের জন্য চার্জ আরোপের কোনো বিধান নেই। সরকারের কোনো নির্দেশও নেই যাতে কৃষকদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে জল বাবদ অর্থ আদায় করা হবে।’’
সম্প্রতি একটি সাংবাদিক বৈঠকে এই বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে জল শক্তি মন্ত্রী সি. আর. পাটিলও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, কৃষকদের জল বাবদ কোনো চার্জ ধার্য করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
কৃষক-সমাজে বিভ্রান্তি দূর করতে গুরুত্বারোপ
মন্ত্রকের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, ভারতীয় সংবিধানের ধারা অনুযায়ী ‘কৃষি’ এবং ‘জল’ — দুটি বিষয়ই রাজ্যের অধীনে পড়ে। ফলে, যদি কোনো রাজ্য সরকার জল ব্যবহারকারি সমিতি বা প্রকল্পের উপভোক্তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ইউজার চার্জ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। কেন্দ্রের তরফ থেকে এর জন্য কোনো নির্দেশ জারি করা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও করা হবে না বলে মন্ত্রক আশ্বাস দিয়েছে।
মিডিয়ার দায়িত্ব ও সতর্কতার আহ্বান
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের ভুল খবর কৃষক সমাজে অযথা আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি করছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ, কোনো খবর প্রকাশের আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা হোক এবং সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে খবর প্রকাশ করা হোক।’’
দেশজুড়ে ইতিমধ্যেই কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে এই খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক নেতারা সরকারের কাছে স্পষ্টীকরণের দাবি জানিয়েছিলেন। একাধিক জায়গায় ক্ষোভপ্রকাশের ঘটনাও ঘটে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে আসা এই স্পষ্ট বার্তা কৃষক-সমাজকে অনেকটাই স্বস্তি দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
M-CADWM প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য
কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, M-CADWM প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো সেচ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং জলের অপচয় রোধ করা। ভারতের অনেক অঞ্চলে এখনও প্রথাগত খাল এবং নালা পদ্ধতিতে জল বণ্টন করা হয়, যা অকারণে প্রচুর জল নষ্ট করে। নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে pressurized পাইপলাইন বসানো, সেন্সর ও রিমোট মনিটরিং সিস্টেম বসানো, এবং প্রযুক্তিনির্ভর সঠিক পরিমাপের সুবিধা চালু করা হবে। এর ফলে কৃষকেরা সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে জল পেতে সক্ষম হবেন, যা ফসল উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে।
কেন্দ্রের এই প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যেই পাইলট হিসেবে কিছু অঞ্চলে কাজ শুরু হয়েছে। মন্ত্রক বলেছে, ‘‘এই প্রকল্পটি কোনোভাবেই কৃষকদের ওপর আর্থিক বোঝা চাপানোর উদ্দেশ্যে তৈরি হয়নি, বরং তাদের জীবনযাত্রা উন্নত করা এবং কৃষিক্ষেত্রে জল-দক্ষতা বাড়ানোই মূল লক্ষ্য।’’
কৃষকদের জন্য ভবিষ্যৎ বার্তা
বিবৃতির শেষে মন্ত্রক স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, কৃষক সমাজের জন্য কোনো প্রকার জল চার্জ আরোপের পরিকল্পনা নেই। যেকোনো রকম বিভ্রান্তি বা ভুল তথ্য সম্পর্কে তারা সরাসরি মন্ত্রকের ওয়েবসাইট বা জেলা পর্যায়ের অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
এই বিবৃতির মাধ্যমে কেন্দ্রের তরফ থেকে কৃষক সমাজকে পুনরায় আশ্বস্ত করা হলো যে, তাদের ওপর কোনো নতুন চার্জ আরোপের আশঙ্কা নেই। ফলে যারা বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে আতঙ্কিত ছিলেন, তারা নিশ্চিন্তে চাষের কাজে মন দিতে পারেন।