কৃষকদের পকেট ভরাতে ২৪ হাজার কোটি দিল মোদী সরকার

ভারতের কৃষক সম্প্রদায়ের জীবনে এক নতুন আলোকের রশ্মি ফেলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত বুধবার একটি বৃহৎ উদ্যোগ নিয়ে এসেছে। “প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি…

Cabinet Approves PM Dhan-Dhaanya Krishi Yojana With Rs 24,000 Crore Annual Outlay

ভারতের কৃষক সম্প্রদায়ের জীবনে এক নতুন আলোকের রশ্মি ফেলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত বুধবার একটি বৃহৎ উদ্যোগ নিয়ে এসেছে। “প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা” (Dhan-Dhaanya Yojana) নামে পরিচিত এই পরিকল্পনাটি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে পরবর্তী ছয় বছরের জন্য কার্যকর হবে এবং এর মাধ্যমে প্রতি বছর ২৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই যোজনাটির লক্ষ্য হলো দেশের ১০০টি কৃষি অঞ্চলকে উন্নত করা, যেখানে ফসল উৎপাদন কম, ফসল চাষের তীব্রতা কম এবং কৃষকদের কাছে কৃষি ঋণের প্রবাহ সীমিত। এই পরিকল্পনাটি প্রধানত কৃষকদের আয় বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি প্রচারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।

যোজনার প্রধান লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য
“প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা” এর মাধ্যমে সরকার কৃষকদের জীবনযাত্রা উন্নত করতে চায়। এই যোজনাটি ১১টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের ৩৬টি বিদ্যমান পরিকল্পনার সঙ্গে সংযোজিত হবে, যার ফলে রাজ্য পর্যায়ের প্রকল্প এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে উঠবে। এই ১০০টি জেলাকে নির্বাচন করা হবে তিনটি মূল সূচকের ভিত্তিতে—নিম্ন উৎপাদনশীলতা, কম ফসল চাষের তীব্রতা এবং কম ঋণ বিতরণ। প্রতিটি রাজ্যের জেলা সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে তাদের শস্যজমি এবং চাষের আঞ্চলিক ভাগের ওপর ভিত্তি করে।

   

যোজনাটির প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ফসলের বিস্তৃত ব্যবহার ও টেকসই কৃষি পদ্ধতির প্রচার, পঞ্চায়েত ও ব্লক পর্যায়ে পরবর্তী ফসল সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতি, সেচ সুবিধা উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী ঋণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। এই উদ্যোগটি প্রায় ১.৭ কোটি কৃষককে সুনামের সুযোগ প্রদান করবে, যা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে একটি বড় ধন্যবাদজ্ঞক পরিবর্তন আনতে পারে।

নিটি আয়োগের আকাঙ্ক্ষিত জেলা প্রোগ্রাম থেকে প্রেরণা
এই যোজনাটি নিটি আয়োগের “আকাঙ্ক্ষিত জেলা প্রোগ্রাম” থেকে প্রেরণা নিয়েছে, যা ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১১২টি উন্নয়নহীন জেলাকে দ্রুত উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রোগ্রামটি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, কৃষি ও জল সম্পদ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং ভিত্তিস্থাপনা গড়ার মতো পাঁচটি প্রধান সামাজিক-অর্থনৈতিক থিমের ওপর ভিত্তি করে ৪৯টি কার্যক্ষমতা সূচকের মাধ্যমে জেলাগুলোকে মাসিক ভাবে র্যাঙ্কিং দেয়। “ধন-ধান্য কৃষি যোজনা” এই মডেলটিকে গ্রহণ করে কেবল কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে, যা এটিকে একটি অভিনব উদ্যোগ হিসেবে স্থাপন করেছে।

বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ
যোজনাটির বাস্তবায়নে জেলা, রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে, যা পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি জেলায় “জেলা ধন-ধান্য সমিতি” গঠন করা হবে, যার সদস্য হিসেবে উন্নত কৃষকদেরও নিয়োগ করা হবে। এই সমিতি জেলার কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, যা জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা যেমন ফসলের বিস্তৃত ব্যবহার, জল ও মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং প্রাকৃতিক ও জৈবিক   বিস্তারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

প্রতিটি “ধন-ধান্য জেলা”-এর অগ্রগতি ১১৭টি কার্যক্ষমতা সূচকের মাধ্যমে মাসিক ভিত্তিতে একটি ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিটি আয়োগ জেলা পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা ও সহায়তা করবে, এবং প্রতিটি জেলার জন্য কেন্দ্রীয় নোডাল কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে যারা নিয়মিতভাবে যোজনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন। এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কৃষকদের জন্য আর্থিক সুবিধা এবং সরকারের জন্য উন্নত পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

Advertisements

কৃষকদের প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য প্রভাব
পশ্চিমবঙ্গের কৃষক সম্প্রদায় এই যোজনার প্রতি আশাবাদী। মেদিনীপুরের একজন কৃষক শশাঙ্ক সাহা বলেন, “যদি সরকার সত্যিই সেচ ও ঋণের সুবিধা দেয়, তাহলে আমাদের ফসল উৎপাদন বাড়বে এবং আমরা আমাদের পরিবারকে ভালোভাবে রাখতে পারব।” তবে কিছু কৃষক ব্যক্ত করেছেন যে, যোজনার সফল বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা এবং কার্যকরী পর্যবেক্ষণ জরুরি।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাহেদুল ইসলামের মতে, এই যোজনা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি ভারতের কৃষি অর্থনীতিতে ১৫-২০% উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি আনতে পারে। এই প্রকল্পটি কেবল কৃষকদের পকেট ভরানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গ্রামীণ উন্নয়ন ও জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেও এগিয়ে যাবে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
যদিও এই যোজনা বড় প্রতিশ্রুতি বহন করে, তবুও এর সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের দক্ষতার ওপর। জমির অংশীকরণ, মনসূনের ওপর নির্ভরশীলতা এবং প্রযুক্তির কম ব্যবহারের মতো চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করা জরুরি। সরকারের জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে যে, তিনি কৃষকদের জীবনকে উন্নত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারেন।

সুতরাং, “প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা” কৃষকদের জন্য একটি আশার আলো হতে পারে, যদি এটি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। ২৪ হাজার কোটি টাকার এই বিনিয়োগ ভারতীয় কৃষি খাতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে, যা দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে।