কিষাণ ক্রেডিট কার্ড ঋণ এখন ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

নয়াদিল্লি, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতীয় কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন যে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (Kisan…

Kisan Credit Card Relevance

নয়াদিল্লি, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতীয় কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন যে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (Kisan Credit Card) স্কিমের অধীনে ঋণের সীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ কৃষকদের জন্য আর্থিক স্বস্তি আনতে এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমানে ৭.৭ কোটি কৃষক, মৎস্যজীবী এবং দুগ্ধ খামারিদের কাছে কেকেসি (Kisan Credit Card) রয়েছে, যারা তাদের স্বল্পমেয়াদি আর্থিক চাহিদা মেটাতে এই সুবিধা ব্যবহার করছেন। এই ঋণ বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা ফসল উৎপাদন, ফসল পরবর্তী ব্যয়, খামার রক্ষণাবেক্ষণ এবং পশুপালন ও মৎস্যচাষের মতো সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপের জন্য আরও সহজে ঋণ পাবেন। কৃষকদের জন্য এই নতুন সীমা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা এই সুবিধার পুরো সদ্ব্যবহার করতে পারেন।

   

Kisan Credit Card

Also Read | কীটনাশক নিষেধাজ্ঞায় ধান ও তুলা চাষীদের উপর প্রভাব

কেকেসি স্কিমটি (Kisan Credit Card) ১৯৯৮-৯৯ সালে চালু হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত এবং সময়মতো ঋণ সুবিধা প্রদান। এই স্কিমের মাধ্যমে কৃষকরা ফসল উৎপাদন, ফসল পরবর্তী ব্যয়, খামার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপের জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ পান। ২০১৯ সালে এই স্কিমটি পশুপালন এবং মৎস্যচাষের জন্যও প্রসারিত করা হয়। বর্তমানে, ১.৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কেকেসি (Kisan Credit Card) ঋণ জামানত ছাড়াই পাওয়া যায়, এবং নতুন ঘোষণার মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের সীমা বাড়ানো হয়েছে। এই ঋণ ৪%-৭% সুদের হারে সরবরাহ করা হয়, যা মহাজনদের উচ্চ সুদের হারের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। তবে, এই সুবিধা পাওয়ার জন্য কৃষকদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যেমন জমির মালিকানার প্রমাণ বা ভাড়াটে চাষির ক্ষেত্রে রেকর্ডকৃত অধিকার।

Kisan Credit Card
Kisan Credit Card

২০২৫-২৬ বাজেটে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১,৩৭,৭৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২.৭৫% কম। তবে, কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এই বাজেটকে “দূরদর্শী” বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এতে কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং কৃষকদের কল্যাণের জন্য একাধিক প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন কেকেসি (Kisan Credit Card) ঋণ সীমা ছাড়াও, সরকার ১০০টি নিম্ন-উৎপাদনশীল জেলায় একটি বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে, যা ফসলের বৈচিত্র্যকরণ, টেকসই কৃষি অনুশীলন এবং দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ঋণের সহজলভ্যতা বাড়ানোর উপর জোর দেয়। এই প্রকল্পটি রাজ্যগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বে বাস্তবায়িত হবে এবং বিশেষ করে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের উপকার করবে।

Advertisements

Also Read | বপন মরশুমে বীজের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

কৃষকদের জন্য এই ঋণ বৃদ্ধির সুবিধাগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বর্ধিত ঋণ সীমা কৃষকদের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, উন্নত বীজ, সার, এবং কীটনাশক কেনার জন্য আরও আর্থিক স্বাধীনতা দেবে। দ্বিতীয়ত, এটি তাদের ফসল পরবর্তী ব্যয় এবং খামার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করবে। তৃতীয়ত, পশুপালন এবং মৎস্যচাষের মতো সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে নিয়োজিত কৃষকরাও এই সুবিধা পাবেন। তবে, কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছে এই ঋণের সুবিধা পৌঁছানো নিশ্চিত করা একটি বড় সমস্যা। ২০১৯-২০ সালে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের মাত্র ৪৭.৩% ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছে পৌঁছেছে। এছাড়া, জটিল ব্যাঙ্কিং প্রক্রিয়া এবং জামানতের অভাবের কারণে অনেক কৃষক এখনও অ-প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন।

Kisan Credit Card vs Personal Loan
Kisan Credit Card vs Personal Loan

সরকার এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জমির রেকর্ড ডিজিটাইজেশন এবং ফিনটেক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনের উচ্চ প্রবেশ (৮৯.১% কৃষি পরিবারে) কাজে লাগিয়ে, কৃষকরা এখন অ্যাপের মাধ্যমে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন, যেখানে স্যাটেলাইট ইমেজারি ব্যবহার করে জমির মালিকানা যাচাই করা হয়। এছাড়া, ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (নাবার্ড) জয়েন্ট লায়াবিলিটি গ্রুপ (জেএলজি) এবং ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন (এফপিও)-এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণের জন্য ১০০% রিফাইন্যান্স সাপোর্ট প্রদান করছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারকে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে এবং ছোট কৃষকদের জন্য ঋণের লক্ষ্য ৮% থেকে ১০% করতে হবে।

কৃষকদের জন্য পরামর্শ হলো, তারা যেন তাদের নিকটস্থ ব্যাঙ্ক বা সমবায় সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে কেকেসি স্কিমের (Kisan Credit Card) সুবিধা সম্পর্কে জানেন। প্রয়োজনীয় নথি, যেমন পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণ এবং জমির মালিকানার নথি প্রস্তুত রাখা উচিত। এছাড়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঋণের আবেদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা যায়। সরকারের এই পদক্ষেপ কৃষকদের আর্থিক স্বাধীনতা বাড়াতে এবং কৃষি খাতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে সহায়ক হবে, তবে এর সফলতা নির্ভর করবে সঠিক বাস্তবায়ন এবং সচেতনতার উপর।