কম খরচে বেশি লাভ, লেবুচাষে বদলাচ্ছে গ্রামের অর্থনীতি

কৃষি চাষের মানচিত্রে এখন এক নতুন অধ্যায় লিখছে পাতিলেবু (Lemon For Profit) । গতানুগতিক ধান বা শাকসবজি চাষের পরিবর্তে ক্রমশই অনেক চাষি ঝুঁকছেন এই বিকল্প…

lebu chash

কৃষি চাষের মানচিত্রে এখন এক নতুন অধ্যায় লিখছে পাতিলেবু (Lemon For Profit) । গতানুগতিক ধান বা শাকসবজি চাষের পরিবর্তে ক্রমশই অনেক চাষি ঝুঁকছেন এই বিকল্প ফসলের দিকে। কারণ স্পষ্ট—অল্প ব্যয়, কম পরিশ্রম, আর তাতে নিশ্চিত মুনাফা। একদিকে স্থানীয় বাজারে চাহিদা, অন্যদিকে ভিনরাজ্যে রফতানির সুযোগ—সব মিলিয়ে পাতিলেবু চাষ এখন কৃষকদের কাছে যেন “লক্ষ্মীলাভের” হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

পাতিলেবুর(Lemon For Profit) ব্যবহার বহুমুখী। গরমকালে শরবত দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় হোটেল-রেস্তোরাঁ পর্যন্ত এই টক-মিষ্টি ফলের কদর আকাশছোঁয়া। ঘরোয়া রান্না, আচার, কিংবা পানীয়—সব ক্ষেত্রেই পাতিলেবুর প্রয়োজন রয়েছে সারাবছর। গ্রীষ্মকালে চাহিদা বেড়ে গেলেও শীতকালেও এর ব্যবহার থেমে থাকে না। চাহিদা বেশি হওয়ায় অনেক সময় বাজারে দামও বেড়ে যায়, যা উৎপাদকদের জন্য বাড়তি লাভের পথ খুলে দেয়।

   

চাষিদের মতে, পাতিলেবু (Lemon For Profit) চাষের বড় সুবিধা হলো এতে যত্ন ও খরচ দুটোই কম লাগে। অন্যান্য ফসলের মতো অতিরিক্ত সার, কীটনাশক বা সেচের প্রয়োজন হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই এই গাছ গরম ও আর্দ্রতা সহ্য করতে পারে। একবার গাছ লাগালে প্রায় এক দশক পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। ফলে একই জমি থেকে দীর্ঘমেয়াদি লাভ সম্ভব হয়।

পূর্বস্থলীর চাষি তোতন সাঁতরা জানালেন, “প্রায় কুড়ি বছর ধরে আমরা হাইব্রিড পাতিলেবুর(Lemon For Profit) চাষ করছি। এটি খুবই লাভজনক। খরচ কম, যত্নও সহজ। যাদের জমি বেশি, তারা এখন ধান বা পাটের বদলে পাতিলেবু বেশি লাগাচ্ছেন।” তাঁর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, গাছ লাগানোর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফলন শুরু হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে বছরে দুবার ফল পাওয়া যায়, এবং প্রতিবারেই চার থেকে পাঁচ হাজার লেবু উৎপন্ন হয়।

বাজারদরের দিক থেকে দেখা যায়, পৌষ মাসে পাতিলেবুর দাম(Lemon For Profit) বেশি থাকে—প্রতি লেবু পাইকারি দরে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত ওঠে। বছরের অন্য সময়ে দাম কিছুটা কমে ২ থেকে ৩ টাকায় নেমে আসে। তবে পরিমাণ বেশি হওয়ায় সারা বছরই আয় সন্তোষজনক থাকে। শুধু স্থানীয় পাইকার নন, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্য থেকেও ব্যবসায়ীরা পূর্বস্থলীতে এসে লেবু কিনে নিয়ে যান। এতে স্থানীয় অর্থনীতির চাকা ঘুরছে দ্রুততর।

Advertisements

পাতিলেবু (Lemon For Profit) চাষ শুধু পুরুষ চাষিদের জন্যই নয়, গ্রামের মহিলাদের কাছেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। ফল তোলা, বাছাই করা, প্যাকেট করা—এই সব কাজে মহিলারা যুক্ত হচ্ছেন। এতে তাঁদের হাতে আলাদা আয়ের উৎস তৈরি হচ্ছে, যা পরিবারিক আর্থিক অবস্থাকে আরও শক্তিশালী করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের জলবায়ু ও মাটি পাতিলেবু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। খুব কম জল ও সারেই এর চাষ সম্ভব, আর রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম হয়। এ কারণে আগামী দিনে আরও অনেক কৃষক এই চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে পূর্বস্থলীতে পাতিলেবু (Lemon For Profit) এখন শুধু একটি ফসল নয়, বরং কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি এটি কৃষি বহুমুখীকরণেরও এক উজ্জ্বল উদাহরণ। যে চাষ একসময় হয়তো গৃহস্থালির বাগানে সীমাবদ্ধ ছিল, আজ তা রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে বহুদূর পৌঁছে গেছে—ঠিক যেমন এই ছোট্ট লেবুর স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষের জীবনে।