জুলাইয়ে ধান, গম এবং ডালের জন্য নতুন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা – সম্পূর্ণ তালিকা

ভারতের কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ধান, গম এবং বিভিন্ন ডাল জাতীয় ফসলের নতুন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) ঘোষণা করেছে।…

India Announces New MSP Rates for Paddy, Wheat, and Pulses

ভারতের কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ধান, গম এবং বিভিন্ন ডাল জাতীয় ফসলের নতুন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণা দেশের কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এটি কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নতুন এমএসপি হারগুলি কৃষকদের জন্য লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ঘোষিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা নতুন এমএসপি হার এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নতুন এমএসপি হার: ধান, গম এবং ডাল
কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০২৫-২৬ খরিফ এবং রবি মরসুমের জন্য প্রধান ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করেছে। ধানের জন্য নতুন এমএসপি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কুইন্টালে ২,৩৬৯ টাকা (সাধারণ জাত) এবং গ্রেড-এ জাতের জন্য ২,৪০০ টাকা। গমের জন্য এমএসপি নির্ধারিত হয়েছে প্রতি কুইন্টালে ২,৪২৫ টাকা। এছাড়া, ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে মসুর ডালের জন্য ৬,৪০০ টাকা, মুগ ডালের জন্য ৮,৫০০ টাকা এবং চণার জন্য ৫,৫০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হারগুলি গত বছরের তুলনায় গড়ে ৫-৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কৃষকদের জন্য স্বস্তির খবর।

   

এই নতুন মূল্য ঘোষণা কৃষি খরচ এবং মূল্য কমিশনের (CACP) সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়েছে। সরকারের দাবি, এই বৃদ্ধি কৃষকদের উৎপাদন খরচের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি লাভ নিশ্চিত করবে। উদাহরণস্বরূপ, ধানের উৎপাদন খরচ প্রতি কুইন্টালে প্রায় ১,৫৮০ টাকা হলেও নতুন এমএসপি কৃষকদের প্রায় ৮০০ টাকা অতিরিক্ত লাভ দেবে। একইভাবে, গম এবং ডালের ক্ষেত্রেও কৃষকরা উৎপাদন খরচের তুলনায় উল্লেখযোগ্য লাভ পাবেন।

কৃষকদের জন্য তাৎপর্য
নতুন এমএসপি হার ঘোষণা কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতের কৃষি অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য মূল্যের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশেষ করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে কৃষক আন্দোলনের মূল দাবি ছিল এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি। যদিও সরকার এখনও এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি দেয়নি, তবে নতুন হারগুলি কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জানিয়েছেন, “আমাদের লক্ষ্য কৃষকদের স্বাবলম্বী করা এবং তাদের আয় দ্বিগুণ করা। নতুন এমএসপি হার এই লক্ষ্যের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।” তিনি আরও বলেন, সরকার কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থা এবং কৃষকদের জন্য ঋণ সুবিধা বৃদ্ধির দিকে কাজ করছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ধান-ধান্য যোজনার মতো প্রকল্পগুলি কৃষকদের সরাসরি উপকৃত করবে।

চ্যালেঞ্জ এবং সমালোচনা
যদিও নতুন এমএসপি হার কৃষকদের জন্য সুখবর, তবুও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রথমত, এমএসপি-র সুবিধা কেবলমাত্র সরকারি সংগ্রহ কেন্দ্রে ফসল বিক্রি করা কৃষকরা পান। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ কৃষক, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ওড়িশার মতো রাজ্যে, বাজারে ফসল বিক্রি করেন, যেখানে তারা প্রায়ই এমএসপি-র চেয়ে কম দাম পান। দ্বিতীয়ত, সংগ্রহ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং সঞ্চয়াগারের অভাব কৃষকদের জন্য বড় সমস্যা। তৃতীয়ত, কিছু কৃষক নেতা এবং বিশ্লেষক মনে করেন, এমএসপি বৃদ্ধির হার উৎপাদন খরচ এবং মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় পর্যাপ্ত নয়।
পাঞ্জাবের একজন কৃষক নেতা বলেন, “এমএসপি বৃদ্ধি স্বাগতযোগ্য, কিন্তু এর আইনি গ্যারান্টি না থাকলে কৃষকরা পুরোপুরি উপকৃত হবে না।” তিনি আরও দাবি করেন, সরকারের উচিত সকল ফসলের জন্য এমএসপি নিশ্চিত করা এবং সংগ্রহ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা।

Advertisements

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য এই এমএসপি বৃদ্ধি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। রাজ্যে ধান এবং ডালের চাষ ব্যাপকভাবে হয়, তবে সরকারি সংগ্রহ ব্যবস্থার অভাবে অনেক কৃষক বাজারে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কিছু সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে, তবে এটি এখনও পর্যাপ্ত নয়। নতুন এমএসপি হার কৃষকদের আয় বাড়াতে সাহায্য করলেও, সংগ্রহ ব্যবস্থার উন্নতি এবং বাজার সংযোগ জোরদার করা প্রয়োজন।

এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জলবায়ু সহনশীল ফসল এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যেতে পারে। সরকারের নতুন এমএসপি হার এবং প্রধানমন্ত্রী ধান-ধান্য যোজনার মতো উদ্যোগগুলি এই দিকে কাজ করছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নতুন এমএসপি হার কৃষকদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, এর সাফল্য নির্ভর করছে সরকারি সংগ্রহ ব্যবস্থার প্রসার, সঞ্চয়াগারের উন্নতি এবং কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সুবিধার উপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের কৃষি খাতকে বিশ্বের ফুড বাস্কেটে পরিণত করতে হলে এমএসপি-র পাশাপাশি কৃষি অবকাঠামো, বাজার সংযোগ এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি পদ্ধতির উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।

এই নতুন এমএসপি হার কৃষকদের জন্য একটি নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। তবে, এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং কৃষকদের কাছে এর সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনে এই উদ্যোগ কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং ভারতের কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে কতটা সফল হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সূত্র: কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ঘোষণা এবং এক্স-এ প্রচারিত তথ্য।