গোবিন্দভোগে বদলে যাচ্ছে গ্রামের অর্থনীতি, ‘দিদি’দের হাত ধরেই সাফল্য

জঙ্গলমহলের বুক চিরে এখন বইছে সুবাসিত ধানের সুগন্ধ। একসময় (Jamboni)  মাওবাদী উপদ্রুত ছিল যে অঞ্চল, সেই ঝাড়গ্রামের জামবনি ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত আজ উঠে এসেছে…

jamboni-women-reap-rewards-from-cultivating-gobindobhog-rice

জঙ্গলমহলের বুক চিরে এখন বইছে সুবাসিত ধানের সুগন্ধ। একসময় (Jamboni)  মাওবাদী উপদ্রুত ছিল যে অঞ্চল, সেই ঝাড়গ্রামের জামবনি ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত আজ উঠে এসেছে রাজ্যের উদাহরণ হিসেবে। এই রূপান্তরের নেপথ্যে রয়েছেন এখানকার মহিলারা। তাঁরা এখন আর শুধুমাত্র সংসার সামলানো গৃহবধূ নন, বরং এক একটি পরিশ্রমী কৃষিযোদ্ধা। তাঁদের হাত ধরেই জমিতে ফুটছে গোবিন্দভোগ ধানের সোনা রঙা কানন।(Jamboni)  

গোবিন্দভোগ চাষ এখানকার নতুন কিছু নয়, তবে আগে তা ছিল ক্ষুদ্র পরিসরে এবং নিজস্ব ব্যবহারের জন্য। কিন্তু গত কয়েক বছরে চিত্রটা পাল্টেছে সম্পূর্ণ। মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে জড়িয়ে এনে এই চাষকে বাণিজ্যিক রূপ দিয়েছে রাজ্যের আনন্দধারা প্রকল্প। এর ফলে মহিলাদের শুধু কাজই বাড়েনি, আর্থিক স্বাধীনতাও এসেছে।(Jamboni)  

   

প্রক্রিয়া শুরু হয় জমিতে বীজতলা তৈরি দিয়ে। সেখান থেকেই মহিলারা নিজের হাতে বীজ রোপন করেন। নিড়ানি দেওয়া, ধান রোপন, আগাছা পরিষ্কার করা, ধান কাটা ও ঝাড়া—সবটাই করেন মহিলারাই। পুরুষদের সাহায্য থাকলেও নেতৃত্বের আসনে রয়েছেন ‘দিদি’রা।

ধান ফলানোর পরে সেটি পরিষ্কার করে, শুকিয়ে এবং প্যাকেটবন্দি করে বিক্রির উপযোগী করে তোলাও এই মহিলাদেরই কাজ। তারপর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজন করা গ্রামীণ মেলায় এই গোবিন্দভোগ পৌঁছে যায় ক্রেতাদের কাছে। সুবাসিত এই চাল এখন কলকাতা, হাওড়া, নদিয়া, বর্ধমান ছাড়িয়ে পৌঁছেছে রাজ্যের নানা প্রান্তে।

এই উদ্যোগ শুধুই চাষ বা বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চাষের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক সামাজিক রূপান্তরের গল্পও। এক সময় যাঁরা কাজের খোঁজে বর্ধমান, হুগলি, এমনকি ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতেন, আজ তাঁরা নিজের মাটিতে, নিজের হাতে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন।

Advertisements

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে চাষের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ধান প্রক্রিয়াকরণ, ব্র্যান্ডিং এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কেও। ফলে তাঁরা নিজেরাই এখন উদ্যোক্তা। গোবিন্দভোগ চালের প্যাকেটে এখন ছাপা থাকে গোষ্ঠীর নাম, উৎপাদনের তারিখ ও এলাকার নাম—একটি স্বনির্ভর গ্রাম্য উদ্যোগের ছাপ স্পষ্ট।

এই গোবিন্দভোগ ধানের সুবাস শুধু রাজ্যে নয়, রাজ্যের বাইরে থেকেও অর্ডার আসছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি আধিকারিকরা। এতে মহিলাদের আয়ও বেড়েছে কয়েক গুণ। কেউ নিজের মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন, কেউ আবার বাড়িতে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছেন এই আয়ের জোরে।

আজ জামবনির এই আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলারা শুধু কৃষক নন, তাঁরা সমাজ বদলের অগ্রদূত। তাঁদের হাত ধরে জঙ্গলমহলে ফিরে এসেছে স্থিতি, শান্তি ও সমৃদ্ধি। একদা লাল আতঙ্কে ভোগা অঞ্চল আজ সবুজ বিপ্লবের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।

এই সাফল্য প্রমাণ করে দেয়, সুযোগ পেলে গ্রামের মহিলারাও বদলে দিতে পারেন গোটা জনপদের ভবিষ্যৎ। জমি, জল, বীজ আর শ্রম—এই চারটি উপাদান নিয়ে তাঁরা গড়ে তুলেছেন নতুন ইতিহাস। বনমহলের বুকে আজ সুবাসিত ধানের সঙ্গে ফুটে উঠছে স্বপ্নের সম্ভাবনা।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News