ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: কৃষকদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ, রপ্তানিতে আসবে বিপুল গতি

নতুন দিগন্তের পথে ভারত-যুক্তরাজ্য (India-UK) সম্পর্ক। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দু’দিনের ইংল্যান্ড সফরের সময় ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরিত হতে চলেছে—যা দেশের কৃষি ও…

Bengal’s Agricultural Universities Push Mixed Farming for Sustainable Growth and Farmer Prosperity Mixed Farming, Bengal Agriculture, Agricultural Universities, Sustainable Farming

নতুন দিগন্তের পথে ভারত-যুক্তরাজ্য (India-UK) সম্পর্ক। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দু’দিনের ইংল্যান্ড সফরের সময় ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরিত হতে চলেছে—যা দেশের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য এক ঐতিহাসিক মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই চুক্তির ফলে ভারতীয় কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রী যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে, যা রপ্তানিতে অভূতপূর্ব গতি আনবে।

কৃষকদের কেন্দ্রে রেখে পরিকল্পনা
ভারতের ৫৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ এখনও কৃষিনির্ভর। তাই, এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার নয়, বরং ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে। এই চুক্তির মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে ‘ভলিউম’ থেকে ‘ভ্যালু’-র দিকে যাত্রা শুরু হবে।

   

কীভাবে কৃষকরা উপকৃত হবেন?
মূল ফসল ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি:
হলুদ, গোলমরিচ, এলাচ, আমের পিউরি, আচার, ডাল ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ পাবে। ফলে রপ্তানিকারকদের মার্জিন বাড়বে এবং বিদেশি বাজারে ভারতের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা বাড়বে।

৯৫% খাদ্য পণ্যে শূন্য শুল্ক:
ফল, সবজি, সিরিয়াল, মিশ্র মসলা, প্যাকেটজাত খাবার, রেডি-টু-ইট খাবারসহ ৯৫ শতাংশ পণ্যে শুল্ক থাকবে না। এতে যুক্তরাজ্যে এই পণ্যের চূড়ান্ত দাম কমবে, এবং ভারতীয় পণ্য সুপারমার্কেট ও এথনিক স্টোরে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে।

সংবেদনশীল পণ্যে সুরক্ষা:
দুধজাত পণ্য, আপেল, ওটস ও ভোজ্য তেল—এই চারটি ক্ষেত্রে কোনও শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়নি। এর ফলে দেশের কৃষকের সুরক্ষা বজায় থাকবে।

২০% রপ্তানি বৃদ্ধি:
এই চুক্তির ফলে আগামী তিন বছরে কৃষি রপ্তানি ২০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের লক্ষ্য $১০০ বিলিয়ন কৃষি রপ্তানির পথে এক বড় পদক্ষেপ।

সার্টিফিকেশন সহজতর:
প্রযুক্তিগত বাধা (TBT) ও স্ট্যান্ডার্ড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় রপ্তানিকারকদের সময় ও খরচ কমবে।

Advertisements

বৈচিত্র্য ও স্থিতিশীলতা:
কাঁঠাল, মিলেট, জৈব হার্বস ইত্যাদির নতুন বাজার তৈরি হবে, যা কৃষকদের আয় বহুমুখী করতে সাহায্য করবে।

নীল অর্থনীতি (Blue Economy)-র উত্থান
অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা, কেরল ও তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীরা বিশেষভাবে লাভবান হবেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের $৫.৪ বিলিয়ন মৎস্য আমদানি বাজারে ভারতের অংশ মাত্র ২.২৫%। এবার চিংড়ি, টুনা, ফিশমিল ইত্যাদি সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত হবে—ফলে রপ্তানির সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়বে।

অন্যান্য লাভজনক খাত:
কফি ও ইনস্ট্যান্ট কফি:
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ভারতের কফি শেয়ার ১.৭%। এখন ইউরোপিয়ান দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই খাতেও ভারত এগিয়ে যেতে পারবে।

চা ও মসলা:
যুক্তরাজ্য ভারতের চায়ের ৫.৬% এবং মসলার ২.৯% আমদানি করে। শুল্কমুক্ত প্রবেশে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়বে।

জিআই ট্যাগ যুক্ত পানীয়:
গোয়ার ফেনি, নাসিকের ওয়াইন, কেরালার টোডি—এগুলি এখন GI প্রটেকশন পেয়ে যুক্তরাজ্যের প্রিমিয়াম বাজারে জায়গা করে নেবে।

এই FTA শুধু একটি চুক্তি নয়, এটি ভারতের কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলির কৃষক থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাজারে অংশগ্রহণকারী রপ্তানিকারকরা—সবাই এই সুযোগে উপকৃত হবেন। ভারত এখন শুধুই একটি কাঁচা পণ্যের দেশ নয়, বরং একটি ভ্যালু-অ্যাডেড ফুড পাওয়ারহাউস হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে উঠে আসতে প্রস্তুত।