সরিষা-চিনাবাদামে সাফল্য! তবু আমদানি নির্ভর ভোজ্যতেল বাজার

ভারতের কৃষি, পশুপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, গত দশ বছরে দেশে ডাল ও ভোজ্য তেল উৎপাদনের (Oilseed Production) হার…

India Boosts Oilseed Production, Still Relies on Edible Oil Imports

ভারতের কৃষি, পশুপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, গত দশ বছরে দেশে ডাল ও ভোজ্য তেল উৎপাদনের (Oilseed Production) হার পূর্ববর্তী এক দশকের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। যদিও এখনো আমদানির উপর নির্ভরতা রয়েছে, বিশেষত ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে, তবুও সরকার আত্মনির্ভরতা অর্জনের দিকে দৃঢ়ভাবে এগোচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

তেলবীজ উৎপাদনে ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি:
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২০ জুনের বৈঠকে উপস্থাপিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২৪-২৫ সাল পর্যন্ত তেলবীজ উৎপাদনে ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তেলবীজ উৎপাদন ৪২৬.০৯ লক্ষ টনে পৌঁছেছে বলে তৃতীয় অগ্রিম অনুমানে জানানো হয়েছে। এর তুলনায় ২০০৪-০৫ থেকে ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ।

   

ভোজ্য তেল আমদানির উপর নির্ভরতা:
বর্তমানে দেশীয় চাহিদার প্রায় ৫৬ শতাংশ ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। ২০২৩-২৪ সালে ভোজ্য তেলের আমদানি হয়েছে ১৫.৬৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটি), যার জন্য দেশের প্রায় ₹৮০,০০০ কোটি টাকা বিদেশে ব্যয় হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করতে হয়েছে পাম অয়েল, যার উৎপাদনে ভারত এখনো প্রায় পুরোপুরি বিদেশের উপর নির্ভরশীল।

সূত্র জানিয়েছে, কিছু সাংসদ সভায় পাম অয়েলের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা তুলনামূলকভাবে সস্তা এই তেলের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যার আশঙ্কা তুলে ধরেন।

সরিষা ও চিনাবাদাম তেলে স্বনির্ভরতা, সূর্যমুখী ও সয়াবিনে আমদানির উপর নির্ভরতা:
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরিষা ও চিনাবাদাম তেলের ক্ষেত্রে দেশীয় উৎপাদনেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে সূর্যমুখী তেলের ক্ষেত্রে ৩.৫৫ এমএমটি চাহিদার বিপরীতে ৩.৪৯ এমএমটি আমদানি করতে হয়েছে। সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করতে হয়েছে।

ডাল উৎপাদনে ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি:
ডালের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৪-১৫ থেকে ২০২৪-২৫ সাল পর্যন্ত ডাল উৎপাদন ৪৭ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে ২০০৪-১৪ সালের মধ্যে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৩১ শতাংশ। এই উন্নতি সরকারের বিভিন্ন সহায়ক প্রকল্প ও কৃষকদের উৎসাহিত করার ফল বলেই দাবি করা হয়েছে।

কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রস্তাব:
বৈঠকে উপস্থিত সাংসদরা পরামর্শ দেন, ধান ও গম চাষে অভ্যস্ত কৃষকদের ডাল ও অন্যান্য খাদ্যশস্য চাষে উৎসাহিত করতে হবে। এর ফলে জলসংকট ও মাটির উর্বরতা হ্রাসের মতো সমস্যার মোকাবিলাও সম্ভব হবে বলে মত দেন তারা।

Advertisements

আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে রোডম্যাপ:
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এবারের বাজেটে ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্প যেমন ‘ন্যাশনাল মিশন অন অয়েলসিডস অ্যান্ড অয়েল পাম’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা’র আওতায় বহু নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে:

তবে মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে যে, ডাল উৎপাদনে এখনো কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ ডাল বৃষ্টিনির্ভর অঞ্চলে, নিম্ন উর্বরতার মাটিতে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের দ্বারা উৎপাদিত হয়। এতে ফলনের পরিমাণ ও গুণমান দুই-ই সীমিত থেকে যায়।

জনসচেতনতা ও স্বাস্থ্যাভিযান:
সামগ্রিকভাবে দেশের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শুরু হয়েছে একটি জাতীয় ক্যাম্পেইন— “ভোজ্য তেলের যথাযথ ব্যবহার ও স্বাস্থ্য উপকারিতা”। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী, দেশবাসীকে দৈনন্দিন ভোজ্য তেল গ্রহণ ১০ শতাংশ কমানোর জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য উপকার হবে, অন্যদিকে তেলের উপর আমদানি নির্ভরতাও কিছুটা কমানো যাবে।

সরকারি উপস্থাপনা ও সংসদীয় আলোচনা থেকে স্পষ্ট, কৃষি খাতে বিশেষ করে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনে ভারত বড় অগ্রগতি করেছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানো, কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া এবং আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরতা অর্জনের পথে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। 2030-31 সালের মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে, সরকারের পাশাপাশি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, রাজ্য সরকার ও কৃষকদের যৌথ প্রচেষ্টাই সফলতার চাবিকাঠি হবে।