মাটির অভাব মিটিয়ে চাষে নতুন দিগন্ত খুলছে ‘হাইড্রোপনিক্স কৃষি’

শহুরে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং কৃষিজমির সংকটের মধ্যে হাইড্রোপনিক্স কৃষি (Hydroponic Farming) শহরাঞ্চলে কৃষির ধারণাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। মাটি ছাড়াই জল, পুষ্টি এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের…

Hydroponic Farming new innovation in farming

শহুরে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং কৃষিজমির সংকটের মধ্যে হাইড্রোপনিক্স কৃষি (Hydroponic Farming) শহরাঞ্চলে কৃষির ধারণাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। মাটি ছাড়াই জল, পুষ্টি এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের এই আধুনিক পদ্ধতি ভারতের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

হাইড্রোপনিক্স কৃষি শুধু জমির স্বল্পতার সমস্যাই সমাধান করছে না, বরং টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব কৃষির পথও প্রশস্ত করছে। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুর মতো শহরে এই প্রযুক্তি শহুরে কৃষির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

   

হাইড্রোপনিক্স কৃষি কী?

হাইড্রোপনিক্স হল এমন একটি কৃষি পদ্ধতি, যেখানে মাটির পরিবর্তে জলে দ্রবীভূত পুষ্টি উপাদান ব্যবহার করে গাছের চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে গাছের শিকড় পুষ্টিযুক্ত জলে নিমজ্জিত থাকে বা বিশেষ মাধ্যম যেমন কোকোপিট, পার্লাইট বা রকউলের মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণ করে।

আলো, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার মতো পরিবেশগত উপাদানগুলো কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যাতে ফসল দ্রুত এবং সুস্থভাবে বৃদ্ধি পায়। এই পদ্ধতিতে জলের ব্যবহার ঐতিহ্যবাহী কৃষির তুলনায় ৯০ শতাংশ কম হয় এবং কীটনাশকের প্রয়োজনও হ্রাস পায়।

শহুরে কৃষিতে হাইড্রোপনিক্সের প্রভাব

শহরাঞ্চলে জমির অভাব এবং ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা হাইড্রোপনিক্সকে একটি আদর্শ সমাধান করে তুলেছে। কলকাতার মতো শহরে, যেখানে জমির দাম আকাশচুম্বী, ছাদ, বারান্দা বা ছোট জায়গায় হাইড্রোপনিক্স ইউনিট স্থাপন করে শাকসবজি, ফল এবং ভেষজ উৎপাদন করা হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার একটি স্টার্টআপ ‘অ্যাগ্রোটেক’ ছাদে হাইড্রোপনিক্স সিস্টেম স্থাপন করে পালংশাক, লেটুস এবং ধনে পাতার মতো ফসল উৎপাদন করছে, যা স্থানীয় রেস্তোরাঁ এবং বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।

হাইড্রোপনিক্সের মাধ্যমে বছরভর ফসল উৎপাদন সম্ভব, কারণ এটি ঋতুনির্ভর নয়। এই পদ্ধতিতে ফসলের উৎপাদন ঐতিহ্যবাহী কৃষির তুলনায় ৩০-৫০ শতাংশ বেশি হয় এবং ফসল পাকতে কম সময় লাগে। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোপনিক্সে লেটুস উৎপাদনে ৩০-৪০ দিন সময় লাগে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী কৃষিতে এটি ৬০ দিনের বেশি সময় নেয়। হাইড্রোপনিক্স কৃষি পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

Advertisements

এই পদ্ধতিতে জলের পুনঃব্যবহার করা যায়, যা জল সংরক্ষণে সহায়তা করে। এছাড়াও, কীটপতঙ্গ এবং রোগের ঝুঁকি কম থাকায় কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কম হয়, ফলে জৈব ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়। কলকাতার মতো শহরে, যেখানে বায়ু দূষণ একটি বড় সমস্যা, হাইড্রোপনিক্স কৃষি কার্বন পদচিহ্ন হ্রাস করে কারণ এটি পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা কমায়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফসল সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

হাইড্রোপনিক্স কৃষির প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি, যার মধ্যে পাম্প, পুষ্টি দ্রবণ, আলো এবং স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের খরচ অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, ভারত সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার হাইড্রোপনিক্স কৃষির জন্য ভর্তুকি এবং প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেছে।

কলকাতায় ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ’ (আইসিএআর) হাইড্রোপনিক্স প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করছে, যা তরুণ উদ্যোক্তাদের আকর্ষণ করছে।শহুরে কৃষির ভবিষ্যৎহাইড্রোপনিক্স কৃষি শহুরে কৃষির ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভারতে হাইড্রোপনিক্স বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কলকাতার মতো শহরে ছাদে হাইড্রোপনিক্স ফার্মিং জনপ্রিয় হচ্ছে, যা স্থানীয়ভাবে তাজা এবং জৈব খাদ্য সরবরাহ করছে। এছাড়াও, এই পদ্ধতি তরুণদের মধ্যে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার প্রেরণা যোগাচ্ছে।

একদিকে ছাঁটাই, অন্যদিকে মোটা পারিশ্রমিক! TCS সিইও-কে ঘিরে বিতর্ক

হাইড্রোপনিক্স কৃষি শহুরে কৃষির ধারণাকে বদলে দিচ্ছে। এটি শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না, বরং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কলকাতার মতো শহরে এই প্রযুক্তি কৃষির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করছে। সরকার, স্টার্টআপ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাইড্রোপনিক্স শহুরে কৃষির ভবিষ্যৎ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।