দেশে কৃষকদের আয় (Farmers’ Income) দ্বিগুণ হয়েছে কি না, আর যদি হয়ে থাকে তবে কতটা বেড়েছে—এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত উঠছে। মঙ্গলবার লোকসভায় এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। লোকসভার সদস্য ড. এমপি আব্দুস সামাদ সমদানি সরকারের কাছে জানতে চান, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার নীতির প্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত কী।
তিনি আরও জিজ্ঞাসা করেন, কৃষকদের প্রকৃত আয় বৃদ্ধির মূল্যায়নের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোনও নতুন সময়সীমা বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে কি না। জবাবে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী রামনাথ ঠাকুর জানান, ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদ (আইসিএআর) ৭৫ হাজার কৃষকের সাফল্যের গল্প সংকলন করেছে, যারা কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির যৌথ প্রচেষ্টায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আয় দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছেন।
Also Read | তিস্তা জল বিতর্কে কেন্দ্রকে সতর্কবার্তা তৃণমূল সাংসদের
রামনাথ ঠাকুর আরও বলেন, কৃষি একটি রাজ্যিক বিষয় এবং ভারত সরকার উপযুক্ত নীতিগত পদক্ষেপ, বাজেট বরাদ্দ এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যগুলির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প কৃষকদের কল্যাণের জন্য কাজ করছে, যার লক্ষ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, লাভজনক রিটার্ন নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের আয় সহায়তা প্রদান। তিনি উল্লেখ করেন, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ বিভাগের বাজেট বরাদ্দ ২০১৩-১৪ সালে ২১,৯৩৩.৫০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ সালে ১,২২,৫২৮.৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
এছাড়া, ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের আয় বাড়াতে এবং দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পিএম কিষান সম্মান নিধি, পিএম কিষান মানধন যোজনা, পিএম ফসল বীমা যোজনা, এগ্রিকালচার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড, ১০,০০০ নতুন কৃষক উৎপাদক সংগঠনের গঠন, ন্যাশনাল বি-কিপিং অ্যান্ড হানি মিশন, নমো ড্রোন দিদি, ন্যাশনাল মিশন ফর ন্যাচারাল ফার্মিং, প্রধানমন্ত্রী অন্নদাতা আয় সংরক্ষণ অভিযান, প্রতি ফোঁটা জল দিয়ে বেশি ফসল, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ উপ-মিশন, ডিজিটাল এগ্রিকালচার মিশন এবং জাতীয় বাঁশ মিশন সহ আরও অনেক প্রকল্প।
Also Read | PNB গ্রাহকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি! ১০ এপ্রিলের মধ্যে এটি না করলে বন্ধ হতে পারে অ্যাকাউন্ট
মন্ত্রী জানান, জাতীয় নমুনা সমীক্ষা কার্যালয় (এনএসএসও) স্ট্যাটিস্টিক্স ও প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ এলাকায় কৃষি পরিবারের অবস্থা মূল্যায়নের জন্য সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। ২০১২-১৩ সালে (এনএসএস ৭০তম রাউন্ড) এবং ২০১৮-১৯ সালে (এনএসএস ৭৭তম রাউন্ড) পরিচালিত এই সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি কৃষি পরিবারের গড় মাসিক আয় ২০১২-১৩ সালে ৬,৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ সালে ১০,২১৮ টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া, ২০২৩-২৪ সালের এনএসএসও সমীক্ষা অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় গড় মাসিক প্রতি ব্যক্তি ভোগ ব্যয়ও বেড়েছে। তবে, এই তথ্যে ২০২২-এর পরবর্তী সময়ের কোনও আপডেট দেওয়া হয়নি, যা সরকারের দ্বিগুণ আয়ের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সরকার যদিও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বাড়ানোর দাবি করছে, তবে ২০২২ সালের মধ্যে আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট তথ্যের অভাব রয়েছে। ২০১৫-১৬ সালে গড় বার্ষিক আয় ৯৬,৭০৩ টাকা ছিল, যা দ্বিগুণ হলে ১,৯৩,৪০৬ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৮-১৯ সালের তথ্যে দেখা যায়, আয় মাত্র ১,২২,৬১৬ টাকায় পৌঁছেছে, যা লক্ষ্যের অনেক কম। বিরোধী দলগুলি এই বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে।
লোকসভায় এই আলোচনা কৃষকদের আয় নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে। সরকার যদিও কিছু কৃষকের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছে, তবে সামগ্রিকভাবে দেশের কৃষকদের আয় কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। আগামী দিনে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নতুন সময়সীমা বা কৌশল কী হবে, সেটাও দেখার বিষয়।