চলতিবর্ষে ১০টি কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা! পরিকল্পনা করুন কৃষি বাজেট

২০২৫ সালে ভারতের কৃষকদের জন্য কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির (Farming Budget) সম্ভাবনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার, বীজ, কীটনাশক, জ্বালানি, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কৃষি…

Farming Budget: 10 Agricultural Inputs Facing Price Hikes in 2025: Plan Your Farming Budget Now

২০২৫ সালে ভারতের কৃষকদের জন্য কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির (Farming Budget) সম্ভাবনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার, বীজ, কীটনাশক, জ্বালানি, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, যা তাঁদের লাভের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। ভারতের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সার ভর্তুকি কিছুটা কমানো হয়েছে, যা সারের দাম বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি খরচ, এবং সরবরাহ শৃঙ্খলার সমস্যাগুলো এই দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই প্রতিবেদনে আমরা ২০২৫ সালে দাম বাড়তে পারে এমন ১০টি কৃষি উপকরণ এবং কৃষকদের জন্য বাজেট পরিকল্পনার পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব।

দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকা ১০টি কৃষি উপকরণ
১. ইউরিয়া সার: ভারতের ২০২৫-২৬ বাজেটে ইউরিয়া সারের জন্য ভর্তুকি ১.১৯ ট্রিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অপরিবর্তিত। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন বা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত তীব্র হলে ইউরিয়ার দাম বাড়তে পারে।

   

২. ফসফেটিক ও পটাশিক (P&K) সার: P&K সারের জন্য ভর্তুকি ০.৪৯ ট্রিলিয়ন টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫.৭৬% কম। এই কমতি কৃষকদের জন্য সারের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে ডিএপি এবং এনপিকে সারের ক্ষেত্রে।

৩. কীটনাশক ও রাসায়নিক: ২০২২ সালে কীটনাশকের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল, যদিও ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে দাম কিছুটা কমেছিল। তবে, ২০২৫ সালে কোনও বড় বাজার ধাক্কা না থাকলেও কীটনাশকের দাম স্থিতিশীল বা সামান্য বাড়তে পারে।

৪. বীজ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেটা অনুসারে, গত পাঁচ বছরে বীজের দাম গড়ে ৬.১% বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতেও উচ্চ ফলনশীল এবং জলবায়ু-সহনশীল বীজের চাহিদা বাড়ায় দাম ৫-৭% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

৫. জ্বালানি (ডিজেল ও পেট্রোল): কৃষিতে ব্যবহৃত ডিজেল এবং পেট্রোলের দাম ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি (২০২৫ সালে গড়ে $৩.১০/এমএমবিটিইউ) সার উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে, যা পরোক্ষভাবে কৃষকদের উপর প্রভাব ফেলবে।

৬. কৃষি যন্ত্রপাতি: যান্ত্রিকীকরণের জন্য সরঞ্জামের দাম, যেমন ট্রাক্টর এবং হার্ভেস্টার, কাঁচামাল এবং শ্রম খরচ বৃদ্ধির কারণে বাড়তে পারে। ভারতে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি থাকলেও, ছোট কৃষকদের জন্য এই খরচ বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৭. শ্রম খরচ: ব্রেক্সিট এবং কোভিড-১৯-এর পর থেকে বিশ্বব্যাপী শ্রম সংকট কৃষি খাতে প্রভাব ফেলছে। ভারতেও মৌসুমী শ্রমিকের ঘাটতি এবং মজুরি বৃদ্ধির কারণে শ্রম খরচ বাড়তে পারে।

৮. পশুখাদ্য: সূর্যমুখী তেলের উপজাত, সয়াবিন, এবং গমের দাম বৃদ্ধির কারণে পশুখাদ্যের দামও বাড়ছে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় এই খরচ আরও বাড়তে পারে।

৯. সেচ ব্যবস্থা: সেচ সরঞ্জাম এবং পানির পাম্পের জন্য জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি কৃষকদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনার জন্য বরাদ্দ অপরিবর্তিত থাকায় এই খরচ কমার সম্ভাবনা কম।

১০. পরিবহন ও স্টোরেজ: কৃষি পণ্যের পরিবহন এবং স্টোরেজ খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ জ্বালানি এবং শ্রম খরচ বাড়ছে। সরকারি পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রচেষ্টা থাকলেও, এই খরচ এখনও কৃষকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

Advertisements

কৃষকদের জন্য বাজেট পরিকল্পনার পরামর্শ
২০২৫ সালে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির মুখে কৃষকদের জন্য বাজেট পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নলিখিত কৌশলগুলো কৃষকদের খরচ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে:

১. ন্যানো সারের ব্যবহার: ন্যানো ইউরিয়া এবং ন্যানো ডিএপি-র মতো বিকল্প সার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কম পরিমাণে বেশি কার্যকর এবং ভর্তুকির প্রয়োজন হয় না। সরকার এই সারের ব্যবহার প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছে।

২. প্রাকৃতিক কৃষি: সরকার ১ কোটি কৃষককে প্রাকৃতিক কৃষির দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যা সার এবং কীটনাশকের উপর নির্ভরতা কমাতে পারে। ১০,০০০ বায়ো-ইনপুট রিসোর্স সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

৩. কৃষক উৎপাদক সংগঠন (FPO): FPO-এর মাধ্যমে কৃষকরা সম্মিলিতভাবে উপকরণ ক্রয় করতে পারেন, যা খরচ কমাতে সাহায্য করবে। সরকার ১০,০০০ নতুন FPO গঠনের পরিকল্পনা করছে।

৪. কৃষি ঋণের সুবিধা: কৃষকরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC) এবং অন্যান্য ঋণ সুবিধার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা নিতে পারেন। ২০২৫-২৬ সালে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২২-২৫ লক্ষ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

৫. ফসল বৈচিত্র্যকরণ: একক ফসলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে তেলবীজ, ডাল, এবং শাকসবজির মতো ফসল চাষ করা যেতে পারে, যা কম উপকরণের প্রয়োজন হয়।

৬. পরিবহন ও স্টোরেজ পরিকাঠামো: কৃষকরা স্থানীয় স্টোরেজ সুবিধা ব্যবহার করে পরিবহন খরচ কমাতে পারেন। সরকার বিকেন্দ্রীভূত স্টোরেজ ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য। সম্যুক্ত কিষাণ মোর্চার মতো সংগঠনগুলো বাজেটে কৃষি ভর্তুকি কমানোর সমালোচনা করেছে এবং ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (MSP) আইনি করার দাবি জানিয়েছে। তবে, সরকারের প্রধানমন্ত্রী ধান-ধান্য কৃষি যোজনা এবং ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মতো উদ্যোগ কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি, সার এবং অন্যান্য উপকরণের দাম আরও বাড়াতে পারে। তাই, কৃষকদের এখনই তাঁদের বাজেট পরিকল্পনা করা উচিত এবং সরকারি স্কিমগুলোর সুবিধা নেওয়া উচিত।

২০২৫ সালে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা কৃষকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তবে, সঠিক পরিকল্পনা, বিকল্প সার, এবং সরকারি স্কিমের সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারেন। অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং কৃষি বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার কৃষকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কৃষকদের এখনই তাঁদের বাজেট প্রস্তুত করা এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত, যাতে তারা এই অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে পারেন।