উচ্চতর ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের দাবিতে বাংলার কৃষি আন্দোলনের সর্বশেষ আপডেট

২০২৫ সালে ভারতের কৃষকরা (Farmers ) পুনরায় রাস্তায় নেমে এসেছেন, তাদের প্রধান দাবি ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (এমএসপি) এর জন্য আইনি গ্যারান্টি এবং ডঃ এম এস…

Farmers Demand Legal Guarantee for Higher MSP in 2025

২০২৫ সালে ভারতের কৃষকরা (Farmers ) পুনরায় রাস্তায় নেমে এসেছেন, তাদের প্রধান দাবি ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (এমএসপি) এর জন্য আইনি গ্যারান্টি এবং ডঃ এম এস স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ফসলের দাম নির্ধারণ। পশ্চিমবঙ্গের কৃষক সম্প্রদায়ও এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে, যদিও প্রধানত পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা, বিশেষ করে ধান, পাট এবং শাকসবজি চাষে নিয়োজিত কৃষকরা, এমএসপি-এর আইনি গ্যারান্টি এবং ঋণ মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। এই প্রতিবেদনে আমরা ২০২৫ সালের কৃষি আন্দোলনের সর্বশেষ আপডেট এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।

কৃষকদের প্রধান দাবি
কৃষকদের ১২ দফা দাবির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল:
এমএসপি-এর আইনি গ্যারান্টি: কৃষকরা দাবি করছেন যে সমস্ত ফসলের জন্য এমএসপি আইনি গ্যারান্টি দেওয়া হোক, যাতে বাজারের অস্থিরতা থেকে তাদের আয় সুরক্ষিত থাকে। বর্তমানে, সরকার ২৩টি ফসলের জন্য এমএসপি ঘোষণা করে, কিন্তু কেবলমাত্র ধান এবং গমের ক্ষেত্রে ক্রয় নিশ্চিত করা হয়। কৃষকরা চান স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, এমএসপি উৎপাদন খরচের (C2) উপর ৫০% লাভ সহ নির্ধারিত হোক।

   

ঋণ মুক্তি: কৃষকরা সম্পূর্ণ ঋণ মুক্তির দাবি জানিয়েছেন, কারণ বহু কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন।
পেনশন: ৬০ বছরের বেশি বয়সী কৃষকদের জন্য মাসিক ১০,০০০ টাকা পেনশনের দাবি।
এমজিএনআরইজিএ-তে উন্নতি: কৃষি শ্রমিকদের জন্য মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (এমজিএনআরইজিএ) এর অধীনে বছরে ২০০ দিন কাজ এবং দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরি।

জমি অধিগ্রহণ আইন, ২০১৩: কৃষকদের সম্মতি ছাড়া জমি অধিগ্রহণ বন্ধ এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে চারগুণ মূল্য প্রদান।
ডব্লিউটিও থেকে প্রত্যাহার: কৃষকরা ভারতের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে প্রত্যাহার এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের দাবি করছেন, কারণ এটি তাদের স্বার্থের উপর প্রভাব ফেলে।

পশ্চিমবঙ্গে কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে কৃষি রাজ্যের অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ, কৃষকরা এমএসপি-এর সীমিত প্রয়োগের সমস্যায় ভুগছেন। রাজ্যের ধান, পাট, আলু এবং শাকসবজি চাষে নিয়োজিত কৃষকরা প্রায়ই বাজারে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে পাট চাষীরা দীর্ঘদিন ধরে এমএসপি-র নিশ্চয়তার অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, এমএসপি-তে C2+50% সূত্র প্রয়োগ করা হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচের উপর ৫০% লাভ পেতেন, যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা দেবে।

২০২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষক সংগঠনগুলি, যেমন পশ্চিমবঙ্গ কৃষক সভা, স্থানীয়ভাবে বিক্ষোভ এবং সমাবেশের মাধ্যমে এই দাবিগুলিকে সমর্থন করছে। তারা দাবি করছে যে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার যৌথভাবে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিক। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল, এবং এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি কৃষকদের আয় বাড়াতে এবং ঋণের বোঝা কমাতে সহায়ক হবে।

Advertisements

সর্বশেষ আপডেট

  • দিল্লি চলো আন্দোলন: ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলন ২০২৫ সালেও অব্যাহত রয়েছে। পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তের শম্ভু এবং খানাউরি-জিন্দে কৃষকরা বিক্ষোভ করছেন। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরাও এই আন্দোলনের সমর্থনে সমাবেশ করছেন।
  • সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ: ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে কৃষকদের দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য সমালোচনা করে এবং হাই-পাওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দেয়।
  • সরকারের প্রস্তাব: কেন্দ্রীয় সরকার এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টির পরিবর্তে একটি নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যা কৃষক ইউনিয়নগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের মতে, সমস্ত ফসলের জন্য এমএসপি ক্রয় অর্থনৈতিকভাবে অসম্ভব এবং এটি খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে।
  • পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদ: কলকাতা, বর্ধমান এবং হাওড়ায় কৃষক সংগঠনগুলি স্থানীয়ভাবে সমাবেশ এবং রাস্তা অবরোধের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরছে। তারা পাট এবং ধানের জন্য উচ্চতর এমএসপি এবং স্থানীয় বাজারে সরাসরি ক্রয়ের দাবি করছে।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
চ্যালেঞ্জ: এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি বাস্তবায়নের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক ব্যয় এবং স্টোরেজ সমস্যা হতে পারে। সরকারের মতে, এটি ফসলের বৈচিত্র্যকরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে।

সম্ভাবনা: এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি কৃষকদের আর্থিক স্থিতিশীলতা দেবে, গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াবে। পশ্চিমবঙ্গে, এটি পাট এবং ধান চাষীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে।

২০২৫ সালে কৃষকদের আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের কৃষি খাতে গভীর প্রভাব ফেলছে। এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি, ঋণ মুক্তি এবং স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য, এই আন্দোলন শুধুমাত্র আর্থিক সুরক্ষাই নয়, বরং রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের একটি সুযোগ। সরকার এবং কৃষক ইউনিয়নগুলির মধ্যে আলোচনা এবং নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।