অবৈধ সার বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা কেন্দ্রের

ভারতের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান সম্প্রতি দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে একটি চিঠি লিখে অবিলম্বে নকল ও নিম্নমানের…

Rising Fertilizer Prices Threaten Indian Farmers’ Survival in 2025 Crisis

ভারতের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান সম্প্রতি দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে একটি চিঠি লিখে অবিলম্বে নকল ও নিম্নমানের সার (Fertilizer) বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রীর এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল কৃষকদের সাথে প্রতারণা বন্ধ করা এবং কৃষিক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কৃষিমন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে নকল সার বিক্রি, ভর্তুকিপ্রাপ্ত সার কালোবাজারি এবং জোরপূর্বক ট্যাগিং-এর মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এই চিঠি জারি করা হয়েছে।

চিঠিতে চৌহান জোর দিয়ে বলেছেন, “কৃষি ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কৃষকদের আয় স্থিতিশীল রাখার জন্য সঠিক সময়ে, সঠিক মানের এবং সুলভ মূল্যে সার সরবরাহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেছেন, নকল ও নিম্নমানের সার বিক্রি ফার্টিলাইজার (কন্ট্রোল) অর্ডার, ১৯৮৫ অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন, ১৯৫৫-এর আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

   

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেছেন যে, সঠিক স্থানে ও সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার নিশ্চিত করার দায়িত্ব মূলত রাজ্যগুলির। তাই রাজ্য সরকারগুলিকে কালোবাজারি, অতিমূল্য আদায়, এবং ভর্তুকিপ্রাপ্ত সারের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও দমন করতে হবে।

মন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, সার উৎপাদন ও বিক্রয়ের উপর নিয়মিত নজরদারি চালানো উচিত এবং নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার মাধ্যমে নকল ও নিম্নমানের সার চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এর পাশাপাশি, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য জোরপূর্বক ন্যানো-ফার্টিলাইজার বা বায়ো-স্টিমুল্যান্ট পণ্যের ট্যাগিং বন্ধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, যারা এই ধরনের অবৈধ কাজে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে লাইসেন্স বাতিল করা, এফআইআর নথিভুক্ত করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করে শাস্তি নিশ্চিত করা অন্তর্ভুক্ত। কৃষি মন্ত্রীর মতে, শুধুমাত্র কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কৃষকদেরও এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য রাজ্যগুলিকে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি প্রতিক্রিয়া ও তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি ফিডব্যাক এবং ইনফরমেশন সিস্টেম তৈরি করতে হবে। এর মাধ্যমে কৃষকরা সহজেই নকল এবং আসল সার চিহ্নিত করতে পারবেন এবং প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমবে।

মন্ত্রী রাজ্য সরকারগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন, কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রচারমূলক উদ্যোগ নেওয়া হোক। কৃষকদের কীভাবে আসল এবং নকল সার আলাদা করা যায়, তার উপর প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়াও, স্থানীয় কৃষি অফিস, পঞ্চায়েত ও কৃষক সংগঠনগুলির মাধ্যমে এই প্রচারকে আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Advertisements

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নকল ও নিম্নমানের সার বিক্রির ঘটনা বহুদিন ধরেই কৃষকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় কৃষকরা ভর্তুকিপ্রাপ্ত সার পাওয়ার পরিবর্তে নকল বা নিম্নমানের সার কিনে ফেলেন, যার ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। একইসাথে, মাটি ও পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সার ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি প্রদান করে। এই ভর্তুকি যাতে সঠিকভাবে কৃষকদের কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কালোবাজারি এবং চোরাচালানের কারণে এই ভর্তুকির সঠিক ব্যবহার ব্যাহত হচ্ছে।

শিবরাজ সিং চৌহান এই সমস্যার গুরুত্ব অনুধাবন করে বলেছেন, কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য সঠিক মানের সার অপরিহার্য। নকল সার ব্যবহার করলে শুধু ফসলের ক্ষতি হয় না, বরং কৃষকের আয় হ্রাস পায় এবং ঋণগ্রস্ততার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই রাজ্য সরকারগুলির উচিত অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

মন্ত্রীর এই চিঠি প্রকাশের পর দেশের কৃষক মহলে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক সংগঠন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “এটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এখন প্রয়োজন কার্যকর বাস্তবায়ন।”

সার সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের এই চিঠি নিঃসন্দেহে কৃষকদের নিরাপত্তা ও আস্থার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।