মার্কিন শুল্কের প্রভাবে মাথায় হাত বাংলার মৎস্যজীবীদের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’ (US Tariff) আরোপের সিদ্ধান্ত ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রফতানি শিল্পের জন্য গুরুতর সংকট সৃষ্টি করতে…

US Tariff harmes bengal fishermen

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ ‘প্রতিশোধমূলক শুল্ক’ (US Tariff) আরোপের সিদ্ধান্ত ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রফতানি শিল্পের জন্য গুরুতর সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ৬০,০০০ কোটি টাকার এই শিল্প, যা ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

আমেরিকা ভারতের সামুদ্রিক খাদ্যের সবচেয়ে বড় বাজার, এবং এই নতুন শুল্ক রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা এবং লাভের মার্জিনের উপর প্রভাব ফেলবে।ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রফতানি শিল্প প্রধানত চিংড়ি, মাছ, কাঁকড়া এবং অন্যান্য সামুদ্রিক পণ্যের উপর নির্ভরশীল।সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চিংড়ি, কাঁকড়া এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্য সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় এই বাংলা থেকে

   

২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই শিল্পের রফতানি মূল্য ৬০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ। মার্কিন বাজারে ভারতীয় চিংড়ি, বিশেষ করে হিমায়িত ব্ল্যাক টাইগার এবং ভ্যানামি চিংড়ি, অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে, নতুন ২৫ শতাংশ শুল্কের ফলে এই পণ্যগুলির দাম বৃদ্ধি পাবে, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করবে।

সীফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি জগদীশ ফোফান্ডি বলেন, “এই শুল্ক বৃদ্ধি আমাদের শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা। মার্কিন বাজারে আমাদের প্রধান প্রতিযোগী হল ভিয়েতনাম এবং ইকুয়েডর। তারা ইতিমধ্যেই কম দামে পণ্য সরবরাহ করছে। এই শুল্ক আমাদের পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে, যা ক্রেতাদের অন্য দেশের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করবে।”

তিনি আরও জানান, এই শিল্পে প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষের জীবিকা জড়িত, এবং শুল্কের প্রভাব শ্রমিক, মৎস্যজীবী এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের উপর পড়বে।ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের পেছনে প্রধান কারণ হল ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল ক্রয়। তিনি দাবি করেছেন, ভারতের এই ক্রয় ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়ন করছে।

তবে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমরা আমাদের শক্তি চাহিদা মেটাতে বাজারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের উৎস থেকে তেল ক্রয় করি।” এই শুল্ক ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রফতানিকারকদের জন্য অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যারা ইতিমধ্যেই ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি।

অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ওডিশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রফতানির কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবার এবং সুন্দরবন এলাকার মৎস্যজীবীরা এই শিল্পের মূল ভিত্তি। স্থানীয় রপ্তানিকারক সুজিত মণ্ডল বলেন, “এই শুল্কের ফলে আমাদের রপ্তানি আয় ২০-৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এটি আমাদের কারখানা এবং শ্রমিকদের জন্য বিপর্যয়কর হবে।”

Advertisements

তিনি সরকারের কাছে শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় ভর্তুকি বা বিকল্প বাজার খোঁজার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।মার্কিন শুল্কের প্রভাব কেবল রফতানি আয়ের উপরই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য শিল্পের সরবরাহ শৃঙ্খল, প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট এবং মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের উপরও প্রভাব ফেলবে।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি মার্কিন বাজারে রফতানি হ্রাস পায়, তবে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, নতুন বাজার যেমন ইউরোপ বা জাপানে প্রবেশ করতে সময় এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন।ভারত সরকার এখনও এই শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।

তবে, বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। শিল্প সংগঠনগুলি সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তুকি, কর ছাড় এবং বিকল্প বাজার খোঁজার জন্য আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছে।এই শুল্ক ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কেও নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

ভারতে লঞ্চ হল 2025 Yamaha MT-15 Version 2.0, নতুন TFT ডিসপ্লে ও তিনটি নতুন রঙে মিলবে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতকে এখন বিকল্প বাজার এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর নির্ভর করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবী সম্প্রদায় এবং রফতানিকারকরা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী দিনে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠবে, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।