FY26-এ ভারতের কৃষি খাতে ধীরগতি, ICRA-র সতর্কবার্তা

ভারতের কৃষিখাতে FY2025-26 অর্থবর্ষের প্রথম প্রান্তিকে সামান্য ধীরগতি প্রত্যাশিত, জানিয়েছে স্বনামধন্য ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ICRA। সংস্থার মতে, এই প্রান্তিকে কৃষিভিত্তিক গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড (GVA) বৃদ্ধির…

El Niño Impact on India's Paddy Farmers: Monsoon Challenges and Agricultural Concerns

ভারতের কৃষিখাতে FY2025-26 অর্থবর্ষের প্রথম প্রান্তিকে সামান্য ধীরগতি প্রত্যাশিত, জানিয়েছে স্বনামধন্য ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ICRA। সংস্থার মতে, এই প্রান্তিকে কৃষিভিত্তিক গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড (GVA) বৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশে নামতে পারে, যেখানে পূর্ববর্তী প্রান্তিকে এটি ছিল ৫.৪ শতাংশ। যদিও এই হ্রাস তুলনামূলকভাবে অল্প, তবু এর প্রভাব গ্রামীণ আয়, ভোক্তা ব্যয়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতি সহ বহু ক্ষেত্রে পড়তে পারে।

Advertisements

ICRA জানিয়েছে, কৃষিভিত্তিক GVA দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক, যা শুধু কৃষি অর্থনীতির গতিপথ নয়, বরং গ্রামীণ অঞ্চলের ভোগবিলাস ও ব্যয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সংস্থার বক্তব্য, “এটি খাদ্য মূল্যস্ফীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে, যা আর্থিক নীতিতে সহায়ক, এবং কৃষি উৎপাদনের ইতিবাচক সংকেত দেয়।”

   

সাবলীল ফসল ফলনের আশা FY2026-এর জন্য ইতিবাচক দিক:
যদিও এই প্রান্তিক বৃদ্ধির হার সামান্য কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ICRA-র দৃষ্টিভঙ্গি সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক। সংস্থাটি জানিয়েছে, রবি এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের ভালো ফলনের জন্য FY2026 অর্থবর্ষে কৃষি, বনজ এবং মৎস্য খাতের GVA বৃদ্ধি ৩.৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। এই হার FY2025-এ প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত ৪.৬ শতাংশের থেকে কিছুটা কম, তবে সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল।

খরিফ মরসুম নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের গতি:
চলমান খরিফ মরসুম দেশের কৃষিক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা পালন করতে চলেছে। বিশেষত খরিফ ফসলগুলির মধ্যে মুগ, ধান এবং ভুট্টার বপনে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে, যদিও সয়াবিন, আরহার (তুর) এবং উড়দ ডালের ক্ষেত্রেই বিগত বছরের তুলনায় পিছিয়ে আছে। জুলাই ২৫ পর্যন্ত, ডালজাতীয় ফসলের মোট বপন ৭২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের ৬৯ শতাংশ থেকে বেশি।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, মুগ ডালের চাষযোগ্য জমির পরিমাণে ১৬.১ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, যা কৃষকদের পক্ষ থেকে এই ফসলে আগ্রহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। অপরদিকে, আরহার এবং উড়দ চাষে যথাক্রমে ৮.১ শতাংশ এবং ৬.৭ শতাংশ হ্রাস হয়েছে।

তেলবীজ চাষে ধাক্কা, আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে:
তেলবীজ চাষে সামগ্রিকভাবে ২.২ শতাংশ হ্রাস দেখা গেছে। বিশেষ করে নাইজার (-৮৬.৪ শতাংশ), সূর্যমুখী (-৫.১ শতাংশ) এবং সয়াবিন (-৩.৮ শতাংশ) চাষে ধস নেমেছে। শুধু মাটির বাদামে ১ শতাংশ বপন বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছুটা ভারসাম্য আনা গেছে।

এই হ্রাসের মূল কারণ হিসাবে আবহাওয়াজনিত অনিশ্চয়তাকে দায়ী করা হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (IMD) আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে, যা খরিফ ফসলের চাষে সহায়ক হতে পারে। জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত মোটামুটি ১০৫ শতাংশে পৌঁছলেও তার বণ্টন ছিল অসম। জুলাই মাসের প্রথমার্ধে যেখানে ১১ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধে তা ০.৫ শতাংশ স্বাভাবিকের নিচে নেমে এসেছে।

মৌসুমি বৃষ্টিপাতের গতি পুনরুদ্ধার: বপনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব:
এই বছরের বর্ষা মৌসুম প্রাথমিকভাবে সময়মতো শুরু হলেও জুন মাসে তা খুব ধীরে চলছিল। জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের মাত্র ৬৯ শতাংশ। তবে জুনের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ ১৬–৩০ জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিকের ১৩৩ শতাংশে পৌঁছায়। এই গতি পুনরুদ্ধার দেশের অনেক অঞ্চলে চাষাবাদে উৎসাহ জুগিয়েছে।

তবে এখনও বর্ষার অবশিষ্ট সময়কাল বৃষ্টির বণ্টন কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করবে খরিফ মরসুমের চূড়ান্ত ফলাফল। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেও অন্যত্র কম হওয়ায় কিছু চাষের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।

সার্বিকভাবে বললে, FY2025-26-র প্রথম প্রান্তিকে কৃষি GVA বৃদ্ধির হারে সামান্য হ্রাস একটি সতর্ক সংকেত হলেও উদ্বেগের কারণ নয়। রবি ও গ্রীষ্মকালীন ফসলের ফলন, খরিফ মরসুমে বৃষ্টির গতি, এবং আবহাওয়ার ধারাবাহিকতা কৃষিখাতের গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা নেবে। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ভোক্তা ব্যয়ের জন্য এই পরিবর্তনগুলির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

ভারতের কৃষিখাত তার ঐতিহ্যগত দৃঢ়তা নিয়ে আবহাওয়া ও বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে বলেই মনে করছে বিশ্লেষক মহল। ICRA-র এই রিপোর্ট আগামী দিনের জন্য কৃষক, নীতিনির্ধারক এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখাচ্ছে।