কৃষি ড্রোন ভর্তুকিতে পশ্চিমবঙ্গে কারা যোগ্য এবং কীভাবে আবেদন করবেন

পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি ড্রোনের জন্য ভর্তুকি (Agri Drone Subsidy) স্কিম চালু করেছে। এই…

West Bengal Farmers Embrace Drone Technology in 2025 for Smarter Agriculture

পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি ড্রোনের জন্য ভর্তুকি (Agri Drone Subsidy) স্কিম চালু করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য কৃষকদের কৃষি কাজে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য করা, যা ফসল পর্যবেক্ষণ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং জলসেচ ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। এই প্রতিবেদনে আমরা পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য কৃষি ড্রোন ভর্তুকি স্কিমের যোগ্যতা, সুবিধা এবং আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কৃষি ড্রোন ভর্তুকি স্কিম কী?
কৃষি ড্রোন ভর্তুকি স্কিম ভারত সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়, যার মধ্যে ‘নমো ড্রোন দিদি’ এবং ‘কিষাণ ড্রোন স্কিম’ অন্যতম। এই স্কিমগুলির মাধ্যমে কৃষক, কৃষক উৎপাদক সংগঠন (FPO), সমবায় সমিতি এবং মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী (SHG) কৃষি ড্রোন ক্রয়ের জন্য ভর্তুকি পেতে পারেন। ড্রোনের দাম সাধারণত ৩.৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়, এবং এই স্কিমের মাধ্যমে ৪০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই স্কিমের মাধ্যমে কৃষকরা সাশ্রয়ী মূল্যে ড্রোন ক্রয় করতে পারবেন, যা তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং খরচ কমাতে সহায়ক হবে।

   

পশ্চিমবঙ্গে যোগ্যতার মানদণ্ড
পশ্চিমবঙ্গে কৃষি ড্রোন ভর্তুকির জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে হবে:

  • ব্যক্তিগত কৃষক: কমপক্ষে ২ হেক্টর জমির মালিকানা থাকতে হবে। তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং মহিলা কৃষকদের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ বেশি (৫০ শতাংশ পর্যন্ত)।
  • মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী (SHG): ‘নমো ড্রোন দিদি’ স্কিমের অধীনে শুধুমাত্র নিবন্ধিত মহিলা SHG-রা আবেদন করতে পারেন। তাদের বার্ষিক আয় কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা হতে হবে এবং গড়ে মাসিক আয় ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে হবে (কমপক্ষে ৪টি কৃষি মরসুম বা ব্যবসায়িক চক্রের জন্য)।
  • কৃষক উৎপাদক সংগঠন (FPO) এবং সমবায় সমিতি: FPO এবং কাস্টম হায়ারিং সেন্টার (CHC) ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি পেতে পারে, সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
  • কৃষি স্নাতক: কৃষি স্নাতকরা ৫০ শতাংশ ভর্তুকি পেতে পারেন, সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
  • অন্যান্য শর্ত: আবেদনকারীদের নিবন্ধিত কৃষক বা সংগঠন হতে হবে এবং ড্রোনটি অবশ্যই কৃষি কাজে (যেমন সার, কীটনাশক ছিটানো, ফসল পর্যবেক্ষণ) ব্যবহার করতে হবে।

ভর্তুকির পরিমাণ

  • ব্যক্তিগত কৃষক: ৪০-৫০ শতাংশ ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ৪-৫ লক্ষ টাকা।
  • মহিলা SHG: ৮০ শতাংশ ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ টাকা। বাকি খরচের জন্য কৃষি অবকাঠামো তহবিল (AIF) থেকে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে।
  • FPO/CHC: ৮০ শতাংশ ভর্তুকি, সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ টাকা।
  • কৃষি প্রতিষ্ঠান: কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK) এবং ICAR প্রতিষ্ঠান ১০০ শতাংশ ভর্তুকি পেতে পারে, সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা।

এই ভর্তুকির সাথে ড্রোন প্যাকেজে স্প্রে অ্যাসেম্বলি, ব্যাটারি সেট, ক্যামেরা, pH মিটার, বীমা এবং এক বছরের ওয়ারেন্টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

আবেদন প্রক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গে কৃষি ড্রোন ভর্তুকি পেতে নিম্নলিখিত পদ্ধতি:

Advertisements
  • অনলাইন আবেদন: কৃষক, FPO, SHG এবং অন্যান্য যোগ্য প্রতিষ্ঠানদ[email protected]
    কৃষি বিভাগের অফিসিয়াল পোর্টাল (agrimachinery.nic.in) অথবা নমো ড্রোন দিদি পোর্টাল (namodronedidi.php-staging.com)-এ আবেদন করতে হবে।
  • নথিপত্র জমা: আবেদনকারীকে SHG নিবন্ধন নম্বর, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ এবং জমির মালিকানার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
  • যোগাযোগ: নিকটস্থ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সমৃদ্ধি কেন্দ্র বা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
  • প্রশিক্ষণ: ভর্তুকি পাওয়ার আগে ১৫ দিনের ড্রোন পাইলট প্রশিক্ষণ এবং কৃষি কাজে ড্রোন ব্যবহারের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করতে হবে।
  • আবেদনের সময়সীমা: স্থানীয় কৃষি বিভাগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন জমা দিতে হবে, কারণ অনেক ক্ষেত্রে সীমিত কোটা থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে স্কিমের গুরুত্ব
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য এই স্কিমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ রাজ্যের কৃষি খাতে শ্রমিকের ঘাটতি এবং উচ্চ উৎপাদন খরচ একটি বড় সমস্যা। ড্রোন প্রযুক্তি এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এক একর জমিতে কীটনাশক বা সার ছিটানো মাত্র ৭ মিনিটে সম্পন্ন করা যায়, যা শ্রম ও খরচ কমায়। এছাড়া, ড্রোনের মাধ্যমে ফসলের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, মাটির উর্বরতা বিশ্লেষণ এবং জলসেচ ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সাথে করা সম্ভব।

‘নমো ড্রোন দিদি’ স্কিমটি পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এই স্কিমের মাধ্যমে মহিলা SHG-রা ৮০ শতাংশ ভর্তুকি পেতে পারেন, যা তাদের আর্থিক স্বাধীনতা এবং কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক। এই স্কিমের মাধ্যমে প্রতি SHG বছরে ২,০০০-২,৫০০ একর জমিতে কৃষি পরিষেবা প্রদান করতে পারে, যা তাদের আয় বৃদ্ধির একটি নতুন পথ তৈরি করবে।

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
এই স্কিমের বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গের অনেক কৃষক ড্রোন প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন নন। সরকার এই সমস্যা মোকাবেলায় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK) এবং স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে। দ্বিতীয়ত, আবেদন প্রক্রিয়ায় কাগজপত্রের ত্রুটি বা সময়সীমা মিস হওয়ার কারণে অনেকে ভর্তুকি থেকে বঞ্চিত হন। এজন্য কৃষকদের স্থানীয় কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গে কৃষি ড্রোনের ব্যবহার কৃষি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই প্রযুক্তি কৃষকদের সময় ও খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি ফসলের গুণমান উন্নত করবে। সরকারের ভর্তুকি স্কিম এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকরা এই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। বিশেষ করে মহিলা কৃষকদের জন্য ‘নমো ড্রোন দিদি’ স্কিম একটি বড় সুযোগ। এই উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সূত্র: কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নমো ড্রোন দিদি পোর্টাল, এবং এক্স-এ প্রচারিত তথ্য।