কলকাতার (Kolkata) খিদিরপুর অঞ্চলের ঘিঞ্জি রাস্তা। ডক, ট্রামডিপো, ফ্যান্সিমার্কেট – সব মিলিয়ে জমজমাট ব্যাপার। কার্ল মার্কস সরণি থেকে গঙ্গার ঠিক উল্টোমুখে চলে গেছে ভূকৈলাস রোড। তারপর সে পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে নহবতখানা পার হয়ে এক বিশাল পুষ্করিণীর দিকে। তার চারপাশ জুড়ে পড়ে আছে ভূকৈলাস রাজবাড়ির একাংশ। কয়েকটি উচ্চ স্তম্ভ, বটের ঝুরি নামা বসবাসের অযোগ্য কিছুটা, কিছুটা আবার কোনো সচ্ছল শরিকের ভাগে। পুষ্করিণী সংস্কার করা হয়েছে, এর নাম শিবগঙ্গা। রয়েছে দুটি বিশালাকার শিবলিঙ্গ সম্বলিত মুখোমুখি দুই শিব মন্দির, একটি রক্তকমলেশ্বর, একটি কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর। রাজবাড়ির একাংশে ভুকৈলাশ বংশের কুলদেবী পতিতপাবনী দশভুজার মন্দির।
সপ্তদশ শতাব্দী, যখন নবাবি আমল প্রায় শেষ, ইংরেজরা ভার নিচ্ছে ভারতবর্ষের, তখনই কলকাতায় তৈরি হয়েছে বেশ কিছু রাজবাড়ি। আসলে এঁরা সবাই জমিদার বা উপাধিপ্রাপ্ত রাজা। সেসব রাজবাড়ির বেশ কিছু এখনো টিকে আছে শহরের বুকে, কোনোটি ক্ষয়িষ্ণু আবার কোনোটি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। কলকাতার রাজবাড়িদের সেই তালিকায় ভূকৈলাসও একটি নাম, কিন্তু তাকে সহজে মনে করে না কেউ। অথচ এই রাজবাড়ি, সংলগ্ন পুকুর, মন্দির ইত্যাদি ১৯৯৬ সাল থেকেই কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কতৃক হেরিটেজ তালিকাভুক্ত।
ত্রি-খিলানযুক্ত আটচালা মন্দির দুটির পুব দিকেরটির নাম রাখেন রক্তকমলেশ্বর, এর শিবলিঙ্গের মুখ পশ্চিমদিকে। দ্বিতীয়টির গঠনশৈলীও হুবহু এক। এটির নাম কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর। ১৮ ফুট উচ্চতার একেকটি করে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ রয়েছে মন্দিরে, যা কিনা একটি মাত্র পাথর কেটে তৈরি শিবলিঙ্গ হিসেবে এশিয়ার মধ্যে উচ্চতম। দুটি মন্দিরের মাঝখানে নন্দী অর্থাৎ শিবের বাহন ষাঁড়ের মূর্তি।
ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক থেকে ধরলে পরপর গণেশ, রাম-সীতা, হনুমান, সরস্বতী, রাধা-কৃষ্ণ ও দেবী দুর্গা। এই মূর্তিগুলি রাজস্থান থেকে বানিয়ে আনা হয়েছে। বিশেষত রক্তকমলেশ্বর মন্দিরে। কথিত আছে সাধক রামপ্রসাদ এই মন্দির দেখতে এসে মুগ্ধ হয়ে বলেন কৈলাশ থেকে শিব স্বয়ং নেমে এসেছেন। সেই থেকে জয়নারায়ণ ঘোষালের এই ভূসম্পত্তি ভুকৈলাশ নামে খ্যাত হয়।