কেন্দ্রীয় আইনে ক্ষিপ্ত সোনাগাছি এবার দুর্গাপুজোয় দুয়ারের মাটি দেবে না

বিশেষ প্রতিবেদন: কেন্দ্রীয় আইনে ক্ষুব্ধ যৌনকর্মীরা। তাই দুর্গাপুজোয় এই বছর কোনও বারোয়ারি পুজো কমিটিই পাবে না তাদের দোরের মাটি। এমনটাই জানিয়েছে সোনাগাছির (Sonagachi) দুর্বার মহিলা…

sonagachi-durga-puja

short-samachar

বিশেষ প্রতিবেদন: কেন্দ্রীয় আইনে ক্ষুব্ধ যৌনকর্মীরা। তাই দুর্গাপুজোয় এই বছর কোনও বারোয়ারি পুজো কমিটিই পাবে না তাদের দোরের মাটি। এমনটাই জানিয়েছে সোনাগাছির (Sonagachi) দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি।

   

দুর্গা পূজায় ‘যৌনপল্লীর মাটি’ লাগে বলে উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। অতীতে আলাদা আলাদাভাবে এর বিরোধিতা করলেও এবার সেই রীতি মানার জন্য বারোয়ারি কমিটিগুলির পাশে আর দাঁড়াতে চায় না তারা। আগেও এমন কথা উঠেছিল কিন্তু এবার একসঙ্গে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সব যৌনপল্লীই। সমস্ত যৌনকর্মী মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সম্পাদক কাজল বসু জানিয়েছেন, “আগেও আমরা এই কথা বলেছি যে, আমাদের দরজার মাটি না পেলে পূজা হবে না, কিন্তু কেউ আমাদের ঘরের চৌকাঠ পার হলেই অপরাধী। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন আইনই সেটা বলেছে। তাই আমরা ঠিক করেছি, গোটা রাজ্যেই এ বার সব যৌনপল্লী এক সুরে বলবে, দরজার মাটি দেব না।

কিন্তু কেন এই ক্ষোভ? তাঁরা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে মানবপাচার-বিরোধী আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তাতে এই পেশায় যুক্ত যৌনকর্মীরা বিপদের মধ্যে পড়বেন। এমনকি, এই পেশা উঠে যেতে পারে আমাদের মনে হচ্ছে। তাই এই সিদ্ধান্ত’

sonagachi

প্রসঙ্গত,‘ট্র্যাফিকিং পার্সনস বিল ইতিমধ্যেই লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। এখন রাজ্যসভার অনুমোদন পেলেই তা আইন রূপায়নের দিকে এগিয়ে যাবে। সেই বিলই সিলেক্ট কমিটি-তে পাঠানোর দাবি তুলে গত অগস্ট মাসে সংসদ চলাকালীনই সরব হয়েছিল দুর্বার। সংগঠনের আইনজীবী অভিজিৎ দত্ত বলেন, “আমাদের দেশে আগের পাচারবিরোধী আইন রয়েছে। সেটির পরে এই বিলে কোথাও ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক যৌনকর্মীদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবেও যরা এই পেশায় আসবেন তাদের পুনর্বাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যারা স্বেচ্ছায় এই পেশায় এসেছেন তাদের তো বাধ্য করা যায় না। মানবপাচার রোধের নামে আসলে যৌনকর্মীদের পেশাটাকেই তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র। সেই রেশ টেনেই সর্বজনীন দুর্গাপুজোকে বয়কট করতে চাইছেন যৌনপল্লীর বাসিন্দারা।”

সোনগাছি অর্থ্যাৎ যৌনপল্লীর সংগঠন দুর্বার অবশ্য নিজেদের পূজো করছে এবারও। তবে অতীতে সেই পূজোয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে চাপে পড়তে হয়েছিল দুর্বারকে। সেই সময় কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অনুমতি আদায় করেছিল দুর্বার।

এবার নিজেদের পুজোয় যৌনপল্লীর মাটি ব্যবহার করা হবে তো? জবাবে দুর্বারের সদস্য ও সোনাগাছির পুরনো বাসিন্দা বিমলা রায় বলেন, এত কাল তো আমাদের মাটি নিয়ে সবার পূজো হয়েছে। এ বার থেকে আমাদের মাটি, আমাদের পূজা। এটাই আমাদের পুজোর থিম বলতে পারেন।

পুরোহিতরা বলছেন, দুর্গাপুজোয় রাজদ্বার, সর্বতীর্থ, বৃষশৃঙ্গ, গজদন্তের মাটিও লাগে। কিন্তু সে সব তো আর পাওয়া যায় না। গঙ্গামাটিকে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একান্তই মাটি না পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে প্রতীকী ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে শাস্ত্রে।