অফবিট ডেস্ক: সামনেই দুর্গা পূজা (Durga Puja), হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পার্বতীপুর গ্রামের মুসলমান মহল্লায় এখন হাঁফ ফেলার সময় নেই। কারণ এই গ্রামের কমবেশি ৪০টি মুসলমান পরিবার প্রতিমার নকল চুল তৈরির সঙ্গে যুক্ত। একই চিত্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মীরপুর গ্রামেও। দুই গ্রামের পরিবারগুলির কেউই সম্প্রীতির মতো ভারী শব্দের মানে বোঝেন না, ওদের একমাত্র বোধগম্য ‘পেটের টান’। সারা বছর ধরে শুধু প্রতিমার চুল তৈরি করেই এতগুলো জীবন চলে।
আরও পড়ুন আর মাত্র ৩ দিন, ভারত হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষিত না হলে সমাধি নেবেন এই ধর্মগুরু
দুটি গ্রামে গেলেই দেখা যাবে রাস্তার ধারে বাঁশের খুঁটিতে থরে থরে ঝোলানো কালো রঙের বিনুনি। রাজ্যের কুমোরটুলি ছাড়াও যা যায় রাজ্যের অন্যত্র, এমনকি ভিন রাজ্যেও। প্রতিমার মাথার এই চুল তৈরির প্রধান উপাদান হল পাট। হুগলির মশাট, শিয়াখালা প্রভৃতি এলাকা থেকে পাট আনা হয়। এরপর সেই পাট কেটে রঙে ভিজিয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয় । তাকে তেল দিয়ে ছেনে বিনুনি তৈরি করে প্যাকেটে করে কলকাতার বাজারে পাঠানো হয়। পাট দিয়ে তৈরি এই চুল বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোঁচকানো হয় বলে স্থানীয়দের মুখে ‘ক্রেপ’ ব্যবসা নামেও পরিচিত।
সম্প্রতি পাট এবং রংয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই শিল্পে সমস্যা তৈরি হয়েছে। গত বছর সেই ব্যবসায় থাবা বসিয়েছিল করোনা। অতিমারীতে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তারা। এবার বাধ সেধেছে বৃষ্টি, সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে আবার বাড়ছে করোনা সংক্রমণও। এবছর দেরিতে বর্ষা আসায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত পাটের চুল ব্যবসায়ীরা। সারাদিন ঝিরঝির করে বৃষ্টি হওয়ায় চুল শুকোতে সমস্যা হচ্ছে।
আরও পড়ুন শরিয়তি আইনে চলা আফগানিস্তান থেকে উইঘুর মুসলিমদের চিনে পাঠাবে তালিবান
এত সমস্যা থাকলেও হাল ছাড়তে নারাজ পার্বতীপুর, মীরপুর গ্রামের নকল চুল তৈরির কারিগরেরা। ফলে এবারও শুধু দুর্গা-কালী-জগদ্ধাত্রী-সরস্বতী প্রতিমার মাথাতেও শোভা পাবে ‘মুসলমান’ শিল্পীদের তৈরি চুল। বাঙালির বছরভর উৎসবে আক্ষরিক অর্থেই ফুটে উঠবে, ‘ধর্ম হোক যার যার, উৎসব সবার’।