চা পাতায় পচন, ক্ষতির মুখে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প

উত্তরবঙ্গ ও আসামের বিস্তীর্ণ চা বাগান (Tea Garden) বর্তমানে এক ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন। ছত্রাকের সংক্রমণে চা পাতায় পচন ধরছে, ফলে চাষিরা হয়ে উঠছেন চরম দিশেহারা।…

Tea Garden-leaf-rot-north-bengals-tea-industry-faces-losses

উত্তরবঙ্গ ও আসামের বিস্তীর্ণ চা বাগান (Tea Garden) বর্তমানে এক ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন। ছত্রাকের সংক্রমণে চা পাতায় পচন ধরছে, ফলে চাষিরা হয়ে উঠছেন চরম দিশেহারা। বহু জায়গায় চা পাতার মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যার জেরে উৎপাদনও ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক মাস ধরে আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা—অতিরিক্ত বৃষ্টি ও আর্দ্রতা—ছত্রাক বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।

চা শিল্প(Tea Garden) উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির প্রধান ভরকেন্দ্র। হাজার হাজার শ্রমিক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু রোগবালাইয়ের কারণে একদিকে চা পাতার ফলন কমছে, অন্যদিকে মান খারাপ হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যেই দার্জিলিং ও দুয়ার্সের বেশ কিছু চা বাগানে প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের দাবি, উৎপাদন কমে গেলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ খরচ বাঁচাতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে পারে। ফলে তাদের জীবিকাও বিপন্ন হতে চলেছে।

   

চা বাগান মালিকরা বলছেন, হঠাৎ করে ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুল খরচের প্রয়োজন। ওষুধ, কীটনাশক ও বৈজ্ঞানিক পরিচর্যা ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু বর্তমান বাজারে চায়ের দাম স্থিতিশীল থাকায় সেই খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়ছে। চাষিদের বক্তব্য, সরকার যদি বিশেষ ভর্তুকি বা আর্থিক সহায়তা না দেয়, তবে এই সংকট থেকে বেরোনো সম্ভব নয়।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ছত্রাক দমনে আধুনিক প্রযুক্তি ও জৈবিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তার জন্য চাষিদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার। কিছু চা বাগানে পরীক্ষামূলকভাবে জৈবিক ছত্রাকনাশক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও বৃহৎ পরিসরে এটি কার্যকর করতে গেলে সময় ও অর্থ—দুটিরই প্রয়োজন।

চা চাষিদের মতে, তাদের লড়াই এখন একপ্রকার “প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ”। প্রতিদিন নতুন করে গজিয়ে উঠছে পচনধরা পাতা। ফলে শ্রমিকরা যতই যত্ন করে পাতা তুলুন, গুণমান নষ্ট হওয়ায় তার দাম মিলছে না। এর ফল ভুগতে হচ্ছে সরাসরি চাষি ও শ্রমিকদের।

Advertisements

চা বাগানকে (Tea Garden) কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের হাজার হাজার পরিবার নির্ভরশীল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে স্থানীয় ছোটখাটো ব্যবসা—সবই চা শিল্পের উপর নির্ভর করে। সেই শিল্প যদি ছত্রাকজনিত রোগে বিপর্যস্ত হয়, তবে গোটা অঞ্চলের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চাষি সংগঠনগুলির দাবি, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। বিশেষত চাষিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, ভর্তুকি ও আধুনিক পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় চায়ের সুনামও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা।

ফলে স্পষ্ট, ছত্রাকের সংক্রমণ এখন শুধুমাত্র কৃষি সমস্যা নয়, এটি এক সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটেও রূপ নিচ্ছে। চা বাগানের শ্রমিক থেকে শুরু করে রপ্তানি ব্যবসায়ী—সবাই এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও প্রশাসন কত দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয় এই সঙ্কট কাটাতে।