আজ, সোমবার সকালেই আচমকা রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। কলকাতা হাইকোর্টের চত্বরে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) । হঠাৎ করে আদালতে তাঁর আগমন ঘিরে মুহূর্তের মধ্যেই জল্পনা তৈরি হয়। আদালতের নিরাপত্তারক্ষী থেকে সাংবাদিক—সবার মনে তখন একটাই প্রশ্ন, হঠাৎ কী কারণে তিনি হাইকোর্টে গেলেন?
সাধারণত কোনও রাজনৈতিক নেতা বা সাংসদ ব্যক্তিগতভাবে আদালতে আসেন না। আইনজীবীরাই অধিকাংশ সময় মামলা সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র জমা দেন। কিন্তু এদিন অভিষেক (Abhishek Banerjee) নিজে আদালতে এসে হাজির হওয়ায় কৌতূহল বেড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে।
পরবর্তীতে আদালত সূত্রে জানা যায়, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) জয়ের বিরুদ্ধে একটি ইলেকশন পিটিশন বা নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলার প্রেক্ষিতে সাংসদকে পাল্টা হলফনামা জমা দিতে হয়। সেই হলফনামায় নিজের সই করার জন্যই অভিষেক আদালতে গিয়েছিলেন। নথিতে সই করার কাজ আদালতের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। এর পর আর কোনও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়েই তিনি আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের নির্বাচন ঘিরে এটাই প্রথমবার নয় যে আইনি লড়াইয়ের আভাস মিলল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীসহ বিরোধীরা বারবার অভিযোগ তুলেছিলেন, ভোটে অনিয়ম হয়েছে। ভোট গণনা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ডায়মন্ড হারবারের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি নির্বাচন মামলা দায়ের হয়। তারই প্রেক্ষিতে এদিন হাইকোর্টে হাজির হলেন অভিষেক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অভিষেকের(Abhishek Banerjee) এই পদক্ষেপে স্পষ্ট বার্তা আছে। সাধারণত এমন নথি জমা দেওয়ার জন্য আইনজীবীরা দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তিনি নিজে আদালতে গিয়ে স্বাক্ষর করলেন—এটি বিরোধীদের উদ্দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি যেন বোঝাতে চাইছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর কাছে লুকোনোর কিছু নেই, আদালতের সামনে তিনি নির্দ্বিধায় দাঁড়াতে প্রস্তুত।
এদিকে, অভিষেকের (Abhishek Banerjee) আদালতে উপস্থিতি নিয়ে বিরোধী শিবিরেও চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির মামলা উঠছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে কয়লা-কাণ্ড, গরু পাচার—সব ক্ষেত্রেই অভিষেকের নাম বারবার এসেছে। যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এবারও নির্বাচন ঘিরে আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি বিরোধীদের কটাক্ষ থেকে মুক্তি দেয়নি।
তবে তৃণমূল শিবির অন্য কথা বলছে। তাঁদের মতে, অভিষেকের আদালতে যাওয়া প্রমাণ করে, তিনি ভীত নন। বরং আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজে হাজির হয়ে সই করেছেন। এতে স্পষ্ট হয়, সাংসদ হিসাবে তিনি গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক নিয়ম মেনে চলেন। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, এভাবেই বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ একে একে ভেস্তে যাবে।
রাজনৈতিক মহলে তাই প্রশ্ন উঠছে—এই নির্বাচন মামলার রেশ কতদূর গড়াবে? আদালতের নির্দেশে যদি মামলার শুনানি শুরু হয়, তবে তার প্রভাব ডায়মন্ড হারবারের রাজনীতিতে পড়তে পারে। আবার, যদি আদালত অভিষেকের জয়ের স্বপক্ষে রায় দেয়, তবে বিরোধীদের রাজনৈতিক দাবি অনেকটাই খর্ব হবে।
সব মিলিয়ে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) উপস্থিতি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপেই নজর থাকে রাজ্য রাজনীতিতে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। আদালতে নথিতে সই করার এই সরল পদক্ষেপকেই ঘিরে চলছে তুমুল জল্পনা-কল্পনা। আগামী দিনে এই মামলা রাজনীতির অঙ্গনে নতুন মোড় নেবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।