ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে এবার একই নৌকোয় ফিজি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি ভারত ও ফিজির (Fiji)মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা এবং গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন যাত্রায় দুই দেশের যৌথ ভূমিকার উপর জোর দিয়ে বলেছেন, “ভারত ও…

Modi in Fiji

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি ভারত ও ফিজির (Fiji)মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা এবং গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন যাত্রায় দুই দেশের যৌথ ভূমিকার উপর জোর দিয়ে বলেছেন, “ভারত ও ফিজি সমুদ্রের দূরত্বে বিভক্ত হলেও, আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা একই নৌকায় চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন যাত্রায় সহযাত্রী এবং একটি এমন বিশ্ব ব্যবস্থার নির্মাণে অংশীদার, যেখানে গ্লোবাল সাউথের স্বাধীনতা, ধারণা এবং পরিচয় সম্মান পাবে।

   

কোনো কণ্ঠস্বর উপেক্ষিত হবে না এবং কোনো দেশ পিছিয়ে থাকবে না।”প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই মন্তব্য ফিজির প্রধানমন্ত্রী সিতিভেনি রাবুকার সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় প্রকাশ পায়, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতিফলন।

ভারত ও ফিজি, যদিও ভৌগোলিকভাবে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের দুই প্রান্তে অবস্থিত, তবুও তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং উন্নয়নমূলক লক্ষ্যের একটি গভীর সংযোগ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেছেন যে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর জন্য একটি ন্যায্য ও সুষম বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা ভারতের কূটনৈতিক অগ্রাধিকার।ফিজির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সম্প্রদায়ের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে, যারা ১৯ শতকের শেষ দিকে ফিজিতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় শ্রমিক হিসেবে এসেছিলেন।

এই সম্প্রদায়, যারা এখন ফিজির জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, দুই দেশের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক সেতু হিসেবে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে।

গ্লোবাল সাউথের প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা উল্লেখ করে মোদী বলেন, “আমরা এমন একটি বিশ্ব চাই, যেখানে প্রতিটি দেশের কণ্ঠস্বর সমান গুরুত্ব পায়।

ফিজির মতো ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটি অস্তিত্বের সংকট। ভারত তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করছে।” ভারতের ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স (আইএসএ) এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিডিআরআই)-এর মতো উদ্যোগ ফিজির মতো দেশগুলোর জন্য টেকসই উন্নয়ন এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মোদী আরও বলেন, “আমরা গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর স্বাধীনতা এবং পরিচয়কে সম্মান করি। তাদের উন্নয়নের যাত্রায় আমরা তাদের সঙ্গী হতে চাই, শাসক নয়।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ভারতের কূটনৈতিক দর্শন তুলে ধরেছেন, যা গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর স্বার্থকে কেন্দ্র করে একটি ন্যায্য ও সহযোগিতামূলক বিশ্ব ব্যবস্থার উপর জোর দেয়।

Advertisements

ফিজির প্রধানমন্ত্রী রাবুকা এই বৈঠকে ভারতের সমর্থনের প্রশংসা করে বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক বা কূটনৈতিক নয়, এটি আমাদের ভাগ করা মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে।”ভারত ফিজির সঙ্গে তার সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি স্থানান্তর, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা প্রদান, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা। ভারত ফিজির জন্য বৃত্তি প্রোগ্রাম প্রসারিত করেছে, যার মাধ্যমে ফিজিয়ান শিক্ষার্থীরা ভারতের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়াও, ভারত ফিজির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হাসপাতাল নির্মাণ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ফিজির মতো দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখে ফিজির মতো দেশগুলোর জন্য ভারতের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আমরা ফিজির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি যাতে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে পারে।”

এই প্রেক্ষাপটে, ভারত ফিজিকে সৌরশক্তি প্রকল্প এবং দুর্যোগ-প্রতিরোধী অবকাঠামো তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে।এই বৈঠকের মাধ্যমে ভারত ও ফিজি তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। দুই দেশই গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বক্তব্য ভারতের কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্পষ্ট প্রতিফলন, যেখানে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর স্বার্থ এবং কণ্ঠস্বরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।এই ঘোষণা এবং দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা ভারত-ফিজি সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ত্রাণ সংগহের সময় আচমকা ইসরায়েলি গুলিতে নিহত চার ফিলিস্তিনি

গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি ফিজির মতো দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্কের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই সহযোগিতা কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির অংশ।