ED-র হাতে গ্রেফতার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ

মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban krishna Saha)  এ বার ইডির জালে। সোমবার ভোরে তাঁর বাড়িতে হানা দেয় ইডি-র একটি দল। জানা গিয়েছে, নিয়োগ…

ED Arrests TMC MLA Jiban Krishna Saha After Early Morning Raid

মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban krishna Saha)  এ বার ইডির জালে। সোমবার ভোরে তাঁর বাড়িতে হানা দেয় ইডি-র একটি দল। জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই তদন্ত চালাচ্ছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। অবশেষে এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে খবর, ইডি-র আধিকারিকরা সকাল সকাল পৌঁছে যান জীবনকৃষ্ণ সাহার(Jiban krishna Saha)  বাড়িতে। তল্লাশি শুরু হতেই হইচই পড়ে যায় এলাকায়। অভিযোগ, ইডি-র উপস্থিতি টের পেয়েই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁর মোবাইল ফোনটিকে ঝোপে ফেলে দেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। যদিও মুহূর্তের মধ্যেই তাঁকে পাকড়াও করে ফেলেন ইডি আধিকারিকরা। পরে তাঁর ফোনটিও উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার পরই শুরু হয় জোর জল্পনা।

   

ইডি-র অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জীবনকৃষ্ণ সাহার(Jiban krishna Saha)  নাম বারবার উঠে এসেছে। বিশেষত শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের মামলায় তাঁর সম্পৃক্ততার প্রমাণ হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এর আগে সিবিআই-ও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে এ বার সরাসরি গ্রেফতার করল ইডি। এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্যের রাজনীতি।

তৃণমূল শিবিরের দাবি, এটি একেবারেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, বিধায়ক ইতিমধ্যেই তদন্তকারী সংস্থার নজরে এসেছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন মুর্শিদাবাদের এই বিধায়ক।

তবে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ আরও তীব্র। বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা সরব হয়ে বলেন, “তৃণমূল জুড়ে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষক নিয়োগ হোক বা গরু পাচার, কয়লা কেলেঙ্কারি—প্রতিটি জায়গাতেই শাসক দলের নেতাদের নাম জড়াচ্ছে। জীবনকৃষ্ণ সাহার গ্রেফতার সেই প্রমাণই দিল।”

স্থানীয় সূত্রে খবর, জীবনকৃষ্ণ সাহা এলাকায় প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বড়ঞার তৃণমূল সংগঠন সামলাচ্ছেন। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়াতেই এলাকায় চাপা অসন্তোষ শুরু হয়েছিল। সোমবারের গ্রেফতার সেই জল্পনাকে আরও দৃঢ় করল।

Advertisements

ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গ্রেফতারের পর জীবনকৃষ্ণকে কলকাতায় আনা হতে পারে। সেখানে তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করা হবে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই মামলায় তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারেন। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্যও খতিয়ে দেখা হবে। সূত্রের দাবি, ফোনে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে, যা মামলার গতিপথকে আরও স্পষ্ট করবে।

এদিকে, সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, “যদি দোষী হন তবে শাস্তি পাওয়া উচিত।” আবার অনেকে মনে করছেন, “রাজনৈতিক চাপে পড়েই এমন পদক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।” ফলে গ্রেফতার ঘিরে বিভাজন তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন, এই গ্রেফতার নিঃসন্দেহে তৃণমূলের জন্য বড় ধাক্কা। বিশেষত পুজোর আগে এই ঘটনা দলের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও শাসক দল দাবি করছে, “একজন ব্যক্তির জন্য গোটা দলকে দায়ী করা যাবে না। আইন তার নিজের পথে চলবে।”

সব মিলিয়ে, জীবনকৃষ্ণ সাহার গ্রেফতার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। এখন নজর তদন্তের অগ্রগতির দিকে। ইডি-র হাতে কি আরও তৃণমূল নেতা-নেত্রীর নাম আসতে চলেছে? সময়ই তার উত্তর দেবে।