চাহিদা বেশি, জোগান কম! পুজোর বাজারে আকাশছোঁয়া সবজির দাম

টানা কয়েকদিনের অতি বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় আনাজ চাষের (Vegetable Price) উপর নেমে এসেছে চরম সঙ্কট।মাঠে জমে থাকা জল একদিকে যেমন ফসলকে গিলে ফেলছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত…

vegetable price today in kolkata 25 august

টানা কয়েকদিনের অতি বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় আনাজ চাষের (Vegetable Price) উপর নেমে এসেছে চরম সঙ্কট।মাঠে জমে থাকা জল একদিকে যেমন ফসলকে গিলে ফেলছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত আর্দ্রতায় গাছের গোড়া পচে গাছ মারা যাচ্ছে। চাষিরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তাঁদের সারা বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ হয়ে যাবে।

চাষিদের অভিমত, বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টির জন্য তাঁরা প্রস্তুত থাকেন। তবে এবারের মতো টানা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই অনেক ক্ষেতেই শাক-সবজির গাছ হলুদ হয়ে গিয়েছে। পটল, ঝিঙে, (Vegetable Price) বেগুন, ঢেঁড়স, টমেটো—এই সমস্ত আনাজের জমি জলে থইথই করছে। জল নামতে সময় লাগবে, কিন্তু তার আগেই গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে চাষিরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন।

   

কৃষকদের একাংশ জানিয়েছেন, পুজোর বাজারকে কেন্দ্র করে তাঁরা বাড়তি চাষ করেছিলেন। দুর্গাপুজোতে সবজির চাহিদা বেড়ে যায়, আর সেই সময়ে ভালো দামও মেলে। তাই বাড়তি পরিশ্রম করে অনেকেই একাধিক ফসল একসঙ্গে তুলতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে যে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তাতে পুজোর বাজারে চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।

ব্যবসায়ীরাও বলছেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই সবজির দাম চড়া হতে শুরু করেছিল। কারণ, উৎপাদন কমে গিয়েছিল বিভিন্ন এলাকায়। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমতে শুরু করেছে। যে পরিমাণ আনাজ সাধারণত বাজারে আসে, তার থেকে অনেকটাই কম আসছে। ফলস্বরূপ, খুচরো বাজারে প্রতিটি সবজির দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।

একজন স্থানীয় সবজি (Vegetable Price) ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগেও পটল কেজি প্রতি ৫০–৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু এখন তার দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকায় (Vegetable Price) দাঁড়িয়েছে। ঢেঁড়স ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। কাঁকরোল, করলা, বেগুন—সবকিছুর দামই বেড়ে গিয়েছে। পুজোর সময় যদি সরবরাহ স্বাভাবিক না হয়, তবে দাম আরও বাড়বে।

Advertisements

চাষিদের (Vegetable Price) দাবি, সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে ক্ষতির অঙ্ক সামলানো সম্ভব হবে না। বন্যা বা জলাবদ্ধতার কারণে চাষ নষ্ট হলে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। নইলে ঋণ শোধ করা তো দূরের কথা, সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে তাঁদের। অনেকেই বলেছেন, কৃষিঋণ নিয়ে তাঁরা জমিতে ফসল করেছিলেন। এখন ফসল না বাঁচলে সেই ঋণ শোধ করা যাবে না। এর ফলে আগামী মৌসুমেও চাষ করার সাহস হারাবেন তাঁরা।

স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, জল দ্রুত নামানোর জন্য সেচ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও এত বড় ক্ষতি থেকে কৃষকদের রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে যেসব চাষির জমি নীচু এলাকায় রয়েছে, তাঁদের ক্ষতি তুলনায় বেশি।

অন্যদিকে, সাধারণ ক্রেতারাও দিশেহারা। প্রতিদিনের বাজারে গিয়ে তাঁদের পকেটে চাপ বাড়ছে। পুজোর আগে যেখানে নতুন জামা-কাপড় কেনার আনন্দে ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে এবার বাজেটের বড় অংশ গলছে শুধু সবজির বাজারেই।

সব মিলিয়ে, টানা বৃষ্টিতে পূর্বস্থলীর আনাজ চাষ কার্যত ভেস্তে যাওয়ার পথে। চাষিরা যেমন ক্ষতির হিসেব কষছেন, ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, পুজোর সময় বাজারে চাহিদা মেটানো যাবে না। আর তার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে। ফলে এবারের দুর্গাপুজোয় শুধু আনন্দ-উৎসব নয়, চড়া সবজির দামই হতে পারে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়।