CIBIL score নেই? তবুও লোন আবেদন করা যাবে, জানাল অর্থ মন্ত্রক

ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সিবিল স্কোরের (CIBIL score) ভূমিকা নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে সংসদে লিখিত জবাব দিয়ে স্পষ্ট করল অর্থ মন্ত্রক। প্রথমবার ঋণগ্রহণকারীদের…

Supreme Court says banks will have to give loans even if the CIBIL score is poor

ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সিবিল স্কোরের (CIBIL score) ভূমিকা নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে সংসদে লিখিত জবাব দিয়ে স্পষ্ট করল অর্থ মন্ত্রক। প্রথমবার ঋণগ্রহণকারীদের জন্য সিবিল স্কোর বাধ্যতামূলক নয় বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। একইসঙ্গে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র সিবিল স্কোরের ওপর নির্ভর করে ঋণ মঞ্জুর বা বাতিল করতে পারবে না।

গত সপ্তাহে দুটি লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানান, ঋণ আবেদন প্রক্রিয়ায় সিবিলের ভূমিকা নিয়ে ভুল ধারণা ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, সিবিল একটি ক্রেডিট ইনফরমেশন কোম্পানি (CIC) হিসেবে কাজ করে এবং ঋণগ্রহণকারীর ঋণ-ইতিহাস ও পরিশোধক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। তবে ঋণ মঞ্জুরের একমাত্র নির্ণায়ক হিসেবে সিবিল স্কোরকে ধরা হয় না।

   

মন্ত্রী আরও স্পষ্ট করেন যে, ঋণ অনুমোদন সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বাণিজ্যিক বিবেচনা, নীতিমালা ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) নির্দেশিকার ওপর নির্ভরশীল।

ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন ঋণ মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন গ্রাহকের অতীত ঋণ পরিশোধের ইতিহাস, যেমন—কোনও বিলম্বিত কিস্তি, রাইট-অফ, পুনর্গঠন বা নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা—এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সব তথ্য সিবিল স্কোরের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এর ফলে ঋণগ্রহীতার আর্থিক সচ্ছলতা ও পরিশোধ ক্ষমতা বোঝা সহজ হয়।

তবে, আরবিআই কোনও নির্দিষ্ট ন্যূনতম স্কোর বাধ্যতামূলক করেনি। অর্থাৎ কম স্কোর থাকলেও বা স্কোর না থাকলেও ঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকে, যদি ব্যাঙ্ক অন্যান্য নথি ও তথ্যের ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হয়।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী সংসদে জানান, আরবিআই-এর জানুয়ারি ২০২৫-এর নির্দেশ অনুযায়ী, প্রথমবার ঋণ নেওয়ার আবেদন শুধুমাত্র ক্রেডিট ইতিহাস না থাকার কারণে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। এর ফলে নতুন প্রজন্মের ঋণগ্রহীতাদের জন্য একটি বড় সুবিধা তৈরি হয়েছে।

Advertisements

নিজের ক্রেডিট স্কোর জানার জন্য নির্দিষ্ট ফি আরোপ করা হয়েছে। আরবিআই-এর নিয়ম অনুযায়ী, সিবিল স্কোর সংগ্রহের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ফি নেওয়া যেতে পারে। তবে, ২০১৬ সালের নির্দেশ অনুসারে, প্রতিটি ক্রেডিট ইনফরমেশন কোম্পানিকে বছরে অন্তত একবার গ্রাহককে বিনামূল্যে পূর্ণাঙ্গ ক্রেডিট রিপোর্ট (সিবিল স্কোর-সহ) দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।

ট্রান্সইউনিয়ন সিবিল (TransUnion CIBIL) বা ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (ইন্ডিয়া) লিমিটেড, সিবিল নামেই পরিচিত। এটি ২০০৫ সালের ক্রেডিট ইনফরমেশন কোম্পানিজ (রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ২০০৫ ও ২০০৬ সালের নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়। বর্তমানে আরবিআই-এর অনুমোদিত চারটি সিআইসি (CIC) সংস্থা হলো—
1. ট্রান্সইউনিয়ন সিবিল
2. ইকুইফ্যাক্স ক্রেডিট ইনফরমেশন সার্ভিসেস
3. এক্সপেরিয়ান ক্রেডিট ইনফরমেশন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া
4. সিআরআইএফ হাই মার্ক ক্রেডিট ইনফরমেশন সার্ভিসেস
এদের কাজ হলো— ঋণগ্রহীতার আর্থিক তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সেই তথ্য সরবরাহ করা। সব তথ্য অন্তত সাত বছর সংরক্ষণ করতে হয়।

বাজেট ২০২৪-এ ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনফরমেশন রেজিস্ট্রি (NFIR) গঠনের ঘোষণা দেওয়া হলেও, বর্তমানে সিবিলকে প্রতিস্থাপনের কোনও পরিকল্পনা নেই। নতুন এই রেজিস্ট্রি মূলত সমন্বিত আর্থিক তথ্য ভান্ডার হিসেবে কাজ করবে, যা ঋণগ্রহীতাদের সামগ্রিক ক্রেডিট মূল্যায়ন সহজ করবে।

সিবিল স্কোর নিয়ে অভিযোগের কথা মাথায় রেখে আরবিআই ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে—
গ্রাহকদের বছরে একবার বিনামূল্যে পূর্ণ ক্রেডিট রিপোর্ট প্রদান।
গ্রাহকের রিপোর্ট অ্যাক্সেস করা হলে এসএমএস বা ইমেইলে অবহিত করা।
ঋণ খেলাপ বা বকেয়ার তথ্য এসএমএস/ইমেইলে জানানো।
অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের আগে অভ্যন্তরীণ ওম্বাডসম্যানের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনা।
রুট কজ অ্যানালাইসিস (RCA) বা অভিযোগের মূল কারণ নির্ধারণ, বছরে অন্তত দু’বার।
প্রয়োজনে গ্রাহক আরবিআই ওম্বাডসম্যান স্কিম ২০২১-এর অধীনে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

অর্থ মন্ত্রকের এই ব্যাখ্যার ফলে স্পষ্ট হয়েছে যে, সিবিল স্কোর গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি ঋণ অনুমোদনের একমাত্র মাপকাঠি নয়। বিশেষত নতুন ঋণগ্রহীতাদের জন্য বড় স্বস্তি—ঋণ পাওয়ার পথে সিবিল স্কোরের অভাব বাধা হবে না। তবে নিয়মিত ঋণগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সময়মতো ঋণ পরিশোধ করাই দীর্ঘমেয়াদে সুবিধাজনক সিবিল স্কোর গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।