ধ্বংসের মুখে অসমের চা শিল্প! নেপথ্যে কি কারণ?

চা শিল্প অসমের ঐতিহ্য (Assam Tea)। এই চা বিশেষত এর রঙের জন্য বিখ্যাত। যা বিশ্ববাজারে অত্যন্ত সুখ্যাতির সঙ্গে গ্রহণ করেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে…

Assam Tea industry

চা শিল্প অসমের ঐতিহ্য (Assam Tea)। এই চা বিশেষত এর রঙের জন্য বিখ্যাত। যা বিশ্ববাজারে অত্যন্ত সুখ্যাতির সঙ্গে গ্রহণ করেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে অসমের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প এখন সংকটের মুখে। অসমের বিজেপি বিধায়ক মৃণাল সাইকিয়া কেনিয়া থেকে চা আমদানির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে এই প্রবণতা রাজ্যের শতাব্দী প্রাচীন চা শিল্পের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ ২৪ আগস্ট তাঁর পোস্টে, খুমতাই নির্বাচনী এলাকার বিধায়ক সাইকিয়া বলেছেন, “কেনিয়ান চা-এর অতিরিক্ত আমদানি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, অসমের চা শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।”

   

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই আমদানি নীতি পুনর্বিবেচনা না করলে অসমের চা শিল্পের জন্য “মৃত্যুর ঘণ্টা” বেজে উঠতে পারে।ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী দেশ, এবং অসমের চা এই খ্যাতির একটি প্রধান অংশীদার। তবে, সাইকিয়ার মতে, কম দামের এবং নিম্নমানের কেনিয়ান চা-এর নিয়ন্ত্রণহীন আমদানি খাঁটি অসম চা-এর বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তাঁর শেয়ার করা তথ্য অনুসারে, এ বছর ভারত কেনিয়া থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি চা আমদানি করেছে, যখন অসমের গুদামগুলো বিক্রি না হওয়া চা-এর মজুত দিয়ে ভরে আছে এবং নিলামে দাম ভেঙে পড়ছে। অসমের ১.৩৩ লক্ষ ক্ষুদ্র চা চাষি (এসটিজি), যারা রাজ্যের ৫৫ শতাংশ চা উৎপাদন করে এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে।

তারা এই পরিস্থিতির কারণে গভীর সংকটের মুখে পড়েছেন। কাঁচা চা পাতার দাম ইতিমধ্যেই প্রতি কেজিতে ১২-১৪ টাকার নিচে নেমে গেছে, এবং কেনিয়ান চা-এর প্রবাহ এই দামকে আরও কমিয়ে দিতে পারে।রিপোর্ট অনুযায়ী, টাটা এবং হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের মতো ৩০০টিরও বেশি কোম্পানি কম দামের কেনিয়ান চা আমদানি করছে।

এই আমদানি করা চা উচ্চমানের অসম চা-এর সঙ্গে মিশিয়ে দেশীয় বাজারে বিক্রি এবং বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সাইকিয়া যুক্তি দিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া খাঁটি অসম চা-এর চাহিদা এবং মূল্য উভয়কেই ক্ষুণ্ণ করছে। তিনি বলেন, এই প্রথা শুধুমাত্র চা শিল্পের সুনামের উপর নয়, বরং এর অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

চা শিল্পের এই সংকট শুধুমাত্র বড় বড় চা বাগানের মালিকদেরই নয়, হাজার হাজার ক্ষুদ্র চাষিদেরও আঘাত করেছে। কাঁচা চা পাতা এবং প্রক্রিয়াজাত চা-এর দাম তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা এই খাতের আর্থিক সংকটকে আরও তীব্র করেছে। অসমের চা শিল্পের উপর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে, যার মধ্যে রয়েছে বড় চা বাগানের শ্রমিক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র চাষিরা।

Advertisements

সাইকিয়া এই সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাবের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, “এই শিল্প শুধুমাত্র অসমের অর্থনীতির মেরুদণ্ড নয়, এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার ভিত্তি।” তিনি সতর্ক করে বলেন, বর্তমান শুল্কমুক্ত আমদানি নীতি পুনর্বিবেচনা না করা হলে অসমের চা শিল্পের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে।অসমের চা শিল্পের এই সংকট নিয়ে শিল্প বিশেষজ্ঞরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গুয়াহাটি টি অকশন বায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি দিনেশ বিহানি জানিয়েছেন, কেনিয়ার মোমবাসা নিলামে চা-এর দাম ভারতের তুলনায় অনেক কম, যা আমদানিকে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, “কেনিয়ায় প্রায় ১১৯ মিলিয়ন কেজি চা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মজুত রয়েছে, এবং এই পুরোনো এবং নিম্নমানের চা ভারতে পাঠানো হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, শুধু কেনিয়ার নয়, বুরুন্ডি, মালাউই এবং তানজানিয়ার মতো দেশের চা-ও মোমবাসা নিলামের মাধ্যমে এসে ভারতীয় চা-এর সঙ্গে মিশ্রিত হচ্ছে।

ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অংশুমান কানোরিয়া বলেছেন, “অনিয়ন্ত্রিত আমদানি এবং এই চা-কে ভারতীয় চা হিসেবে রপ্তানি করা ভারতীয় চা-এর সুনাম, চাহিদা এবং দামের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।” তিনি সরকারের কাছে কঠোর বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছেন।

অনিল আম্বানির ভূমিকা নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া

অসমের চা শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মনে করেন সাইকিয়া। তিনি বলেন, “শুল্কমুক্ত আমদানি বন্ধ করা এবং খাঁটি ভারতীয় চা-এর প্রচারে জোর দেওয়া এখন সময়ের দাবি।” এই ঘটনা অসমের চা শিল্পের ভবিষ্যৎ এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবিকার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।