ভারতের মূলধন বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI) জীবন বিমা সংস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এলআইসি)-কে আইডিবিআই ব্যাংকের পাবলিক শেয়ারহোল্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এই স্বীকৃতি কার্যকর হবে কেবলমাত্র কৌশলগত বিক্রয় (স্ট্র্যাটেজিক ডিসইনভেস্টমেন্ট) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে।
মুম্বই-ভিত্তিক আইডিবিআই ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিনিয়োগ ও পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট দপ্তর (Dipam) ইতিমধ্যেই সেবির অনুমোদনের বিষয়ে ব্যাংককে অবহিত করেছে। অনুমোদন পেলেও, এলআইসি-কে কয়েকটি শর্ত মানতে হবে—
1. ভোটাধিকার সীমাবদ্ধতা: এলআইসি-র ভোটাধিকার ব্যাংকের মোট কার্যকর ভোটাধিকারের ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অর্থাৎ, তারা ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারবে না।
2. কোনো নিয়ন্ত্রণ নয়: এলআইসি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আইডিবিআই ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
3. কোনো বিশেষ অধিকার নয়: এলআইসি-র ব্যাংকের সঙ্গে এমন কোনো বিশেষ অধিকার বা চুক্তি থাকতে পারবে না যা তাদের আলাদা সুবিধা দেবে। শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ীই তাদের অবস্থান হবে।
4. বোর্ডে প্রতিনিধি নয়: এলআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কোনো প্রকার প্রতিনিধি বা নমিনি পাঠাতে পারবে না।
এছাড়া, যদি কখনও দেখা যায় যে এলআইসি এই শর্তগুলির কোনোটি মানছে না, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ‘পাবলিক শেয়ারহোল্ডার’ হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল হয়ে যাবে।
কৌশলগত বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পরেও এলআইসি-র হাতে আইডিবিআই ব্যাংকের কিছু শেয়ার থেকে যাবে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI)-এর নির্দেশ অনুযায়ী, এলআইসি-কে বাধ্যতামূলকভাবে দুই বছরের মধ্যে তাদের অংশীদারিত্ব ১৫ শতাংশ বা তার কমে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ, দীর্ঘমেয়াদে এলআইসি এই ব্যাংকে কোনো প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী হয়ে থাকতে পারবে না।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার ও এলআইসি মিলে আইডিবিআই ব্যাংকের প্রায় ৯৫ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০.৭২ শতাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বড় অংশীদারিত্ব হস্তান্তর করা হবে।
সূত্র অনুযায়ী, যোগ্য বিডাররা ইতিমধ্যেই দ্যু ডিলিজেন্স বা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে তারা ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য, সম্পদ ও দায় বিশ্লেষণ করবে এবং চূড়ান্ত বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেবে।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আইডিবিআই ব্যাংকে সরকার ও এলআইসি-র প্রভাব সীমিত হয়ে আসবে এবং ধাপে ধাপে ব্যাংকটি একটি বেসরকারি শেয়ারহোল্ডার-চালিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে। এর ফলে—
বাজারে আস্থা বাড়বে: পাবলিক শেয়ারহোল্ডার হিসেবে এলআইসি-র অবস্থান আইডিবিআই ব্যাংকের শেয়ারকে আরও বিনিয়োগবান্ধব করে তুলতে পারে।
পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব: বড় সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে।
বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি: কৌশলগত বিনিয়োগকারীরা আসলে ব্যাংকের পরিচালনায় নতুন দিশা আনতে পারে।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে আইডিবিআই ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় এলআইসি-কে বড় অঙ্কের মূলধন ঢালতে হয়েছিল। তখনই এলআইসি ব্যাংকের প্রধান অংশীদার হয়ে ওঠে। তবে ব্যাংককে পুনরুজ্জীবিত করার সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এবার কৌশলগত বিক্রয়ের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সেবি-র অনুমোদন আইডিবিআই ব্যাংকের মালিকানা কাঠামোয় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এতে শুধু ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কৌশলই বদলাবে না, ভারতের ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজার খাতেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। এলআইসি-র ভূমিকা ধীরে ধীরে কমার অর্থ হলো—আইডিবিআই ব্যাংক নতুন যুগের পথে হাঁটতে প্রস্তুত হচ্ছে, যেখানে সরকারি প্রভাব নয় বরং বাজারনির্ভর অংশীদারিত্ব হবে প্রধান চালিকা শক্তি।