শুরু হতে চলেছে দেশের প্রথম গণপরিবহন রোপওয়ে পরিষেবা

ভারতের গণপরিবহন ব্যবস্থায় আসছে এক নতুন যুগের সূচনা। বাস, ট্রেন, ট্রাম বা মেট্রোর বাইরে এবার যাত্রীদের জন্য শুরু হচ্ছে রোপওয়ে পরিষেবা (Public Ropeway Transport)। উত্তরপ্রদেশের…

শুরু হতে চলেছে দেশের প্রথম গণপরিবহন রোপওয়ে পরিষেবা

ভারতের গণপরিবহন ব্যবস্থায় আসছে এক নতুন যুগের সূচনা। বাস, ট্রেন, ট্রাম বা মেট্রোর বাইরে এবার যাত্রীদের জন্য শুরু হচ্ছে রোপওয়ে পরিষেবা (Public Ropeway Transport)। উত্তরপ্রদেশের প্রাচীন শহর বারাণসী হতে চলেছে ভারতের প্রথম নগর গণপরিবহন রোপওয়ে সিস্টেমের কেন্দ্র। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই প্রকল্পটি একদিকে যেমন শহরের যানজট কমাতে সাহায্য করবে, তেমনই পর্যটক ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য আরও দ্রুত, আরামদায়ক এবং পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় প্রায় ₹৮০৭ কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণ নির্মাণ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সংযোজনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। এই রোপওয়ের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৩.৭৫ কিলোমিটার, যা বেনারস ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে সরাসরি গোদোলিয়া চক পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করবে। এতদিন এই পথে গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহনে যাতায়াত করতে প্রায় ৪৫-৫০ মিনিট সময় লাগত, কিন্তু রোপওয়ে চালু হলে সেই সময় কমে মাত্র ১৫ মিনিটে নেমে আসবে।

   

এই বছরের মার্চ মাসে প্রকল্পের প্রথম ট্রায়াল রান শুরু হয়। ক্যান্টনমেন্ট থেকে রথযাত্রা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশে একটি মাত্র গন্ডোলার সাহায্যে সিস্টেমের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। পরে ধাপে ধাপে আরও গন্ডোলা যোগ করা হয়। ন্যাশনাল হাইওয়ে লজিস্টিকস ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড (NHLML)-এর প্রকল্প পরিচালক পূজা মিশ্র জানিয়েছেন, টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ট্রায়াল চলেছে এবং এর ফলে কার্যক্রম আরও উন্নত করা সম্ভব হয়েছে।

এই রোপওয়ের জন্য ইতিমধ্যেই তিনটি বড় স্টেশন তৈরি হয়েছে — ক্যান্ট, বিদ্যাপীঠ এবং রথযাত্রা। প্রতিটি স্টেশনেই রয়েছে আধুনিক সুবিধা যেমন:

স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি ও লিফট

হুইলচেয়ার ব্যবস্থা

বিশ্রামাগার

Advertisements

পার্কিং সুবিধা

খাবার, পানীয় ও কেনাকাটার জায়গা

৪৫-৫০ মিটার উচ্চতায় চলবে প্রায় ১৫০টি ট্রলি কার (গন্ডোলা), প্রতিটি গন্ডোলা ১০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম। প্রতি ১.৫ থেকে ২ মিনিট অন্তর অন্তর গন্ডোলা পৌঁছবে স্টেশনে, ফলে যাত্রীদের অপেক্ষার সময় হবে খুবই কম। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা চালানোর জন্য পরিকল্পিত এই রোপওয়ে শহরের যাত্রীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি হয়ে উঠবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে এই রোপওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ কার্যকরী হলে এটি শুধু যানজট কমাবে না, বরং পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ পদ্ধতি হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে শহুরে রোপওয়ে পরিবহন জনপ্রিয় হলেও ভারতে এটি প্রথমবার চালু হতে চলেছে, যা ভারতের গণপরিবহনের আধুনিকায়নের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

বারাণসী দেশের অন্যতম ব্যস্ততম সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র। প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে আসেন। রোপওয়ে পরিষেবা চালু হলে শুধু শহরের দৈনন্দিন যাত্রীরা নয়, পর্যটকরাও দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত যাতায়াতের সুবিধা পাবেন। এটি স্থানীয় অর্থনীতি এবং পর্যটন খাতকেও আরও চাঙ্গা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বারাণসীর এই রোপওয়ে প্রকল্প ভারতীয় নগর পরিবহন ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আধুনিক প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা এবং যাত্রীস্বাচ্ছন্দ্য মিলিয়ে এটি দেশের অন্যান্য শহরের জন্যও এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।