মিলন পণ্ডা, নন্দীগ্রাম: রাজ্যের রাজনীতির অন্যতম আলোচিত এলাকা নন্দীগ্রাম (Nandigram) ফের বিজেপির দখলে। বিরুলিয়া কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস খাতা খুলতেও ব্যর্থ হয়েছে। সমস্ত ১২টি আসনেই জয়লাভ করেছেন বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। ভোটের ফল ঘোষণার পর উল্লাসে মেতে ওঠেন বিজেপি কর্মীরা। তবে এই জয়ের কৃতিত্ব শুধুমাত্র প্রতিপক্ষ তৃণমূলকে হারানো নয়, বরং নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের সিদ্ধান্তকে পরাস্ত করারও দাবি তুলেছে বিজেপি নেতৃত্ব।
রবিবার অনুষ্ঠিত হয় নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের বিরুলিয়া কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৯৬৯। তার মধ্যে ৮১৮ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সকাল থেকেই বড়াচিড়া হাই স্কুলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় প্রতিটি আসনে। তবে ভোটগণনার শেষে ১২টি আসনেই বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
ভোটগ্রহণ চলাকালীন থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল চরমে। বিজেপি অভিযোগ তোলে যে, প্রশাসনের মদতে ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছিল। তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ নির্বাচনের কেন্দ্র বদল করেছে বলে অভিযোগ বিজেপির। তবে এই কৌশল সফল হয়নি বলেই দাবি পদ্মশিবিরের।
নির্বাচন ফল ঘোষণার পর দুই শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র বচসা থেকে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ। পরে বিজয় মিছিলে গেরুয়া আবির উড়িয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন বিজেপি সমর্থকেরা।
নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পাল বলেন, “বিরুলিয়া সমবায় সমিতির ফলাফল প্রমাণ করেছে মানুষ বিজেপির সঙ্গেই আছে। ভোটের লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে ছিল না, ছিল নন্দীগ্রাম থানার আইসির সঙ্গে। প্রশাসনের সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভোট যদি থানার মধ্যেও হত, তবুও বিজেপির প্রার্থীরাই জিতত।”
অন্যদিকে, নন্দীগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সুনীল বরণ জানা দাবি করেন, “আমাদের সংগঠন দিন দিন মজবুত হচ্ছে। খুব অল্প ব্যবধানে হেরেছি আমরা। আগামী নির্বাচনে মানুষ তার জবাব দেবে। বিজেপি হল সাম্প্রদায়িক অসভ্য দল, জয়ের পর মহিলাদের প্রতি অশালীন মন্তব্য করা তাদের চরিত্রের প্রমাণ।”
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নন্দীগ্রামের এই নির্বাচন ফল তৃণমূলের কাছে বড় ধাক্কা। শুভেন্দু অধিকারীর গড় হিসেবে পরিচিত এই কেন্দ্রে বিজেপি ফের প্রভাব বিস্তার করল। তৃণমূলের দাবি, সামান্য ব্যবধানের এই হারের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাদের ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। অন্যদিকে, বিজেপি মনে করছে এই জয় আসন্ন পঞ্চায়েত ও বিধানসভা ভোটে তাদের আরও শক্তিশালী করবে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই সমবায় সমিতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট-পরবর্তী সংঘর্ষের খবর নতুন নয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগকে হাতিয়ার করে বিজেপি যে প্রভাব বিস্তার করল, তা ভবিষ্যতের নির্বাচনে বড় ইঙ্গিত দিতে পারে। নন্দীগ্রামের মাটি ফের গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে তুলেছে বিজেপি—এমনটাই বলছেন পদ্ম শিবিরের নেতারা।