৮ম বেতন কমিশনের সুবিধা পাবেন কি সরকারি ব্যাংক কর্মীরা? জেনে নিন বিস্তারিত

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের অনুমোদন দেন। ঘোষণার সময় জানানো হয়েছিল যে এটি কার্যকর হবে ২০২৬ সালের…

8th Pay Commission: Will It Deliver Real Relief or Just Raise Hopes for Government Employees?

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের অনুমোদন দেন। ঘোষণার সময় জানানো হয়েছিল যে এটি কার্যকর হবে ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্যদের নাম ঘোষণা হয়নি। ফলে দেরি ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি প্রক্রিয়া আরও পিছিয়ে যায় তবে ৮ম বেতন কমিশনের বাস্তবায়ন ২০২৮ সাল পর্যন্ত ঠেলতে হতে পারে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সব কর্মচারীর ক্ষেত্রেই বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়। একবার ৮ম বেতন কমিশন চালু হলে কেন্দ্রীয় সরকারের সব দপ্তরের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনও বাড়বে। কিন্তু সরকারি ব্যাংকের কর্মীরা এর আওতায় আসবেন না। কারণ ব্যাংক কর্মীদের বেতন নির্ধারণ হয় ইন্ডিয়ান ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশন (IBA)-এর সঙ্গে হওয়া চুক্তির ভিত্তিতে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুবিধা তারা পান না। ফলে ব্যাংক কর্মীদের আশা ভঙ্গ হয়েছে যে তারা ৮ম বেতন কমিশনের মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধির সুফল পাবেন।

   

লাখ লাখ কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং পেনশনভোগী বর্তমানে এই কমিশনের বাস্তবায়নের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। কমিশন গঠনের অনুমোদনের পর থেকেই কর্মচারীদের আশা বেড়েছিল যে শীঘ্রই তাদের বেতন বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এখনও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। বিশেষ করে চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি বলে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ঝুলে গেছে।

গত ১২ই আগস্ট রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানান, এখনও পর্যন্ত ৮ম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত নোটিফিকেশন জারি হয়নি। কারণ কমিশনের Terms of References (ToR) নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও রাজ্য সরকার থেকে মতামত আহ্বান করা হয়েছে। সেই মতামতগুলো এখনও জমা পড়ছে।

তিনি আরও জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কর্মী ও প্রশিক্ষণ দপ্তর (DoPT) এবং সব রাজ্যের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। এর ভিত্তিতেই কমিশনের পরিধি ও কাজের ক্ষেত্র নির্ধারিত হবে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী চৌধুরীর বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ও ১৭ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তাতে কমিশনের কাঠামো, কাজের ক্ষেত্র এবং বেতন নির্ধারণের নিয়ম নিয়ে তাদের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সব দপ্তর ও রাজ্যের মতামত না পাওয়া পর্যন্ত নোটিফিকেশন জারি করা হবে না। ফলে কমিশনের কাজ শুরু হওয়ার আগে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

Advertisements

কেন্দ্র জানিয়েছে, কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ কেবলমাত্র নোটিফিকেশন প্রকাশিত হওয়ার পরেই করা হবে। তাই এই মুহূর্তে কারা কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে “উপযুক্ত সময়ে নোটিফিকেশন জারি করা হবে”।

এই দেরির ফলে কর্মচারী মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সাধারণত প্রতি ১০ বছরে একবার বেতন কমিশন গঠিত হয়। ৭ম বেতন কমিশন কার্যকর হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। তার ভিত্তিতে এবার ২০২৬ থেকে ৮ম কমিশন কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে এটি ২০২৮ পর্যন্ত স্থগিত হলে কর্মীদের আর্থিক পরিকল্পনা বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের সামনে একদিকে রাজস্ব ঘাটতি মেটানোর চাপ, অন্যদিকে কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত ব্যয় বহন করার দায়—এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ নয়। যদি দেরি হয়, তবে এটি কর্মীদের জন্য হতাশাজনক হলেও সরকারের পক্ষে সাময়িক স্বস্তি এনে দিতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে কর্মীদের মনোবল এবং ক্রয়ক্ষমতার ওপর এর প্রভাব পড়বে।

সবমিলিয়ে ৮ম বেতন কমিশন নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমশ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় কর্মচারীরা যেমন প্রত্যাশার প্রহর গুনছেন, তেমনই সরকার বলছে সব মতামত সংগ্রহ করে “উপযুক্ত সময়ে সিদ্ধান্ত” নেওয়া হবে। তবে যে গতি এখন দেখা যাচ্ছে, তাতে ২০২৬ থেকে কমিশনের সুবিধা পাওয়া কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কর্মচারীদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, হয়তো তাদের অপেক্ষা আরও দুই বছর বাড়তে পারে।