গ্রিন হাইড্রোজেন এবং গ্রিন অ্যামোনিয়াকে (Solar Wind Energy) পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল, যা সৌর এবং বায়ু শক্তির মতো প্রচলিত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সঙ্গে দামের দিক থেকে সমতা অর্জন করবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ এবং শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রত্যাশা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
গ্রিন হাইড্রোজেন এবং গ্রিন অ্যামোনিয়ার উৎপাদন খরচ এখনও সৌর এবং বায়ু শক্তির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা এই প্রযুক্তিগুলোর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে সীমিত করছে।গ্রিন হাইড্রোজেন হলো এমন হাইড্রোজেন যা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, যেমন সৌর বা বায়ু শক্তি ব্যবহার করে ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়।
এই প্রক্রিয়ায় জলকে বিদ্যুৎ প্রয়োগ করে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে বিভক্ত করা হয়। গ্রিন অ্যামোনিয়া, অন্যদিকে, গ্রিন হাইড্রোজেন ব্যবহার করে উৎপাদিত হয় এবং এটি সার, শিল্প রাসায়নিক এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই দুটি প্রযুক্তিই কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে শিল্প, পরিবহন এবং শক্তি খাতে।
তবে, উৎপাদন প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং উচ্চ খরচ এই প্রযুক্তিগুলোর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার পথে প্রধান বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রিন হাইড্রোজেনের বর্তমান উৎপাদন খরচ প্রতি কিলোগ্রাম ৪-৬ মার্কিন ডলার।
যেখানে গ্রে হাইড্রোজেন (যা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উৎপাদিত হয়) প্রতি কিলোগ্রামে ১-২ ডলারে পাওয়া যায়। সৌর এবং বায়ু শক্তির দাম গত দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যেখানে গ্রিন হাইড্রোজেন এবং গ্রিন অ্যামোনিয়ার দাম এখনও প্রতিযোগিতামূলক স্তরে পৌঁছায়নি।
এর প্রধান কারণ হলো ইলেকট্রোলাইজারের উচ্চ মূলধন খরচ, ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় বিদ্যুতের ব্যবহার এবং স্কেল অফ ইকোনমির অভাব।ভারত, যেখানে জাতীয় গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন টন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানেও এই চ্যালেঞ্জগুলো প্রকট। ভারত সরকার এই খাতে ১৯,৭৪৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ইলেকট্রোলাইজার উৎপাদন এবং গ্রিন হাইড্রোজেন প্রকল্পের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে।
তবে, শিল্প বিশ্লেষকরা বলছেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও বড় আকারে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রয়োজন।গ্রিন অ্যামোনিয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য হাইড্রোজেন এবং নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয়, এবং গ্রিন হাইড্রোজেনের উচ্চ খরচের কারণে গ্রিন অ্যামোনিয়ার দামও প্রচলিত অ্যামোনিয়ার তুলনায় বেশি।
বৈশ্বিক বাজারে প্রচলিত অ্যামোনিয়ার দাম প্রতি টন ৩০০-৪০০ ডলার, যেখানে গ্রিন অ্যামোনিয়ার দাম প্রতি টন ৬০০-৮০০ ডলারের মধ্যে রয়েছে। এই দামের ব্যবধান ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে গ্রিন অ্যামোনিয়ার গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে।ভারতের মতো দেশে, যেখানে সৌর এবং বায়ু শক্তির সম্ভাবনা প্রচুর, গ্রিন হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়ার জন্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস সহজলভ্য।
তবে, ইলেকট্রোলাইজার উৎপাদনের স্কেল বাড়ানো, বিদ্যুৎ খরচ কমানো এবং সরবরাহ চেইন উন্নত করার জন্য আরও গবেষণা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার (আইইএ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাইড্রোজেনের দাম কমতে পারে যদি ইলেকট্রোলাইজারের দাম ৫০% কমে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দাম আরও সাশ্রয়ী হয়।
ভারতীয় কোম্পানি যেমন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, অদানি গ্রুপ এবং টাটা গ্রুপ গ্রিন হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়া প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ করছে। রিলায়েন্স ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে, যার একটি বড় অংশ গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হবে। তবে, এই প্রকল্পগুলোর সাফল্য নির্ভর করছে সরকারি নীতি, ভর্তুকি এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির উপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিন হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়ার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য বৈশ্বিক এবং স্থানীয় স্তরে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কার্বন মূল্য নির্ধারণ, হাইড্রোজেনের জন্য বাজার তৈরি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই প্রযুক্তির দাম কমাতে সাহায্য করতে পারে।
বঙ্গের শ্রমিকরা ছেড়ে যাচ্ছেন, ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে ভরসা নেই
ভারতের জন্য গ্রিন হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়া শুধু পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য নয়, শক্তি নিরাপত্তা এবং রপ্তানির সম্ভাবনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে, প্রাথমিক প্রত্যাশা পূরণ না হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা অপরিসীম বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।