বঙ্গের শ্রমিকরা ছেড়ে যাচ্ছেন, ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে ভরসা নেই

হাওড়া: গ্রামীণ এলাকায় কাজের অনিশ্চয়তা ও নিম্নমজুরির কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক (West Bengal Workers) রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছেন। হাওড়া, মালদা,…

bengali migrant workers release

হাওড়া: গ্রামীণ এলাকায় কাজের অনিশ্চয়তা ও নিম্নমজুরির কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক (West Bengal Workers) রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছেন। হাওড়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের শ্রমিকরা বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা ও তামিলনাড়ুতে কাজ করতে যাচ্ছেন। হাওড়া স্টেশন এবং শালিমার স্টেশনে গেলে প্রতিদিনের ট্রেনে গাদাগাদি করে ওঠার জন্য ভিড়ে ঠাসা শ্রমিকদের দৃশ্য চোখে পড়ে।

শ্রমিকদের হাতে ব্যাগ, মাথায় ছোট প্যাকেট রুটি-সব্জি এবং মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ দেখা যায়। বাড়ি-পরিবারকে ছেড়ে দীর্ঘদিনের জন্য অচেনা শহরে যাওয়া তাঁদের জন্য মানসিকভাবে বেদনাদায়ক। রাজ্যের ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে প্রতিশ্রুত মাসে ৫ হাজার টাকার ভাতা নিয়ে শ্রমিকদের বিশ্বাস নেই। তাঁরা বলেন, “পাঁচ হাজার টাকায় সংসার চলে না। গ্রামে দৈনিক ৪০০–৫০০ টাকা মজুরি হলেও অনেক সময় বকেয়া থেকে যায়। ভিনরাজ্যে অন্তত ১,০০০–১,২০০ টাকা দৈনিক আয় হয়। এতে সংসার কিছুটা হলেও চলতে পারে।”

   

মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বাসিন্দা শাহাদ হোসেন, যিনি কেরালায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাচ্ছিলেন, বলেন, “শোনা যাচ্ছে বাইরে বাঙালিদের উপর হামলা হচ্ছে, তবুও কাজের জন্য ঝুঁকি নিচ্ছি। এখানে কাজ নেই। কেরালায় অন্তত দিনে ১,০০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে যাওয়া কষ্টকর হলেও উপায় নেই।”

মালদার কাদিরপুরের দীপু মণ্ডল, যিনি হায়দরাবাদে কার্পেন্টার হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছিলেন, জানান, “মাসে ২০–২৫ হাজার টাকা উপার্জন করেও সংসার টানাটানি হয়। শ্রমশ্রী প্রকল্পের ৫ হাজার টাকা দিয়ে কীভাবে চলবে? অনেক গ্রামে প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যায় না।”

Advertisements

রাজনৈতিক মহলেও ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিজেপি শাসিত কিছু রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং মোটা টাকা দিয়ে মুক্তি পাচ্ছেন। এতে শ্রমিকদের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। তবুও কাজের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তাঁরা ভিনরাজ্যে যাচ্ছেন।

শ্রমিকরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, শুধু ক্ষণস্থায়ী ভাতা বা প্রকল্পে তাঁদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে না। তাঁদের দাবি, যদি রাজ্যে পর্যাপ্ত শিল্পায়ন হয়, তবে তাঁরা পরিবারের সঙ্গে থাকতেই কাজ করতে পারতেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শ্রমিকরা শুধু অর্থনীতির চালিকাশক্তিই নন, তাদের নিয়মিত রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিও সচল রাখে। তাই রাজ্যের মধ্যে তাঁদের ধরে রাখতে দীর্ঘমেয়াদি শিল্পনীতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা অপরিহার্য।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ডাক দিলেও বাস্তবে সাড়া মেলছে না। শ্রমিকদের মতে, কাজের নিশ্চয়তা ও উপযুক্ত মজুরি ছাড়া প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। শহরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আজকের শ্রমিক সঙ্কট শুধুমাত্র সামাজিক সমস্যা নয়, এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবেও পরিণত হয়েছে।