প্রযুক্তি জগতে বিপ্লব! ২০২৫ সালে ভারতের সেরা ১০ টেক স্টার্টআপ

ভারতের স্টার্টআপ (Indian Startups) ইকোসিস্টেম বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিসেবে স্বীকৃত এবং ২০২৫ সালে এটি আরও গতিশীল হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি-চালিত স্টার্টআপগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ফিনটেক, স্বাস্থ্য…

Top 10 Indian Startups in 2025 Revolutionizing the Tech Landscape

ভারতের স্টার্টআপ (Indian Startups) ইকোসিস্টেম বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিসেবে স্বীকৃত এবং ২০২৫ সালে এটি আরও গতিশীল হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি-চালিত স্টার্টআপগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ফিনটেক, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, এবং সফটওয়্যার-এজ-এ-সার্ভিস (SaaS) এর মতো ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করছে। বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, দিল্লি-এনসিআর এবং মুম্বাইয়ের মতো শহরগুলি ভারতের প্রযুক্তি বিপ্লবের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা ২০২৫ সালে ভারতের শীর্ষ ১০ স্টার্টআপ নিয়ে আলোচনা করব, যারা প্রযুক্তি জগতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছে।

১. গোল্ডি সোলার (Goldi Solar)
সেক্টর: পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি
গুজরাট-ভিত্তিক গোল্ডি সোলার ২০২৫ সালে ১৪.৭ গিগাওয়াট ক্ষমতা অর্জন করে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই স্টার্টআপ সৌরশক্তি সমাধানে উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভারতের ক্লিন এনার্জি লক্ষ্যে অবদান রাখছে। তাদের উচ্চ-কার্যক্ষমতার সৌর প্যানেল এবং টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া দেশের শক্তি খাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।

   

২. ইনক্রেড (InCred)
সেক্টর: ফিনটেক
ইনক্রেড, একটি ফিনটেক স্টার্টআপ, ২০২৫ সালে ₹২৫০ কোটি প্রি-আইপিও ফান্ডিং সংগ্রহ করে শিরোনামে এসেছে। এই স্টার্টআপ ঋণ এবং বিনিয়োগ পরিষেবার মাধ্যমে ভারতের আর্থিক খাতে সাশ্রয়ী এবং অ্যাক্সেসযোগ্য সমাধান প্রদান করছে। তাদের এআই-চালিত প্ল্যাটফর্ম ঋণ প্রক্রিয়াকরণকে দ্রুত এবং দক্ষ করে তুলেছে।

৩. সুবকো (Subko)
সেক্টর: ডিটুসি (D2C), কফি
মুম্বাই-ভিত্তিক সুবকো কফি শিল্পে একটি নতুন তরঙ্গ সৃষ্টি করছে। ২০২৫ সালে $১০ মিলিয়ন সিড ফান্ডিং সংগ্রহ করে এই স্টার্টআপ ভারতীয় কফি সংস্কৃতিকে বিশ্বমানের করে তুলছে। তাদের টেক-চালিত সাপ্লাই চেইন এবং টেকসই কফি উৎপাদন প্রক্রিয়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

৪. নাজারা টেকনোলজিস (Nazara Technologies)
সেক্টর: গেমিং
নাজারা টেকনোলজিস ভারতের গেমিং শিল্পে একটি শীর্ষস্থানীয় নাম। ২০২৫ সালে এই স্টার্টআপ মোবাইল গেমিং এবং ই-স্পোর্টস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভারতের গেমিং ল্যান্ডস্কেপকে পুনর্নির্মাণ করছে। তাদের উদ্ভাবনী গেম ডেভেলপমেন্ট এবং এআই-চালিত গেমিং অভিজ্ঞতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।

৫. পি সেফ (Pee Safe)
সেক্টর: ডিটুসি, স্বাস্থ্য ও হাইজিন
পি সেফ ভারতের স্বাস্থ্য ও হাইজিন খাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এই স্টার্টআপ মহিলাদের জন্য নিরাপদ এবং টেকসই হাইজিন পণ্য সরবরাহ করছে। ২০২৫ সালে তাদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং এআই-ভিত্তিক গ্রাহক পরিষেবা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

৬. অ্যাট্রিমেড বায়োটেক (Atrimed Biotech)
সেক্টর: স্বাস্থ্য ও বায়োটেক
ওড়িশার ভুবনেশ্বর-ভিত্তিক অ্যাট্রিমেড বায়োটেক উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওষুধ আবিষ্কারে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তাদের উদ্ভাবনী গবেষণা ২০২৫ সালে স্বাস্থ্য খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। এই স্টার্টআপ ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

৭. ওড়িশা ইভি সলিউশনস (OdishaEV Solutions)
সেক্টর: বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি)
ভুবনেশ্বর-ভিত্তিক এই স্টার্টআপ বৈদ্যুতিক যানবাহনের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে। ২০২৫ সালে তারা ওড়িশায় ১০০টিরও বেশি চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে। তাদের প্রযুক্তি ভারতের ইভি বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করছে।

Advertisements

৮. ওডিপে (OdiPay)
সেক্টর: ফিনটেক
ওডিপে ওড়িশার নিজস্ব ডিজিটাল পেমেন্ট সলিউশন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২৫ সালে তাদের ইউপিআই-ইন্টিগ্রেটেড অ্যাপ এবং আঞ্চলিক ভাষা সমর্থন তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। এই স্টার্টআপ ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে অবদান রাখছে।

৯. ইনফোমিন্ট সলিউশনস (Infomint Solutions)
সেক্টর: ডিজিটাল মার্কেটিং
ফরিদাবাদ-ভিত্তিক ইনফোমিন্ট সলিউশনস ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। ৫,০০০টিরও বেশি উচ্চ-মানের ভিডিও উৎপাদনের মাধ্যমে তারা ব্র্যান্ডের গল্প বলার নতুন উপায় উপস্থাপন করছে। তাদের মাসিক গ্রোথ প্যাক ব্যবসাগুলির জন্য সাশ্রয়ী সমাধান প্রদান করছে।

১০. প্রেসেন্স ৩৬০ (PRessence 360)
সেক্টর: পাবলিক রিলেশনস
১৯ বছর বয়সী সৌমদীপ মণ্ডলের নেতৃত্বে প্রেসেন্স ৩৬০ পাবলিক রিলেশনস শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। তাদের ফলাফল-ভিত্তিক পিআর মডেল স্টার্টআপ এবং ছোট ব্যবসাগুলির জন্য উচ্চ-মানের পিআর সাশ্রয়ী করছে। ২০২৫ সালে তাদের সাত-অঙ্কের আয় তাদের সাফল্যের প্রমাণ।

ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের গুরুত্ব
ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম ২০২৫ সালে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিভিন্ন রাজ্যের অবদানের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, এবং দিল্লি-এনসিআর ফান্ডিং এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। বেঙ্গালুরু একা ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে $২.৫৪ বিলিয়ন ফান্ডিং সংগ্রহ করেছে। তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ টি-হাবের মতো ইনকিউবেটরগুলির মাধ্যমে এআই এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

এই স্টার্টআপগুলি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনই নয়, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে। সরকারের স্টার্টআপ ইন্ডিয়া উদ্যোগ এবং বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড এই স্টার্টআপগুলির বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
যদিও ভারতের স্টার্টআপগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও তাদের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উচ্চ প্রতিযোগিতা, দক্ষ প্রতিভার অভাব, এবং নিয়ন্ত্রক জটিলতা উল্লেখযোগ্য বাধা। তবে, এআই, ব্লকচেইন, এবং ক্লিনটেকের মতো উদীয়মান প্রযুক্তি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। সরকারি নীতি, যেমন আত্মনির্ভর ভারত অভিযান, প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি খাতে স্টার্টআপগুলির জন্য সুযোগ বাড়াচ্ছে।

২০২৫ সালে ভারতের শীর্ষ ১০ স্টার্টআপ প্রযুক্তি জগতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এই স্টার্টআপগুলি এআই, ফিনটেক, স্বাস্থ্য, এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভারতকে বিশ্বের প্রযুক্তি মানচিত্রে শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সমর্থন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডিং, এবং উদ্যোক্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এই সাফল্যের পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি। ভারতের এই স্টার্টআপগুলি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার সমাধানেও অবদান রাখছে।